RANIGANJ TRAFFIC JAM

হচ্ছে না বাইপাস, যানজটে নাকাল রানিগঞ্জ

জেলা

RANIGANJ TRAFFIC JAM রানিগঞ্জের রাস্তায় এমনই জট প্রতিদিন।

মলয়কান্তি মণ্ডল, রানিগঞ্জ

তিন কিলোমিটার রাস্তা গাড়িতে পার হতে লাগে এক ঘণ্টার বেশি। ব্যস্ত সময়ে এমনই অবস্থা রানিগঞ্জ শহরে ঢোকার এবং বের হওয়ার প্রধান রাস্তা নেতাজি সুভাষ বসু রোডের। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রায়ই আঁতকে উঠতে হয় রোগীর আত্মীয় পরিজনকে। হাসপাতাল পৌঁছে চিকিৎসা শুরু করার সময়টুকু পাওয়া যাবে তো 

দিনে দিনে সেই রাস্তার যানজট শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার প্রায় শ্বাস রুদ্ধ করে তুললেও কোনও হেলদোল নেই রাজ্য সরকার বা শাসক দলের পৌর প্রশাসনের। শহরের প্রধান রাস্তা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর তথা ওড়িশার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাও। জাতীয় সড়ক থেকে দূরবর্তী জেলার দিকে যাওয়া বহু গাড়িকে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনেই রানিগঞ্জ শহরের ভিড় ঠেলে যেতে হয়।

রানিগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত করতে দ্রুত বাইপাস তৈরির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে স্টেট হাইওয়ে অথরিটিকে চিঠি দিয়েছেন রানিগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক রুনু দত্ত। তিনি ই-মেইল করে এই চিঠির অনুলিপি পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককেও পাঠিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম)’র এই নেতা সাংবাদিকদের জানান,  রানিগঞ্জের বাইপাস নির্মাণের কাজে অহেতুক বিলম্ব হওয়ায় যানযটের সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে।  সমস্যা সমাধানে বামফ্রন্ট সরকার রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর থেকে সাহেবগঞ্জ ছয় কিলোমিটার বাইপাস তৈরির দিশা দেখালেও তৃণমূল সরকার সে কাজ করছে না। প্রাক্তন বিধায়কের অভিযোগ, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর থেকে সাহেবগঞ্জ বাইপাস রাস্তাটির জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। ১৪ নং জাতীয় সড়ক (পূর্বতন ৬০ নং জাতীয় সড়ক) মোরগ্রাম, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনের রাস্তাটি রাজ্যের  উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের সংযোগ স্থাপন করেছে। এই রাস্তায় দূরপাল্লার যানবাহন  রানিগঞ্জ শহরে যানযটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সকাল থেকে সন্ধ্যা রানিগঞ্জ  শহরের প্রধান রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। সেই জট কাটিয়ে যাতায়াত করা বাসিন্দাদের কাছে প্রাণান্তকর হয়ে উঠেছে। বড়ো গাড়ি শহরে ঢোকার কারণে মানুষের নির্ভরতা অটো টোটোর প্রতি বাড়ছে। সে কারণে যানজট আরও বাড়ছে। অপর একটি বাইপাস, গীর্জাপাড়া থেকে রানিসায়ের মোড় অবধি, তারও বেহাল দশা। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তৈরি রাস্তাটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কিছুই করেনি তৃণমূল সরকার। সেই রাস্তা দিয়ে যানচলাচল মসৃণ হলে পণ্যবাহী গাড়ি ও দূরপাল্লার যানবাহনকে রানিগঞ্জ শহরের মধ্যে ঢুকতে হতো না। সেইসব গাড়িকে রানিগঞ্জ শহর অতিক্রম করতেই বেশ বেগ পেতে হয়। পণ্য পরিবহনে দেরি হওয়ায় ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন রানিগঞ্জের ব্যবসায়িক মহল। 

প্রস্তাবিত মঙ্গলপুর থেকে সাহেবগঞ্জ ছয় কিমি বাইপাস নির্মিত হলে যানযটের সমস্যা থেকে রেহাই পেতেন কয়লাঞ্চলের মানুষজন। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘের চার লেনের বাইপাস নির্মাণের জন্য প্রায় ৪১১ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। 

 রানিগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মী জানান, দিনে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে রানিগঞ্জ শহর দিয়ে যাতায়াত করে। সেগুলিকে পার করাতে  কালঘাম ছুটে যায়। অফিসের সময়ে গাড়ি প্রায় নড়েই না। সমস্যায় পড়েন স্কুল ছাত্র থেকে অফিসযাত্রীরা। প্রায় দু’শো বছরেরও প্রাচীন খনি শহর রানিগঞ্জের রাস্তাও সংকীর্ণ। এই শহরে যাতে সহজে মসৃণভাবে যাতায়াত করা যায় সে বিষয়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। মঙ্গলপুর-সাহেবগঞ্জ বাইপাস নির্মাণে বর্তমান সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে সেই কাজ এগোয়নি। রানিগঞ্জের যানজট ছোঁয়াচে রোগের মতো বাজারের কানায় কানায় পৌঁছে যাচ্ছে। যানজটের দুরাবস্থার থেকে মুক্তি চাইছেন কয়লাঞ্চলের মানুষ।

Comments :0

Login to leave a comment