Ranigunj

মামলা, পুনর্বাসনে কোনও ভূমিকাই নেই রাজ্য সরকারের

ফিচার পাতা

গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি


রানিগঞ্জ শহরকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যোশীমঠের ধসের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন রানিগঞ্জ শহর কোনোদিন তলিয়ে যাবে। তার জন্য নাকি তাঁর সরকারের কোনও দায় নেই। চিরকালই অসত্যের পুজারী মাননীয়ার এটাই স্বভাব। কিন্ত রাজ্যের তৃণমূল এবং কেন্দ্রের বিজেপি এই দুই সরকার কোনোমতেই রানিগঞ্জ কোলফিল্ডসের এই দুরবস্থার দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। এছাড়াও রানিগঞ্জ কোলফিল্ডেসর আজকে যে দুরবস্থার পিছনে রয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকারের লুটেরা রাজনীতি এবং কয়লা মাফিয়াদের পকেট ভরা রাজনীতি।
ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভা (সিআইটিইউ)-র প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে হারাধন রায় ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে রানিগঞ্জ এবং ঝরিয়া কয়লাঞ্চলের ধস এবং আগুন সহ বিপজ্জনক এলাকার মানুষের পুনর্বাসনের জন্য একটি জনস্বার্থে মামলা করেন (মামলা নং WP (c) 381 of 1997)। এই মামলার হলফনামার ৬ নং পৃষ্ঠায় তিনি বলেন যে সাধারণ সম্পাদক কেলিয়ারি মজদুর সভা অফ ইন্ডিয়া (সিআইটিইউ)-র পক্ষে তিনি এই মামলা দায়ের করছেন। (“The petitioner is the General Secretary of Colliery Mazdoor Sabha of India” ) এই মামলার মূল খসড়া রচনা করেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের গভর্নমেন্ট প্লিডার প্রয়াত সুবোধচন্দ্র উকিল। এই মামলার মূল পিটিশনটি দেখে নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং পরিমার্জন করেন তৎকালীন সাংসদ সোমনাথ চ্যাটার্জি।

সর্বোচ্চ আদালতে ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভার আইনজীবী হিসাবে নিযুক্ত হন প্রখ্যাত আইনজীবী তাপস রায়। তিনি বর্তমানে প্রয়াত।
এই মামলা শুরু হওয়ার অনেক পূর্ব থেকেই বিশেষ করে গত শতকের আশির দশক থেকেই অবৈজ্ঞানিক ভাবে ঝরিয়া এবং রানিগঞ্জ কোলফিল্ড এলাকায় কয়লা উত্তোলনের ফলে এলাকার ধস/আগুন ও নানারকম সমস্যায় জর্জরিত মানুষের পুনর্বাসনের দাবিতে ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভা দীর্ঘ লড়াই আন্দোলন চালাচ্ছিল। এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী বিনয় চৌধুরি, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতৃত্ব বিজয় পাল, রবীন সেন, হারাধন রায়, বামাপদ মুখার্জি, বিকাশ চৌধুরি, লক্ষণ বাগদী, কমনীয় দাশগুপ্ত, নিরুপম সেন, মদন ঘোষ সহ অবিভক্ত বর্ধমান জেলার বামপন্থী নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এঁদের নিরলস প্রচেষ্টার ফল হিসাবেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে এই মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা পরিচালনা করতে ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভা কয়েক লক্ষ টাকা ইউনিয়ন তহবিল থেকে এবং মজুরদের দান থেকে সংগ্রহ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার কিছু পূর্বে ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভার অনুরোধে তৎকালীন লোকসভার সাংসদ সোমনাথ চ্যাটার্জি ভারতের  প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়াকে ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ সালে একটি পত্র লেখেন। প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া ৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ তারিখ এই চিঠির জবাবে লেখেন, ‘‘I have looked into the background of this problem. Keeping in view its gravity I have asked the coal ministry to set up a committee which would examine various aspects of the problem and propose remedial action.’’ সোমনাথ চ্যাটার্জি এবং প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠি মামলার মূল নথিতে যুক্ত করা হয়।

এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হওয়ার পর ২০০৯ সালে এক অন্তর্বর্তী নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট রানিগঞ্জ কোলফিল্ডের কয়লা খনি এলাকার পুনর্বাসনের জন্য ২৬৬১.৭৩ কোটি এবং ঝরিয়া কোলফিল্ড এলাকার পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং কয়লা মন্ত্রককে ৭১১২.১১ কোটি টাকা খরচ করে পুনর্বাসনের কাজ করার নির্দেশ দেয়। 
তার পর দামোদর দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। এই মামলার সাথে যুক্তরা প্রায় সকলেই প্রয়াত। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি (ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ) এই পুনর্বাসন সংক্রান্ত নির্দেশ কার্যকর করতে প্রচণ্ড অনীহা দেখাতে শুরু করে। প্রয়োজন হয় নতুন করে আবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ঠিক মতো কার্যকর না করার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার- নতুন করে মামলা করার।

হারাধন রায় মামলাটি করলেও তাঁর অবর্তমানে মামলা চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সাময়িক আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে সর্বোচ্চ আদালত আইনজীবী তাপস রায়কে আদালত বান্ধব হিসাবে নিয়োগ করেন। এই মামলার নির্দেশগুলি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখভালের জন্য। কিন্তু এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই তিনি প্রয়াত হন।

ফলে, এত এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা দেখভাল করার ক্ষেত্রে এবং কোথায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে উপযুক্ত সওয়াল জবাবের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হতে থাকে। ফলে এই মামলাটির পুনরুজ্জীবিত করে রানিগঞ্জ এবং ঝরিয়া অঞ্চলের ধস কবলিত মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন করে আদালতে আবার যাওয়ার প্রয়োজন হয়। ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভার পক্ষ থেকে আবার নতুন করে মামলাটি লড়তে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বিবেক হোম চৌধুরিকে আবার মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দারবারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যখন ইউনিয়নের সভাতে সমস্ত বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা এবং আবার সুপ্রিম কোর্টে যাবার কথা শুরু হয় তখন ঘটনা চক্রে প্রয়াত রবীন সেনের সময়ের সহকর্মী প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল মিঃ চৌধুরির (বর্তমানে প্রয়াত) যোগাযোগ হয়। তিনি এই মামলা লড়ার জন্য ইউনিয়নকে সহায়তা করতে প্রস্তুত হন। তিনি ইউনিয়নকে দিল্লিস্থ ‘টোটেন হ্যম ল অ্যাসোশিয়েটের’ প্রখ্যাত আইনজীবী দীপক ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনি মামলার সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি হারাধন রায়ের করা মামলা নং WP (C) 381 of 1997 টি পুনরুজ্জীবিত করেন। বিবেক হোম চৌধুরি এই মামলার পিটিশনার হন। বিবেক চৌধুরিকে ভারতের কোলিয়ারি মজদুরসভার পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে অন্যতম মামলাকারী হিসাবে গ্রহণ করা হয়। যার নং WP(C) 112 of 2012। এখন এটাই পুনর্বাসন সংক্রান্ত মূল মামলা। এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে লড়ছেন আইনজীবী দীপক ভট্টাচার্য। এই মামলা এখনো চলছে।

অন্যদিকে,  ২০০৯ সালে  সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশে দানের পর আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরির সঙ্গে রানিগঞ্জ কোলফিল্ড এলাকার পুনর্বাসনের কাজ কী ভাবে করা হবে তা নিয়ে কোল ইন্ডিয়ার তৎকালীন চেয়ারম্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার পর আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান কমরেড বংশগোপাল চৌধুরির নেতৃত্বে এডিডিএ থেকে এক শ্বেতপত্র বাংলা ও হিন্দিতে প্রকাশ করা হয়। কীভাবে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর করে রানিগঞ্জ কোলফিল্ডসে পুনর্বাসনের কাজ করা হবে তার বিস্তারিত রূপরেখা জনগণের কাছে জানানো হয়।

শুধু তাই নয় আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পক্ষে যে পুনর্বাসনের রূপরেখা তৈরি করা হয় তার ভিত্তিতে ১২ আগস্ট, ২০০৯ সালে আগামী ১০ বছর মানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কীভাবে এই পুনর্বাসন চলবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ২৬৬১.৭৩ কোটি টাকা খরচ করবে সে সম্পর্কে তৎকালীন কোল ইন্ডিয়ার ডাইরেক্টর টেকনিক্যাল, চেয়ারম্যান কোল ইন্ডিয়াকে এক চিঠি দেন। 
( চিঠির নং ২২০২০/১/২০০৫-সিআরসি তারিখ নিউ দিল্লি ১২ আগস্ট ২০০৯) এই চিঠিতে  ২ নং পয়েন্টে পরিষ্কার করে লেখা ছিল ‘‘... the President is please to approve the Master Plan for Ranigang Coal Field dealing with fire, subsidence and rehabilitation and diversion of surface infrastructure at an estimated involvement Rs.2629.21 crore for Ranigang Coal Field(RCF) excluding Rs.32.52 Crore for rehabilitation demonstration scheme (sanctioned earlier under the Plan Head of 2803.02.00.32 of Environmental Measures & Subsidence Control) which is on going and totaling Rs.2661.73 Crores.’’ সেই মতো ২০১০ সালের ১৭ মে ‘‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন দি ইমপ্লিমেনটেশন অফ দি মাস্টার প্লান ডিলিং উইথ ফায়ার, সাবসিডেন্স অ্যান্ড রিহাবিলিটেশন ইন রানিগঞ্জ কোল ফিল্ডস এরিয়া’’ নামে রিপোর্টে বিস্তারিত পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে জেলার কোথায় কত জমি অধিগ্রহণ করে কীভাবে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে সেটা ঠিক করা হয়। আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অফিসে আলাদা করে একটি অফিস স্থাপন করে সমস্ত পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া কার্যকর করার জন্য এক সদর্থক ভূমিকা পালন করা হতে থাকে।

২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূলের সরকার আসার ফলে গোটা রানিগঞ্জ কোলফিল্ডস এলাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃণমূল সরকার এবং তৃণমূল নেতৃত্বাধীন আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি আশ্চর্য রকম নিষ্পৃহতা অবলম্বন করতে থাকে। বাম সময় কালে যেটুকু কাজ এগিয়েছিল তার ভিত্তিতে পাওয়া টাকার যথেচ্ছ অসদ্ব্যবহারের ফলে এই পুনর্বাসনের কাজ এখন বিশ বাঁও জলে। উলটে এই কোলফিল্ডসের চারিদিকে বে আইনি কয়লা খাদানের রমরমা যেখানে সেখানে ঘটে চলেছে ভূধস। মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক কর্মচারী, বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর। রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই।

জনস্বার্থে মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সিআইটিইউ’র নেতৃত্বে এখনো চলছে। ভারতের কোলিয়ারি মজদুরসভার সদস্যরা এই মামলা চালিয়ে কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ২৬৬১.৭৩ কোটি টাকা আদায় করে আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির মাধ্যমে পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এই মামলার ফলে এর পর করোনা মহামারীর কালে সুপ্রিম কোর্ট আবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট তাদের পক্ষে এক জন আদালত বান্ধব নিয়োগ করেছে। এই আদালত বান্ধকে চার সপ্তাহের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া এবং রানিগঞ্জ কোলফিল্ড এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করে দেখবেন যে এই দুই কোলফিল্ড এলাকায় পুনর্বাসনের কাজ কতটা এগিয়েছে এবং তার রিপোর্টও এই চার সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে গৌরব আগরওয়ালকে আদালত বান্ধব হিসাবে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত করে। সুপ্রিম কোর্টের এই আদশের ফলে ঐ আদালত বান্ধব ইতিমধ্যেই ঝরিয়া কোলফিল্ড এলাকায় তদন্তের কাজ চালাচ্ছেন, হয়তো যে কোনোদিন রানিগঞ্জ কোলফিল্ড এলাকায় এই কাজ শুরু হবে ।

রাজ্য সরকারের কিন্ত এই নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চালানোর দায় যেন একা সিআইটিইউ’র। আর লাভের গুড় খাবার জন্য ওঁত পেতে বসে আছে বর্তমান রাজ্য সরকার। এই সরকার এমন এক সরকার যারা গোরু চুরি সহ নানা কাজে অভিযুক্তকে বাঁচাতে রাজ্যের কোষাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা অকাতরে দেশের বড় উকিল নিয়োগ করে খরচা করতে কোনও কার্পণ্য করে না, অথচ সুপ্রিম কোর্টের এরকম গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ মামলা যেখানে একবার জয়লাভ হয়েছে, আরও বকেয়া ন্যায্য অর্থ পাওয়ার জন্য যেভাবে দরবার করা দরকার সেটা করতে চাইছে না। এখন চলছে বীরভূমের দেউচা এলাকায় জনজাতিদের উচ্ছেদ করে তিন হাজার পাঁচশ একরের বেশি জমিকে ধ্বংস করে এক অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক খোলামুখ কয়লা খনি করার পরিকল্পনা। এদিকে যে রানিগঞ্জ শহরকে বাঁচানো সম্ভব তাকে রক্ষা করার জন্য যে সুযোগ হাতের কাছে উপস্থিত তাকে অবহেলা করে লুটেরা মাফিয়াদের স্বার্থে গোটা ব্যবস্থাকে বানচাল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন মাননীয়া। যে ভাবে বালি মাফিয়াদের অত্যাচারে নির্মমভাবে কালাঝড়িয়া, রানিগঞ্জ, অণ্ডাল এলাকার দামোদরের বিভিন্ন ঘাট থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। সরকার হয়ত আইনিভাবে বালি উত্তোলনের লাইসেন্স দিচ্ছেন কিন্ত, এক দঙ্গল ‘বালি মাফিয়া’ এই লাইসেন্সের কৌশলী ব্যবহার করে দামোদরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তার ফলে  আগামী দশ বছরের মধ্যে জলের অভাবে পশ্চিম বর্ধমান সহ দামোদর উপত্যকার পাশে কল কারখানা, কয়লা খাদান  সব বন্ধ হওয়ার পথে চলে যেতে বাধ্য হবে। দামোদর তার গতিপথ পরিবর্তন করেও ফেলতে পারে। যার ফলে বর্ধমানের যে সভ্যতা হাজার হাজার বছর ধরে দামোদর উপত্যকা এলাকাতে গড়ে উঠেছে তা এক ভয়ানক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে বাধ্য হবে। এসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে টুঁ শব্দটি নেই। এ এক ধ্বংসের খেলা চলছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্বে।

প্রায় দুই শতাধিক বছর ঝরিয়া এবং রানিগঞ্জ কোলফিল্ড এলাকা তার নিজের বুক চিরে গোটা ভারতকে শক্তির জোগান দিয়ে চলেছে। এর ফলে এই দুই কোলফিল্ড এলাকার মাটির তলা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে, কোল ইন্ডিয়ার অবৈজ্ঞানিকভাবে কয়লা উত্তোলনের ফলে এই বিপদ আরও বেড়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে কোল মাফিয়ার বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলনের দাপট। এই অঞ্চলকে বাঁচাতে গেলে সমবেত লড়াই প্রয়োজন।

Comments :0

Login to leave a comment