Rape

পুণ্ড্রিবাড়ি, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার কিশোরী আশঙ্কাজনক

জেলা

কোচবিহারের পুণ্ড্রিবাড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নাবালিকা স্কুল ছাত্রীর অবস্থা রীতিমত আশঙ্কাজনক। একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ১৪বছরের এই স্কুল ছাত্রী। স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি এলাকায় আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। 
পাঁচজন যুবক মিলে ওই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ। ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি সামনে আসে গত ২০ জুলাই। নৃশংসতার ছাপ নাবালিকার শরীরজুড়ে। রবিবার রাতে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি খুবই আশঙ্কাজনক। এই পুণ্ড্রিবাড়ি থানা এলাকায় গত কয়েক বছরে একাধিক ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে। নারী নির্যাতনের একের পর ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ।
ওই নির্যাতিতা নাবালিকার পরিবার সূত্রে খবর, ১৪ বছরের নাবালিকা স্কুলে যায় গত মঙ্গলবার। তারপর থেকেই ওই নাবালিকাকে পরিবারের লোকজন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাঁরা স্কুলে যান খোঁজ নিতে। স্কুলে গেলে জানতে পারেন, মেয়ের শরীর খারাপ লাগায় সে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছিল। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ মেলেনি। গত বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে পুণ্ড্রিবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ১৮তারিখে নাবালিকা নিখোঁজ হলেও দু’দিন পরে কেন অভিযোগ করা হলো? পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছেই জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁরা এমন ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর খোঁজাখুজি শুরু হয়। জানা যায়, এলাকার এক যুবক বাপ্পা বর্মণ (২৩) ও তার বন্ধুরা মেয়েকে স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করেছে। এরপর বাপ্পার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিয়ে তারা কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানতে চায়। দু’দিন পরেও যদিও তাঁরা কোনও খোঁজ পায়নি। 
বাড়ির সদস্যরা পুলিশকে জানায়, স্কুলে খোঁজ করতেই বন্ধুদের থেকে খবর মেলে বাপ্পা নামে ওই যুবক ফুসলিয়ে নাবালিকাকে নিয়ে গেছে। চারপাশে বাপ্পার খোঁজ করতেই খবর মেলে ১৮জানুয়ারি নাবালিকাকে অপহরণ করে মাথাভাঙায় নিয়ে আসে ওই যুবক ও তার সঙ্গীরা। এরপর নাবালিকার ওপর ওই পাঁচজন মিলে পশুর মতো অত্যাচার করে। দলবদ্ধ ধর্ষণ বলেই অভিযোগ পরিবারের। যদিও পুলিশের তরফ থেকে এবিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতনের ফলে ওই নাবালিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে মাথাভাঙার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ওই অভিযুক্ত যুবকরাই নাবালিকার পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়ে গিয়ে তাকে নার্সিংহোমে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। যদিও নাবালিকার অবস্থার দ্রুত এবং গুরুতর অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে অন্যত্র রেফার করা হয়। এরপর ওই অভিযুক্ত যুবকরা তাকে কোচবিহার শহরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে আসে। 
ইতিমধ্যে সেই খবর পৌঁছায় ওই নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের কাছে। বাড়ির সদস্যরা সব জানতে পেরে সেখান থেকে নাবালিকাকে কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যা ল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে। দু’দিন পর পুণ্ড্রিবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এখন ওই নাবালিকাকে বেসরকারি মিশন হাসপাতালের এসএসইউতে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, নাবালিকার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।
নাবালিকার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শুধু মূল অভিযুক্ত বাপ্পাই নয়, তার সঙ্গীরাও টানা দু’দিন ধরে অত্যাচার করায় নাবালিকা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, প্রবল রক্তক্ষরণ হয়। 
পুণ্ড্রিবাড়ি থানার পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত যুবক বাপ্পা বর্মণ ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর। এদিনই ধৃতদের কোচবিহার জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন। এখনও পর্যন্ত একজন অভিযুক্ত অধরা। যদিও তদন্তে পুলিশের ভূমিকা, নিস্পৃহতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে একাধিক।
এই ঘটনা সামনে আসার পরে পরেই রবিবার নাবালিকার প্রতিবেশীরা রবিবার বিক্ষোভ দেখান এলাকায়। তাঁদের বক্তব্য, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এভাবে অপহরণের ঘটনা প্রমাণ করছে, পুলিশের প্রতি কোনও ভয় ডর নেই দুষ্কৃতীদের। বেপরোয়া হয়ে উঠছে দুষ্কৃতীরা। দোষীদের শুধু গ্রেপ্তার নয়, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক আদালত। উল্লেখ্য, পুণ্ড্রিবাড়ি থানা এলাকায় এর আগেও একই কায়দায় অপহরণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
এলাকার বাসিন্দা ভরত রায়, শিবানী রায় সহ অন্যান্য অভিভাবকদের বক্তব্য,‘‘আমাদের বাড়ির নাবালিকা মেয়েরাও স্কুলে যায়। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এরকম ঘটনা তো আমাদের সন্তানদের সাথেও ঘটতে পারে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরাও।’’
পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের কোচবিহার জেলা সম্পাদক কাজল রায় রবিবার নাবালিকা অপহরণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় রীতিমত ক্ষোভ, উদ্বেগ প্রকাশ করেই বলছিলেন— আমরা নাবালিকা ও তার পরিবারের পাশে থেকে ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করব। বারবার পুণ্ড্রিবাড়ি থানা এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে কেন? প্রশাসন নীরব কেন? সেটা জানতে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে নারী নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানাবো।
 

Comments :0

Login to leave a comment