কলেজ স্ট্রিটের ছাত্র সমাবেশের মঞ্চ দেখলে অনেকেই চমকে উঠবে। কোন বড় ব্যানার নেই। ছাত্র সংগঠন গুলোর পতাকা বসন্তের হাওয়ায় দুলছে না। শুধু একটাই পতাকা দেখা যাচ্ছে। যা ক্রমাগত দুলে চলেছে হাওয়ার তালে তালে। তা হচ্ছে দেশের জাতীয় পতাকা। তেরঙ্গাকে সাক্ষী রেখে ইনসাফ চেয়েছিল ব্রিগেড। এবার সেই তেরঙ্গাকে সাক্ষী রেখে দেশ এবং শিক্ষা বাঁচানোর ডাক দিল ছাত্ররা।
‘দেশ বাঁচাতে বিজেপি হাটাও, বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে তারাও’ কলেজ স্ট্রিটের ছাত্র সমাবেশ থেকে শোনা গেলো এই স্লোগান। এসএফআই সহ ১৫টি ছাত্র সংগঠনের ডাকে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই ছাত্র সমাবেশের মূল স্লোগান ছিল ‘স্বদেশ বাঁচাতে এক আওয়াজ, চাই সবার শিক্ষা সবার কাজ।’
এরাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতে, দিল্লিতে একাধিক বৃহত সমাবেশ করেছে এই ইউনাইটেড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। এদিন সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুটি মিছিল কলেজ স্ট্রিটে এসে জড়ো হয়। একটি হয় শিয়ালদহ থেকে অন্যটি হাওড়া থেকে। ছাত্র নেতৃত্বের কথায় পুলিশ এই মিছিল নিয়ে অসহযোগীতা করলেও তাদের কর্মীরা সাধারণ মানুষকে কোন জানজটের মধ্যে পড়তে দেয়নি।
বুধবারের সভা থেকে কেন্দ্রের মোদী সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে এসএফআই নেতৃত্ব।
এসএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে ১৫টা সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন আজ এক ছাতার তলায় এসেছে। স্কলার শিপের টাকা বন্ধ আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সরকার বিভিন্ন জায়গায় টাকা খরচ করছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। একই অবস্থা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয়। তৃণমূল রাজ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে দিচ্ছে না। আসলে তৃণমূল এবং বিজেপি দুজনের মানুষের ঐক্যবদ্ধতাকে ভয় পায়।’’
ময়ুখের মতো দুই সরকারকে কড়া ভাবে আক্রমণ করেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাজ্ঞন দে বলেন, ‘‘রাজভবনে বসে বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতিকে নাগপুরের কাছে বেচে দেওয়ার ছক কোষছে মোদী আর দিদি। আমরা বলছি লড়াই হবে রাজপথে। নয়া শিক্ষা নীতির মাধ্যমে একটা মূল্যবোধহীন সমাজ তৈরি করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী, আর ঘুর পথে তাকে সমর্থক জানাচ্ছে মমতা ব্যানার্জি। নামটা শুধু বদলে দিয়েছেন। মানুষের করের টাকায় স্কুল, কলেজ তৈরি না করে শিবু, শাহজাহান, উত্তমদের পোষা হচ্ছে। আর অন্যদিকে আদানি, আম্বানিদের আগলে রাখছে মোদী।’’ এসএফআই রাজ্য সম্পাদকের কথায় তৃণমূল সরকারের বাজেট প্রমান করছে রাজ্যে শিশু শ্রমিক বেড়েছে। ড্রপ আউট হয়েছে।
ইতিমধ্যে রাজ্যের রুট মার্চ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিভিন্ন স্কুলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেবাজ্ঞন বলেন, ‘‘ক্লাস বন্ধ রেখে পঠন পাঠন তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্কুলে রাখা হচ্ছে। আর লজ গুলোকে তৃণমূলের গুন্ডাদের থাকার জন্য খালি রাখা হচ্ছে। আমরা বলছি স্কুল বন্ধ রেখে কখনও এই কাজ চলতে পারে না।’’
দীপ্সিতা ধর বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যেই জাতীয় শিক্ষা নীতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে তা বাংলার ছাত্র সমাজ কোন দিন মানবে না। আজকের সমাবেশ সেই বার্তা দিচ্ছে।’’
এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রনয় কার্য্যী তার সংক্ষিপ্ত ভাষনে বলেন, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাস গুলোকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের লড়াই শিক্ষার দাবিতে কাজের দাবিতে। তৃণমূল বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে এই লড়াই।’’
সময় যতো এগিয়ে রোদের তেজ বেড়েছে কিন্তু সমাবেশের ভীড় পাতলা হয়নি। আর সেই ভীড় দেখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপির কয়েকজন কানে কানে বলেই ফেললো, এই রোদেও সব বসে আছে!
Comments :0