জোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি তথা শুল্কনীতির জেরে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমেরিকার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবনা দানা বাঁধছিল। এই সময়ে এমন কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান ও রিপোর্ট সামনে এসেছে যেগুলি মার্কিন অর্থনীতির মন্দার অভিমুখকেই ইঙ্গিত করে। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং নভেম্বরের ২০ তারিখের ভোটে তাঁর জয় এমন এক ধারণা তৈরি করে দিয়েছে যে এবার বুঝি নিশ্চিতভাবে আমেরিকার অর্থনীতির সুদিন আসছে ট্রাম্পের হাত ধরে। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার হাতে নেওয়া পর্যন্তও উচ্চাশা ছিল তুঙ্গে। অর্থনীতির এবং বাজারের যাবতীয় সূচক বার্তা দিচ্ছিল অর্থনীতি চনমনেই আছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের দখল নেবার পর থেকে তিনি যেভাবে দখলদারির এবং শুল্ক যুদ্ধের হুমকি দিতে শুরু করেন এবং সেগুলি কার্যকর করা শুরু করেন তাতে দুনিয়া জুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। দুই প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো ও কানাডার যাবতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও দু’-দু’বার তা কার্যকর করা পিছিয়ে দেন। চীনের বিরুদ্ধে ২০ শতাংশ চাপিয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন ভারত সহ অন্যান্য দেশকে। এমনকি ইউরোপের বন্ধু মিত্র দেশগুলিকেও রেয়াত করবেন না বলে জানিয়েছেন।
এমন ডামাডোলের মধ্যে অর্থনীতির অভ্যন্তরে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, আমেরিকা শুল্ক চাপালে প্রতিক্রিয়ায় অন্য দেশগুলি কী করে সেসব ভেবে লগ্নিকারিরা সিদ্ধান্ত নিতে দ্ধিধায় পড়েন। এরই ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে স্বয়ং ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতির মন্দার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। বলেন মার্কিন অর্থনীতি পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি। সুফল পেতে সময় লাগবে। এটাও বলেছেন তিনি চান বিশ্বের সব দেশ থেকে আমেরিকার সম্পদ ফেরত আনার।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরই আমেরিকার শেয়ার বাজারে ধস নামে। তাছাড়া ক্রেতা মানসিকতা দুর্বল। কর্মসংস্থানের হারও আহামরি কিছু নয়। চলতি ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ ’২৫) জিডিপি’র আগাম তথ্যও সুখকর নয়। বণিক মহল থেকে সর্বত্রই মিলছে অনিশ্চয়তার সুর। ইতিমধ্যে চীন পালটা হিসাবে মার্কিন কৃষিপণ্যে চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছে। কানাডা ও মেক্সিকোও নীরবে হজম করবে না। তারাও পালটা ব্যবস্থার কথা বলেছে। ফলে আমেরিকা যদি শুল্ক চাপায় অন্য দেশও পালটা কিছু করবে। এমনটা চলতে থাকলে আমেরিকায় পণ্যের দাম বাড়বে, মূল্যবৃদ্ধি হবে। বাজারে চাহিদা কমবে। আমেরিকা চাইলে চাহিদা মতো সব পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না। আমেরিকার মজুরি বেশি হওয়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে কাঁচামালের সুবিধা না থাকায় সেসব পণ্য উৎপাদন অলাভজনক। আমেরিকা চিরকালই তাদের চাহিদা অপেক্ষা অনেক কম উৎপাদন করে এবং অন্যদেশ থেকে আমদানি করে। তাদের রপ্তানি থেকে আমদানি বরাবরই বেশি। তাই তাদের প্রায় সবদেশের সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি। রাতারাতি এটা বদলে ফেলা যায় না। ট্রাম্প ভাবছেন আমদানি আটকে দিলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি বিদেশে মার্কিন রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু ট্রাম্প এটা ভাবছেন না শ্রমখাতে প্রতিযোগিতায় উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে আমেরিকা পেরে উঠবে না। তাই অনেকেই মনে করছেন অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প অ্যাডভেঞ্চারে নেমেছেন। প্রত্যাশার মোহ তৈরি করে অন্ধকারে হাতিয়ে বেড়ানোই ভবিতব্য হবে না তো?
Comments :0