STORY | JUMA SARKAR | SONG-SAR | MUKTADHARA | 2025 FEBRUARY 3

গল্প | ঝুমা সরকার | সং-সার | মুক্তধারা | ২০২৫ ফেব্রুয়ারি ৩

সাহিত্যের পাতা

STORY  JUMA SARKAR  SONG-SAR  MUKTADHARA  2025 FEBRUARY 3

গল্প | মুক্তধারা

সং-সার 
ঝুমা সরকার

কেমন অন্যমনস্কভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল টিপতেই হুঁশ ফিরল দেবেশের। আপন মনেই হেসে পকেট হাতড়ে চাবি বের করে দরজা খোলে। বন্ধ ঘরটা যেন ওকে গিলে খেতে আসছিল। ধপ করে সোফায় বসে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে দেবেশ। ওর জীবনে এমন একটা কিছু হোক ও কখনও চায়নি। এতদিন তবু একটা আশা ছিল, আজ যেন সব শেষ হয়ে গেল।

অনেকদিন হল স্বাগতা ওদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে বাপের বাড়িতে। স্বাগতা ওর মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা মারা যাবার পর মা-এর দেখাশোনা মেয়েই করবে ,এটা তো স্বাভাবিক ঘটনাই ছিল। 
দেবেশের মনেও এই নিয়ে কোনো দ্বিধা ছিল না। আপত্তি ছিল শুধুমাত্র ওর বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকায়। 
দেবেশ বলেছিল 'তুমি তোমার মাকে এখানে এসে থাকতে বলো। উনি যেমন তোমার মা, তেমন আমারও মা। আজ আমার মা বেঁচে থাকলে সে তো আমাদের সাথেই থাকত।' 
কিন্তু স্বাগতা তাতে রাজি হয়নি। বরং ওর  ইচ্ছে ছিল দেবেশ তার বাড়ি বিক্রি করে ওদের মতো মায়ের কাছে গিয়ে থাকুক।


এই বিতর্ক শেষ হওয়ার নয়, তাই শেষ হয়ওনি।
ওদেরও একটাই মেয়ে তুলি। সে মা-বাবার এই দোলাচলে প্রথম প্রথম বাবাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট পেতো, কিন্তু এক সময় সেই কষ্টটা আর তার রইল না।
একদিন প্রবল ঝগড়া করে স্বাগতা সেই যে চলে গেল, আর ফিরে এল না মা-এর কাছ থেকে। তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। ওদের মধ্যে আইনি ছাড়াছাড়ি হয়নি ঠিকই, কিন্তু দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই গেছে।

সেদিনকার সেই ছোট্ট তুলি দেখতে দেখতে অনেকটাই বড়ো হয়েছে। মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে হলে দেবেশ মাঝেমধ্যেই স্কুলে পৌঁছে যায়, তুলিকে বাড়িতেও পৌঁছে দেয় কোনো কোনোদিন,কিন্তু তুলির মা-এর মুখোমুখি হয়নি কোনোদিন।

গতকাল সন্ধেবেলা হঠাৎই তুলির ফোন 'বাবা, মা-এর শরীরটা ভীষণ খারাপ, তুমি কি আসতে পারবে?'
ফোনের ওপারে মেয়ের গলায় অনেকদিন পর এমন একটা কথা শুনে প্রথমটায় হকচকিয়ে গেছিল দেবেশ। খানিকক্ষণ পরে নিজেকে সামলে বলে 'এক্ষুনি আসছি'।

স্বাগতা তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অ্যাম্বুলেন্স করে নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে ডাক্তার কোনো আশার আলো দেখাতে পারেননি। ইউট্রাসে ক্যান্সার, লাস্ট স্টেজ। সাতদিন অসম্ভব যন্ত্রণার সাথে লড়াই করে স্বাগতা চলে যায়। মায়ের নিথর দেহটা দেখে তুলি প্রথমটায়, কান্নায় ভেঙে পড়ে  তারপরে হঠাৎই বাবার দিকে আঙুল তুলে বলে 'এই মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী বাবা। আমরা যদি একসাথে থাকতাম, তাহলে অনেক আগেই মা-এর চিকিৎসা হতে পারত। মা এভাবে অসময়ে আমাকে ছেড়ে চলে যেত না। তুমি তো একা থাকতেই চেয়েছিলে, এবার থেকে একাই থেকো। আমি আর কখনোই তোমার কাছে ফিরে যাব না'।

মেয়ের মুখ থেকে এমন কঠিন কথা শুনেও দেবেশ শান্ত হয়ে স্বাগতার শেষ কাজটুকু সম্পন্ন করে। তারপর নিঃশব্দে ফিরে আসে নিজের বাড়িতে। বাড়িতে ফিরে নিজেকে আর ও ধরে রাখতে পারেনি।
একা তো ও আগেও ছিল, কিন্তু এখন থেকে ও যে সত্যি সত্যিই একা হয়ে গেল!

Comments :0

Login to leave a comment