নতুনপাতা
গল্প
নটরাজ, ওরফে নটো
উপেক্ষিৎ শর্মা
স্কুলের ক্রিকেট কম্পিটিশনে নটরাজ, ওরফে নটো ক্লাশ সেভেন-বি সেকশন-এর নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। আজ এইট-সি-এর সঙ্গে ওদের সেমিফাইন্যাল ম্যাচ। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বাইরে বসে আছে নটো। ওর গোলগাল ভারী চেহারাটা নিয়ে বেশি দৌড়-ঝাঁপ করতে পারে না। তাই মাঠের ধারে বসে থাকে। বাইরে থেকে কমেন্ট করে। ইনস্ট্রাকশন দেয়। সবাই ওর কথা শোনে। এমনকি টিম সিলেকশনের ব্যাপারেও ওর কথাই শেষ কথা। ঠিক- ভুল না -জেনেই সবাই মেনে নেয়। ওর কথা শোনে। ওদের গেম টিচার বিদেশদাও ওর কথার গুরুত্ব দেয়। বলে, নটরাজের কথা শোন। ও খেলাটা ভালো বোঝে।
টিম মাঠে নামার ঠিক আগে পুপু এসে নটোর কানে কানে বলল,
__সৌম্যকে টিমে নিসনি। ও কিন্তু খুব খেপে আছে। বলেছে, দেখে নেবে।
__সৌম্য কোথায় রে? বেশ রাগত স্বরে ঝেঁজে উঠল নটো।
__ওই তো, আমাদের ক্লাসরুমে, সবাই ড্রেস করছে, ওখানে ঘুরঘুর করছে।
__কী দেখে নেবে ও, কি দেখে নেবে,শুনি?
__জানি না।
__যা খুশি করুক।
খুব বিচ্ছিরিভাবে ম্যাচটা হেরে গেল নটোর সেভেন বি। ওদের মেন দুজন বোলার বেলাল আর সৈকত ঠিক করে বলই করতে পারল না। খেলা শেষে নটো ওদের জিজ্ঞেস করল,
__কী হল তোদের? ওর’ম ঘাড়ে হাত দিয়ে মাঠের মধ্যে কী করছিলি তোরা?
__ঘাড়ে খুব চুলকানি হচ্ছিল।
__ঘামাচি নাকি?
__জানি না।
সেভেন-বি’র সবাই মনমরা হয়ে ক্লাশরুমে বসে আছে। রুমের এককোণে সৌম্য বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। টিম হেরে গেছে বলে ওর বোধহয় খুব কষ্ট হয়েছে। দেখে নটো পুপু এবং আরও কয়েকজন ওকে সান্ত্বনা দিতে গেল।
__ ‘কী আর হবে? খারাপ খেলেছি, হেরেছি। বেলাল আর সৈকত তো বলই করতে পারল না ঠিক করে। কী করে জিতব? কাঁদছিস কেন? এতে কান্নার কী আছে? খেলাতে হারা জেতা আছে। আমরা খেলতে পারিনি, হেরেছি। টেক ইট ইজি। হেরে যাওয়া মেনে নিতে জানতে হয়। এটা হল, স্পোর্স্টসম্যান স্পিরিট, বুঝলি!’ সৌম্য কাঁদো কাঁদো চোখে ওর ডান হাতটা তুলে ধরে বলল,
__ দ্যাখ না, আমার হাতটা চুলকোতে চুলকোতে লাল হয়ে গেছে। খুব জ্বালা করছে।
__কেন রে?
__বিচুটি পাতা।
__ বিচুটি পাতা কী করে লাগল?
__ আমায় টিমে নিসনি বলে আমার খুব রাগ হয়েছিল। তাই আমি ওরা মাঠে নামার আগে ওদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বিচুটি পাতা নিয়ে ওদের ঘাড়ে ঘষে দিয়েছিলাম।
__এ মা! তা বিচুটি পাতা পেলি কোত্থেকে?
__ স্কুলের পেছনের গেটে একটা গাছ আছে, গেটম্যান আমাকে বলেছিল একদিন। ওখান থেকে হাত ঢুকিয়ে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিলাম। আমার হাতেও পাতার ঘষা লেগে গেছে। বলে সৌম্য ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল। কেউ কেউ বলল, ‘ঠিক হয়েছে। ঠিক হয়েছে।‘
কেউ বলল, ‘হাতটা জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নে।‘
কেউ বলল, ‘না রে, জল দিস না, আরও জ্বালা করবে। বরং লেবুর রস দিলে কমে শুনেছি। বাড়ি গিয়ে লেবুর রস ঘষে দেখতে পারিস।‘
নটো রাগে গরগর করতে করতে বিজ্ঞের মতো বলল,
__ দেখলি তো, তোকে কেন টিমে নিইনি? তোর মধ্যে ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ বলে কিচ্ছু নেই। তোদের মতো ছেলেদের দলে
না -রাখাই ভালো। ট্রেটার। মিরজাফর কোথাকার!
শুনে সৌম্য আরও জোরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগল।
Comments :0