Shibpur

অস্ত্র-মিছিলে আপত্তি ছিল না, শিবপুরে শান্তিমিছিলে নিষেধাজ্ঞা

রাজ্য

শনিবার বেরিয়েছেন অনেকেই। দোকানও খুলেছে। যদিও পুলিশের দাবি— শিবপুরের ‘জারি আছে ১৪৪।’ 
কেন? কারণ, রবিবার সিপিআই(এম) শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছে। স্থানীয় সব ধর্মের, অংশের মানুষ চাইছেন একটি শান্তি মিছিল হোক। সিপিআই(এম)’র নেতা, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ী, অটো চালক, চাকুরিজীবীর মত অনেকে। একটি শান্তি মিছিলের জন্য আগ্রহ ছাত্র, যুবদের প্রবল। কিন্তু দাঙ্গার সময় যে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, যারা অস্ত্রহাতে সাম্প্রদায়িক শক্তির মিছিল আটকাতে পারেনি, তারাই শান্তি মিছিল আটকাতে তৎপর হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শিবপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কিংবা তাঁর ভাইপো, সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি কোনও সভা করতে পারেন কিছুদিনের মধ্যে। তার আগে বামফ্রন্টকে কোনও মিছিল, সভা করতে দেবে না রাজ্য প্রশাসন। তেমনই নির্দেশ গেছে নবান্ন থেকে। 
বৃহস্পতিবার ছিল রামনবমী। সেদিন রাজ্যের অনেকগুলি জায়গায় তলোয়ার, কাটারির মত মারাত্মক অস্ত্র হাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন শোভাযাত্রার আয়োজন করে। একই ধরনের উগ্র শোভাযাত্রা তৃণমূলের নেতারাও আয়োজন করেছিলেন কয়েকটি জায়গায়। মূলত কে কত বড় হিন্দু প্রমাণের জন্য রামনবমীর দিনটিকে বেছে নেওয়ার এই উদ্যোগ তৃণমূল শুরু করেছে ২০১৫ থেকে। রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের এই সশস্ত্র রামনবমী আয়োজন হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে আরও উৎসাহিত করেছে সংখ্যালঘুসহ ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপ্রিয় সব অংশের মানুষকে ভয় পাওয়াতে।
বৃহস্পতিবার সেই রামনবমীর একটি শোভাযাত্রা হয়েছিল শিবপুরে। যেখানে সব ধর্মের মানুষের দীর্ঘদিনের পাশাপাশি বসবাস। পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতেও পারেনি। ব্যাপক হাঙ্গামা করে ওই সাম্প্রদায়িক শক্তি। পুলিশের একাংশ মার খায়। আর এক অংশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সেদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রেডরোডে তাঁর ধরনা মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি’র গুন্ডারা...একজন গুন্ডা বলছেন টিভিতে যা অস্ত্র পাবো নিয়ে বের হবো, দেখি কী করতে পারে? যা অস্ত্র তুই পারিস নিয়ে যা। রামনবমীর মিছিল আটকাবো না। মিছিল আমরাও করব। তোমরাও করবে।’’ তার আগে মুখ্যমন্ত্রী জানান,‘‘এই প্ল্যানিংটা বিজেপি করেছে এক মাস আগে থেকে। তার খবর আমাদের কাছে আছে।’’
অর্থাৎ তিনি সবই জানতেন। কী ‘প্ল্যানিং’ হয়েছিল!
ইতিমধ্যে স্থানীয়দের উদ্যোগে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শিবপুর অঞ্চল।  শুক্রবার রাতের পর  থেকে  নতুন করে কোনও অশান্তির খবর নেই। গোটা শিবপুর জুড়ে টহল দিচ্ছে র্যা ফ ও পুলিশ বাহিনী। কোথাও জটলা দেখলেই পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। শনিবার সকাল থেকেই ক্যারি রোড থেকে হাওড়া ময়দানের  জিটি রোডের ধারে দুইদিন বন্ধ থাকার পরে দোকান খুলছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান খুলে পরিস্কার করতে দেখা গেছে বহু ব্যবসায়ীকে।  রাস্তায় বের হয়েছেন বহু মানুষ। বাস, অটো, টোটো চলাচল করছে অন্যদিনের মতো। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য দিনের থেকে কম। অশান্তি এড়াতে হাওড়ার সাতটি অঞ্চলের ইন্টারনেট পরিষেবা শুক্রবার রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হলেও শনিবার বেলায় দিকে ধীরে ধীরে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। শনিবার সকালে শিবপুর এলাকা পরির্দশন করেন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি। শিবপুর এলাকায়  বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। রাস্তার ধারে ধারে মোতায়েন করা হয়েছে র্যা ফ ও পুলিশকে। শিবপুরের ঘটনার দুইদিন পরে গোটা ঘটনার তদন্তে নামল সিআইডি। শনিবার সকালে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। 
সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ শনিবার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান বৃহস্পতিবার হাওড়ার শিবপুরে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় যা অনভিপ্রেত। ধর্মীয় মিছিলের নামে সাম্প্রতিক উসকানি ও প্ররোচনা এবং অস্ত্র হাতে মিছিল যা এবছর সংঘর্ষের চেহারা নেয়। এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষে দুই সম্প্রদায়ের গরিব মানুষ আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হন। চরম প্রশাসনিক গাফিলতি ও পুলিশি নিস্ক্রিয়তার কারণেই এই ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও পুলিশকে আগাম সতর্ক করার পরেও এই ঘটনা রাজনৈতিক অভিসন্ধির ইঙ্গিতই বহন করছে। প্রেস বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কেন শিবপুরের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল অঞ্চলে যেখানে ঘন সন্নিবিষ্ট ভাবে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে, সেখানে রামনবমীর নামে অস্ত্রহাতে মিছিল করতে দেওয়া হলো কেন? কে অনুমতি দিল? 
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য বিভাজনের রাজনীতি সুকৌশলে চালাচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রের উভয় শাসক দলই। যেখানে পুলিশ অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে দেয়, সেখানে শান্তি মিছিল করতে অনুমতি দেয় না ১৪৪ ধারার অজুহাতে। বিবৃতিতে রবিবার ৪টেয় শান্তি মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment