বাংলাকে লুটেরাদের রাজত্বে পরিণত করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনী হিংসা তারই প্রতিফলন। রবিবার এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী। দিল্লির সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে দেরি করায়।
ভোটের দিন প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘এরা ঠিক করেছে বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। তৃণমূল নতুন নতুন কায়দায় আক্রমণ করছে ঠিকই, তবে তাকে প্রতিহত করার জেদ মানুষের মধ্যে আছে।’’
শনিবার নির্বাচনের দিনই অন্তত ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যেই অবিরাম হিংসা দেখা গিয়েছে। ভোটের আগের রাতে ব্যালট কেড়ে নেওয়ার ঘটনা দেখা গিয়েছে। আবার বেলাগাম ছাপ্পার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ দেখা গিয়েছে রাজ্যের বহু জায়গাতেই। ক্ষোভে কোথাও ব্যালট বাক্স জলে ফেলা হয়েছে, কোথাও আবার আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার নন্দকুমারে আবারে স্ট্রং রুমের সামনে চলেছে বিক্ষোভ।
চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের ছাপ্পার রায় মানুষের রায় নয়। মানুষ চাননি তাঁদের নামে মিথ্যা জনমত ভোটের ফলাফলে দেখতে। ক্ষোভ জানিয়েছেন তাঁরা। ছাপ্পার নির্বাচন মানেননি।’’
রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ফের ভোট করার দাবিতে সরব। ভোটের দিন, শনিবার নিজেদের রায় দিতে অদম্য উৎসাহ চোখে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে খঞ্চি হাই স্কুলের বুথে রাত দু’টোর পর ভোট শেষ হয়েছে। লাইন থেকে নড়েননি স্থানীয়রা। একই ছবি দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন বুথে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘কমিশন বা রাজ্য সরকার এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছায় পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। তা’হলে বাহিনী পাঠাতে এত দেরি কেন করেছে কেন্দ্রের সরকার।’’ তাঁর ক্ষোভ, অর্ধেক কেন্দ্রীয় বাহিনী আর অর্ধেক অন্য রাজ্যের বাহিনী পাঠানো হয়েছে। পদে পদে আদালতের নির্দেশকে অমান্য করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্র।
কমিশনের হিসেব হলো, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৬১ হাজার ৬৩৬টি বুথ থাকলেও, তার চার ভাগের এক ভাগ, ১৫ হাজারের কিছু বেশি বুথে মাত্র মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আদালতের রায়েই ২০১৩’র মতো ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর কথা ছিল। রাজ্য সরকার এবং কমিশন বাধা দিতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে চাওয়ার পরও কেন্দ্র ৬৭৮ কোম্পানি বাহিনী পাঠিয়েছে শেষবেলায়। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা কম সংখ্যা দেখিয়েই বাহিনী মোতায়েন না করার যুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের দাবি ৫৯ হাজার জওয়ানকে সঠিকভাবে ব্যবহারই করা হয়নি।
বাস্তবে রাজ্যের মানুষ প্রায় কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা বুথে বা ভোটকেন্দ্রে পাননি। সবচেয়ে বিপন্ন হয়েছেন ভোটকর্মীরা। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা কমিশনেরই। কর্মীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও জানান। দেখা গিয়েছে একাধিক ঘটনায় বুথের মধ্যে তাঁরাই আক্রান্ত হয়েছেন।
চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ছিল মানুষের অধিকার। তাকে দখলদারির জায়গায় নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। মানুষের চোখে জল, ভোটকর্মীদের চোখে জল। এমনকি পুলিশও অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে। খুশি কেবল মুখ্যমন্ত্রী আর নির্বাচন কমিশনার।’’
Comments :0