Adhir Ranjan Chowdhury

মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই ধরা পড়বে শাহাজাহান দাবি অধীর চৌধুরীর

রাজ্য জেলা

সন্দেশখালির ত্রাস কবে গ্রেপ্তার হবে? যখন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে উদগ্রীব রাজ্যের মানুষ ঠিক তখনই রাজ্যের অস্থায়ী ডিজিপি রাজীব কুমারের বক্তব্যের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জোর জল্পনা তৈরি হয়। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারে কোন খবর নেই। যদিও মঙ্গলবার শাহজাহানের ছোট ভাই শেখ আলমগীর জানায়, নির্দিষ্ট ফোনে যোগাযোগ করেও পাই নি। আমরাও জানতে চাইছি দাদা কোথায়? আমরা বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত। আমাদের বাড়ির বাচ্চার স্কুলে যেতে পারছে না বাড়ির সামনে সবসময় পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়ির প্রয়োজনে কোথাও যেতে চাইলে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, কখন ফিরবেন এই সব প্রশ্ন করছে। দল কী আপনাদের পাশে আছে? উত্তরে আলমগীর জানায় রাজ্যের নেতাদের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে দল পাশে আছে। এদিনও গোটা এলাকা থমথমে।
শাহজাহান প্রসঙ্গে বিস্ফোরক দাবি করলেন লোকসভার দিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে শেখ শাহাজাহান ধরা পড়বেন কিনা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর চাইলেই শাহাজাহান অ্যারেস্ট হবে, তিনি না চাইলে শাহাজাহান অ্যারেস্ট হবে না। শাসক দলের প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি’’। তিনি দাবি করেন পুলিশ চাইলেই শেখ শাহজাহানকে ধরতে পারে। তিনি বলেন,‘‘মুখ্যমন্ত্রীর লোকজনকে ডিজি অ্যারেস্ট করতে পারবেন না। তাঁর ক্ষমতার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। কংগ্রেস নেতা এদিন আরো বলেন, শেখ শাহাজাহান এক চুটকিতে অ্যারেস্ট হয়ে যাবে, যদি ডিজি সাহেবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। দিদির নির্দেশে তিনি পরিচালিত হন। এখানকার ডিজি সাহেব এর আগে সফলতার সঙ্গে অনেক বড়-বড় তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। সারদা কান্ডের ব্যাপারে লেকে জানতে পারেননি।  তবে শাহজাহানের বিষয়ে মানুষ কতটা জানবে তা আমার জানা নেই। কারণ ডিজি’র যে ট্র্যাক রেকর্ড, তাতে তাঁর শাসকদলের তাবেদারি করার একটা বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের কাছে আছে। স্বাভাবিকভাবে পুরোটা নির্ভর করছে দিদি কি চাইছে তার উপরে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর চাইলেই শাহাজাহান অ্যারেস্ট হবে। তিনি না চাইলে শাহাজাহান অ্যারেস্ট হবে না। 
গত শুক্রবার সকালে রেশন দুর্নীতি কান্ডে তৃণমূল নেতা বনগাঁয় শঙ্কর আঢ্য ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখালি -১ ব্লক সভাপতি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় ইডির আধিকারীকরা। শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত রক্তাক্ত হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তিন আধিকারীক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও সাংবাদিকরা। বেপরোয়া হামলা চালিয়ে একাধিক গাড়ি, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। ছিনতাই করা হয় ইডির ব্যবহৃত ল্যাপটপ। অভিযোগ ওঠে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখালি -১ ব্লক সভাপতি শেখ শাহজাহান সহ সরবেড়িয়া আগারহাটি পঞ্চায়েত প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লা, শাহজাহানের ভাই তথা তৃণমূল নেতা শেখ সিরাজ উদ্দিন সহ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীবাহিনীর বিরুদ্ধে। 
কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্স থেকে দিল্লির ইডি দপ্তরে এই হামলার ঘটনা বিস্তারিত জানানো হয়। তারপর সোমবার গভীর রাতে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন ইডি’র ডিরেক্টর রাহুল নবীন। রাতেই আহত ইডি’র অফিসারদের দেখতে হাসপাতালে যান তিন। মঙ্গলবার সকালে ইডি’র আধিকারীকদের সঙ্গে বৈঠকে করেন তিনি। সূত্রের খবর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের এই বৈঠকে ছিলেন বিএসএফ, সিআরপিএফ ও এনআইএ’র আধিকারীকরা। সূত্রের খবর, আগামীদিনে সন্দেশখালির শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে কি ভাবে প্রবেশ করা সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। 


ঘটনার চারদিন অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে। এখনও অধরা অভিযুক্তরা। পুলিশ অভিযুক্তদের খুঁজে পাচ্ছেন না রাজ্য পুলিশের ডিজির মন্তব্যের পরেও। কিন্তু সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি শাহজাহান ভাই পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নন। তিনি এলাকাতেই আছেন। বিধায়কের কথার সুর মঙ্গলবারও শোনা গেল বেড়মজুর-২পঞ্চায়েত প্রধান হাজি সিদ্দিক মোল্লার গলায়। এদিও তিনি বলেন, শেখ শাহজাহান সংগঠনের কাজে সন্দেশখালি বিধানসভাতেই আছে। ঘটনার দিন আপনার বাড়িতে আত্মগোপন গোপন করেছিলেন শেখ শাহজাহান? অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে হাজি সিদ্দিক বলেন, কেন আসবে আমার বাড়িতে? রাস্তায় দেখা হয়েছিল। কথা হয়েছিল। পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন?  প্রশ্ন করতেই হাজি সিদ্দিক মেজাজ হারিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন কী করেছে শাহজাহান? সে কী অন্যায় করেছে? সে কোন অন্যায় করেনি। বেড়মজুর -২পঞ্চায়েত প্রধানের এহেন বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে এলাকার মানুষের প্রশ্ন কী করেনি শাহজাহান? বিপুল সম্পত্তির মালিক কী করে হলো শাহজাহান?
গ্রামবাসীদের অভিযোগ সত্য। ১৩টি নদী বেষ্টিত সন্দেশখালির ৯টি দ্বীপ এলাকার আনাচ কানাচ জানে শাহজাহানের অত্যাচারের কাহিনী। বললেন, সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। বললেন, চুরি, লুট, খুন,সন্ত্রাস ও দখলদারির মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে ওঠে শেখ শাজাহান। আদিবাসীদের জমি জোর জবরদস্তির মাধ্যমেদখল করে নেয়। নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ বনিতা কেউ অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। মুখ খুললে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। প্রকাশ্যে গাছে বেঁধে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে রাখে। হুকুম জারি করা হয় কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাবে না। মানুষের মধ্যে ভয়, ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
সন্দেশখালির বর্গাদার, পাট্টা হোল্ডারদের জমি জোর জবরদস্তি করে কেড়ে নেয়। জমি চলে যায় তৃণমূলের সন্ত্রাস বাহিনীর হাতে। মেছো ঘেরি, ইটভাটা, মাছের আড়ৎ, সরকারি সম্পত্তি এভাবেই তার দখলে চলে আসে।
ধামাখালি থেকে নদী পথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ, গোপন ব্যাবসা, সুন্দর বনের কাঠ মধু সবেতেই তার অংশ থাকে। পুলিশ প্রশাসন তার হুকুম পালনের জন্য ব্যাস্ত থাকে। বেআইনি অস্ত্র রাখার ভান্ডারে পরিণত হয়েছে সন্দেশখালি।
২০১১ সালের পর সন্দেশখালিতে ভোট হয় না। ভোটে কেউ প্রার্থী হতে পারে না। যারা প্রার্থী হয় তাদের সর্বস্ব হারাতে হয়। নির্মম অত্যাচার, মা বোনের উপর আক্রমণ, মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, জমি জমা পুকুরের মাছ সব লুট হয়ে যায়।

Comments :0

Login to leave a comment