State Education

কেন স্কুলে যাবে!

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়া, শিক্ষার মান অধঃপতিত হওয়া, সর্বোপরি শিক্ষান্তে ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকার পরিণাম হিসাবে বিদ্যালয় শিক্ষার ধাপে ধাপে স্কুলছুটের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। তার ফলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক ধাক্কায় প্রায় তিন লক্ষ কমে গেছে। রাজ্যে প্রতি বছর শিশু জন্মের সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে প্রতি বছর বর্ধিত সংখ্যায় জন্মানো ‍‌শিশুরা যদি স্কুলে যায় তাহলে তো প্রতি বছরই মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাবার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যাচ্ছে। অথচ বামফ্রন্ট সরকারের সময় তিন দশক ধরে টানা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এই গুরুতর এবং অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা সর্বক্ষণ মজে আছে চুরি-দুর্নীতি আর অসৎ পথে টাকা কামানোর কাজে। আর এই লুঠতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে বেপরোয়া হয়ে আছে ভোটে জেতা ও ক্ষমতা দখলে রাখার কাজে।
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা যে ধ্বংসের পথে সেটা শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য আর নিয়োগ দুর্নীতি থেকে স্পষ্ট। শাসক নেতাদের মোটা ঘুষ দিয়ে এরাজ্যে অযোগ্যরা শিক্ষক হয়। তাদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রী কি শিক্ষা পেতে পারে? রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শাসক দলের কুক্ষিগত। সেখানে শিক্ষার বদলে অশিক্ষা-কুশিক্ষার চাষই হয় বেশি। পাঠ্যসূচি নিয়ে চলে নিত্য ছেলে খেলা। যখন তখন বদলে যাচ্ছে নিয়ম। বিশেষজ্ঞ বর্জিতরা চালাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার গুণগত মান যেমন তলানিতে নেমে গেছে তেমনি এই শিক্ষার প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাসও নষ্ট হয়ে গেছে। একটা বিরাট অংশের মানুষের প্রশ্ন এই লেখাপড়া করে শংসাপত্র নিয়ে কোন কাজে লাগবে। তাছাড়া রাজ্যের অর্থনীতির যা হাল তাতে ভদ্রস্থ কোনও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। লেখাপড়া শিখে যদি ভালো কাজই না জোটে তাহলে স্কুল কলেজে গিয়ে দীর্ঘ সময় এবং অর্থ নষ্ট করে লাভ কি। তার চেয়ে অল্প বয়স থেকে কাজে লেগে গেলে তবু সংসারে কিছু অর্থ জোগান দেওয়া। এমন ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক ভাবনা বাংলার ঘরে ঘরে দানা বাঁধছে। শিক্ষায় এমন অনীহা, এমন অনাস্থা বাংলার ভবিষ্যৎকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এমন এক বাস্তবতার মধ্যে বাংলার শিক্ষাঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ভবিষ্যৎ নাগরিকরা। তৃণমূল জমানার গোড়া থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি-নৈরাজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে স্কুল ছুটের প্রবণতা বাড়ছে। কোভিড বিপর্যয় সেই প্রবণতাকে আরও তীব্র করেছে। মিড ডে মিল, সাইকেল, ইউনিফর্ম, বইখাতা, ব্যাগ-জুতো, ট্যাব-কম্পিউটার, কন্যাশ্রী ইত্যাদি নানান ব্যবস্থাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না স্কুল ছুট। যত স্কুল ছুট বাড়ছে তত বাংলা থেকে ভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ছে। যত স্কুল ছুট বাড়ছে তত নাবা‍‌লিকার বিবাহ বাড়ছে। রুজিরোজগারহীন পরিবারে আর্থিক অনটন বাধ্য করছে ছেলে মেয়েদের স্কুলে না পাঠাতে। পাঠালেও ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে। বদলে ছেলেমেয়েদের রোজগারে যুক্ত করছে। কখনো অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দায় মুক্ত হচ্ছে। এই নির্মমতাই তিলে তিলে দগ্ধ, ক্ষত বিক্ষত করে চলেছে বাংলার সমাজকে।

Comments :0

Login to leave a comment