বিক্ষোভ ও ধর্মঘটে শুক্রবার গ্রিসের বিভিন্ন শহর উত্তাল হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। খোদ রাজধানী অ্যাথেন্সে, এদিন গণবিক্ষোভ প্রায় অভ্যূত্থানের আকার ধারণ করে। শুক্রবার এদেশের সরকারের রেল বেসরকারিকরণ সহ বেশ কয়েকটি জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। সমর্থন জানায় গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টি। ধর্মঘটে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। সমর্থনে রাস্তায় নামেন খেটে খাওয়া মানুষ। এরই মধ্যে রাজধানী এথেন্সে পুলিশের ব্যারিকেড টপকে, গ্রিসের সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের মিছিল এসে পৌঁছায়। সরকারের নির্দেশে বিক্ষোভরত মানুষের উপর নৃশংস হামলা চালায় পুলিশ। টিয়ার শেল, রবার বুলেট নিক্ষেপ করে, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ এমনকি সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর করে পুলিশ ও আধা সেনা। এই হামলায় কয়েক শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। জনগণের পালটা প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ ও আধা সেনা।
বহুদিন ধরে গ্রিসের দক্ষিণপন্থী সরকারের ব্যয় সঙ্কোচন নীতিতে খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিনের সমস্যা মারাত্মক হারে বেড়েছে। নয়া উদারবাদী ব্যয় সঙ্কোচন নীতির চাপে ক্ষোভে ফুঁসছেন দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অংশের মানুষ। এরই মধ্যে বছর দুয়েক আগে সরকারের অপদার্থতার জেরে হওয়া এক রেল দুর্ঘটনাকে স্মরণে রেখে শুক্রবার দেশজুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠন। ২০২৩-র এই ঘটনায় ৫৭ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। এই সরকার বিরোধী প্রতিবাদে মানুষের মধ্যে বহু দিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বড় অংশ।
বছর দুয়েক আগের এই ঘটনার জন্য আন্দোলনকারীরা রেল বেসরকারিকরণকে দায়ী করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশের দক্ষিণপন্থী সরকার এমন নীতি গ্রহণ করেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বদলে দেশের রেল পরিবহণ সংস্থা মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় এমন বীভৎস ঘটনা ঘটেছে। রেল বেসরকারিকরণ সহ আরও বিভিন্ন নয়া উদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে এদিন দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের সমর্থনে শুক্রবার গোটা দেশে অন্তত ২০০টি মিছিলে পা মেলান হাজার হাজার মানুষ। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে মিছিল রাজধানী এথেন্সের সংসদ ভবন চত্বরের সামনে এসে পৌঁছায়। আপাতভাবে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হঠাৎ হামলা চালায় পুলিশ। তবে জনগণের পালটা প্রতিরোধে তারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
ধর্মঘট ও বিক্ষোভে শুক্রবার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টি। ধর্মঘটের সমর্থনে অ্যাথেন্সের কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ সমাবেশে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক দিমিত্রিস কৌটসুম্বাস বলেন,‘‘সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ইউনিয়ন সহ ছাত্র, মহিলা ও বুদ্ধিজীবিদের বিভিন্ন সংগঠন আজ এক হয়ে রাস্তায় নেমেছে। গোটা দেশের জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।’’
গত কয়েক দশকে গ্রিসের রাস্তায় এত বড় বিক্ষোভ চোখে পড়েনি। এতেই এদেশের তীব্র সরকার বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। ‘‘দু বছর আগে যে ঘটনা ঘটেছিল, সরকার তার সুরাহা করতে পারেনি। সেটা নিছক কোনও দুর্ঘটনা ছিল না। আমরা ওই ঘটনাকে খুন হিসেবে দেখি,’’ বলেছেন ক্রিস্টস মাইন। তার মতো আরও বহু মানুষের একই অভিযোগ।
প্রসঙ্গত তীব্র বিরোধিতা মুখেও, কোন বামপন্থী বিকল্প না থাকায় এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোটাকিসের দক্ষিণপন্থী নিউ ডেমোক্র্যাসি পার্টির সরকার। তবে একাধিক জনবিরোধী ব্যয় সঙ্কোচন নীতির জেরে তিনি রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তারই সঙ্গে বছর দুয়েক আগের এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের থেকে তিনি তীব্র আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, গ্রিসের অন্তত ৬৬ শতাংশ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে নানা কারণে ক্ষুব্ধ। তবে সঠিক বিকল্পের অভাবে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।
Greece
বিক্ষোভ ধর্মঘটে উত্তাল গ্রিস

×
Comments :0