ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ পালনের মঞ্চেও হলো প্রতিবাদ। গাওয়া হলো রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’। কলকাতার নন্দন-আকাদেমি অব ফাইন আর্টস সংলগ্ন রানু্ছায়া মঞ্চে।
মঙ্গলবার সারা রাজ্যে বহু সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বিজেপি-আরএসএস এই গান গাইলে রাষ্ট্রদ্রোহ বলছে। আসামের এক কংগ্রেস নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে সেরাজ্যের বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করতে বলছেন। যুক্তি, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এই গান! এদেশে গাওয়া চলবে না।
ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সভাপতি হিরন্ময় ঘোষাল জানিয়েছেন যে হল চাইলেও পাওয়া যায়নি। তাই খোলা মঞ্চেই হচ্ছে অনুষ্ঠান।
বাংলা, বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার রাজনীতির প্রতিবাদের অংশ হয়েছে এই দিনটি। রানুছায়া মঞ্চে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ বোঝাপড়া স্পষ্ট করেছে ফের। মনে করানো হয় যে রবীন্দ্রনাথের এই গান ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতার লড়াইয়ের পর্বে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী লড়াইয়ের সংহতিতে রচিত।
মঞ্চ থেকেই স্পষ্ট বলা হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বহু ভাই বোনের রক্ত ঝরেছে। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি দেশের মুক্তি যুদ্ধ নয়, আমাদেরও। ফলে উঠে দাঁড়িয়ে প্রকৃত সম্মান দিয়েই গাওয়া হবে এই গান।
উঠে দাঁড়ান দর্শক, শ্রোতারা। গাওয়া হয় ‘আমার সোনার বাংলা’। এমনই ছবি এদিন চোখে পড়েছে রাজ্যের বহু জায়গায়। বহু মানুষ যোগ দিয়েছেন প্রতিবাদে।
এরপরই চলচ্চিত্র সমালোচক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেছেন ঋত্বিক ঘটক, তাঁর সৃষ্টি এবং সংগ্রাম নিয়ে। তিনি বলেন, "এই আকাদেমি অব ফাইন আর্টসেই মৃত্যুর কিছু আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঋত্বিক। ১৯৭৬’র জানুয়ারিতে সেই নাটকে নিজে অভিনয় করেছিলেন। আর ফেব্রুয়ারিতে ইতিহাস হয়ে যান তিনি। জরুরি অবস্থা তখন। নবদ্বীপে একটি মেয়ের ধর্ষণ ও খুন হয়েছিল। প্রতিবাদে জনপরিসরে আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসে ‘সেই বিষ্ণুপ্রিয়া‘ নাটক করেন ঋত্বিক। সেই সময় তিনি যক্ষায় আক্রান্ত। নাটকের দিনও ঠোঁটে ছিল রক্তের দাগ। এই নাটকের অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই তিনি তার জীবনের শেষ প্রতিবাদ জানান।"
তিনি আরো বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ বেশ কিছু জায়গায় ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ পালন করা হচ্ছে। এবং সবচেয়ে বেশি পালন করা হচ্ছে কেরালায়।"
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সভাপতি হিরণ্ময় ঘোষাল বলেন, ‘‘আজ ৪ নভেম্বর ঋত্বিক ঘটকের শতবর্ষ উদযাপনের সুচনা করলাম এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।সারা বছর ধরেই গোটা রাজ্য জুড়ে এই উদযাপন চলতে থাকবে। যেমন সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ পালন করা হয়েছে সেভাবেই স্মরণ করা হবে ঋত্বিক ঘটককেও।’’
Comments :0