TMC MLA Tapas Saha

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বিধায়কের দাবি ‘আমার মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত’

রাজ্য

TMC MLA Tapas Saha

বাড়ি ঘিরে তল্লাশি চলেছে শুক্রবার দুপুর থেকে, বিধায়ক কার্যালয়েও দফায় দফায় তল্লাশি, ঘনিষ্ঠদের বাড়িতেও সিবিআই হানা। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে টানা ১৪ঘণ্টা সিবিআই জেরার পরে তেহট্টের তৃণমলী বিধায়ক তাপস সাহা সংবাদমাধ্যমে নির্বিকারভাবেই জানালেন, ‘আমার অন্য কাউকে প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রীর হাত আমার মাথার উপরে, মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ আমার কাছে রয়েছে, অন্য কারো আশীর্বাদের প্রয়োজন নেই’।


  আদালতের নির্দেশে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ। শুধু স্কুলের চাকরি নয়, দমকল থেকে রেশন ডিলার, সবেতেই কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সেই তৃণমূলী বিধায়ক সিবিআই জেরার মাঝেই রীতিমত বুক ফুলিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বলছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত আছে তাঁর মাথায়, তিনি সিবিআই জেরায় ভীত নন!
   মুখ্যমন্ত্রীর হাত একজন দুর্নীতিগ্রস্তের আত্মবিশ্বাসের রসদ- এই বাংলায় এখন এটাই দস্তুর। 


  শুধু তাই নয়, সিবিআই তাঁর দুটি অ্যানড্রয়েড ফোন বাজেয়াপ্ত করার পরে এদিন একটি সাধারণ কিপ্যাডের ফোন কিনেছেন বিধায়ক তাপস সাহা। তাঁরপর মিডিয়ার সামনেই জানান, ‘‘দলের মধ্যে শুধুমাত্র দিদির নম্বরই ‘সেভ’ রাখব।’’
  নিয়োগ দুর্নীতির কেলেঙ্কারির এই পর্বে এখন প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নাটকীয় পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। কিছুদিন আগেই অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ সুকৌশলে দলের এই শীর্ষ সাংসদের নামই নিয়ে আসেন আদালতে। অভিষেক ব্যানার্জির সুরেই কুন্তল ঘোষ জানান, ইডি’র আধিকারিকরা অভিষেক ব্যানার্জির নাম বলতে জেরায় চাপ দিচ্ছে। সেই অভিযোগ আদালতেও জানানো হয়। অভিযোগের চরিত্র বুঝেই বিচারপতি জানান, এক্ষেত্রে অভিষেক ব্যানার্জিকে কুন্তল ঘোষের মুখোমুখি জেরা করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। যদিও সুপ্রিম কোর্ট আগামী ২৪ তারিখ পর্যন্ত সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। 
  অভিষেক ব্যানার্জির নাম নিয়োগ কাণ্ডে কুন্তল ঘোষ, কালীঘাটের কাকু, ধৃত শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডলের মাধ্যমে বারেবারে আসছিল। এবার সিবিআই’র লাগাতার জেরা ও তল্লাশির মুখে পড়া তৃণমূলী বিধায়ক যেভাবে বারেবারে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আশীর্বাদ’, মুখ্যমন্ত্রীর হাত রয়েছে বলে দাবি করছেন তাতে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে দেদার টাকা তুলছেন দলীয় বিধায়ক, সরকারি চাকরি বেচে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকায় তা জানার পরেও কি মুখ্যমন্ত্রী চুপ থেকে নীরব সম্মতি দিয়েছেন? সেই নীরব সম্মতিকেই কি নিশ্চিন্তে দুর্নীতি চালিয়ে যাবার সবুজ সঙ্কেত ধরেই বেলাগাম দুর্নীতির কারবার চালিয়ে গেছেন বিধায়ক?


    বিধায়ক তাপস সাহার আপ্ত সহায়কের কথায় তারই ইঙ্গিত মিলেছে। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তেই সিআইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ৬১দিন জেল খেটেছেন প্রবীর কয়াল। শুক্রবার রাতে যখন তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহার বাড়ি ঘিরে জেরা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা, সেই সময়েই তদন্তকারীদের আরও একটি দল হাওড়ায় একযোগে প্রবীর কয়াল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দু’জনের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সিবিআই’র এই তল্লাশি অভিযানের পরেই প্রবীর কয়াল সাংবাদিকদের সামনে জানান, নিজেকে বাঁচাতে বিধায়ক আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের ফাঁসাচ্ছেন। আমি কি সরকারি পদে আছি? আমার মতো সামান্য লোক কীভাবে চাকরি দেবে? উনি তো চাকরি দেবার নামে টাকা তুলতেন, কিন্তু পুলিশ ওকে না ধরে আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। শুধু তাই নয় প্রবীর কয়াল স্পষ্ট জানান, ‘হ্যাঁ আমি বিধায়কের হয়ে টাকা তুলতাম, তারপর ওঁর হাতে দিয়ে আসতাম। প্রাইমারির চাকরি ছাড়াও রেশন ডিলার, পুলিশের চাকরিও বিক্রি করেছেন বিধায়ক। আমি প্রায় ৩০-৪০ জনের কাছে টাকা তুলেছি, প্রায় দেড় কোটি টাকা। বিধায়কের কাছেই দিতাম। উনি কাকে দিতেন তা তো জানি না’। তবে তিনি কেন এতদিন মুখ খোলেননি? প্রবীর কয়াল সাফ জানান, ‘ভয়ে, উনি তো প্রভাবশালী লোক।ওনার মাথায় দিদির হাত আছে’!


  দিদি অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর হাত তাপস সাহার মাথার ওপর, তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাতে পারেননি— বলছেন খোদ বিধায়কের আপ্ত সহায়ক।
   শনিবারও তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বাড়িতে তল্লাশি শেষ করে সকালে তাঁর আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়ালের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বাড়ি ঘিরে চলে তল্লাশি অভিযান। রীতিমত পেল্লাই বাড়ি। অথচ শ্বশুরমশাই পেশায় টোটো চালক। ফলে বাড়ি তৈরির বিষয়েও খোঁজ নেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রবীর কয়ালের জীবন যাপন, দেদার টাকা খরচের পিছনে কি আসলে নিয়োগ দুর্নীতির টাকার ভাগ রয়েছে? বিধায়ক টাকা তুলে দেওয়ার ভিত্তিতে কী কমিশন পেতেন আপ্ত সহায়ক? 


   এদিকে শনিবার সকালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী আধিকারিকরা বিধায়ক ঘনিষ্ঠ ইতি সরকারের বাড়িতে হানা দেন। ইতি সরকার মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সিবিআই’র একটি দল তাঁর বাড়িতে ঢোকে, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সেখানে ছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁর বাড়ি থেকেও বেশ কিছু নথি উদ্ধার করে সিবিআই। মোবাইল ফোনও ঘেঁটে দেখেন তদন্তকারীরা। তাপস সাহাকে একাধিকবার তাঁর বাড়িতেও আসতে দেখা গেছে। যদিও দলের বিধায়ক বলেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় বলে দাবি ইতি সরকারের। এদিকে সিবিআই আধিকারিকদের একটি দল শনিবার বেঙ্গালুরুতে গিয়ে বিধায়ক পুত্র সাগ্নিক সাহাকে জেরা করে। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা অন্যত্র সরানোর বিষয়েই বিধায়ক পুত্রকে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে জেরা করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

Comments :0

Login to leave a comment