Modi's Economic Advisor

সরকারের দায় নেই চাকরি দেওয়ার দাবি মোদীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার

জাতীয়

বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে ভোটের মুখে দেশের চরম বেকারি নিয়ে হাত ধুয়ে ফেলল মোদী সরকার। রোজগার মেলার নামে মোদী ‘চাকরি বিলি’র খোয়াব বেচলেও এখন দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যর্থতার দায় এড়াতে মোদীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ বলছেন, কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সরকারের কিছু করার নেই। মঙ্গলবার তিনি বলেন, এটা খুবই ভুল যে ধরে নেওয়া হয় সরকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব সমস্যা সমাধান করবে। তারা বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করবে, এটা ভাবা ঠিক নয়। আন্তর্জাতিক লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) ও ইনষ্টিটিউট অব হিউমান স্টাডিজের ইন্ডিয়ার এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট - ২০২৪, ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল এই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বেকারি দূর করার সরকারের দায়বদ্ধতাকে একেবারে উড়িয়েই দিয়েছেন নাগেশ্বরণ।
আইএলও প্রকাশিত রিপোর্টে দেশে বিপুল হারে বেকারি বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা তীব্র হারে বেড়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে দেশের কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৮৩ শতাংশ বেকার। তার মধ্যে স্নাতক ও উচ্চশিক্ষিত যুব বেকারির হার দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০০০ সালে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারির হার ছিল ৩৫.২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫.৭ শতাংশ। প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে শিক্ষিত বেকারের হার।
বেকারি মেটাতে সরকারের দায়বদ্ধতা খারিজ করেই মোদীর উপদেষ্টা নাগেশ্বরণ বলেন, সরকার বেকারি সহ সব সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না। তার কোনও দায় নেই চাকরি দেওয়ার। সাধারণত বিশ্বে দেখা যায়, বানিজ্যিক ক্ষেত্রই নিয়োগ করতে পারে। সরকার শুধু শ্রমিকদের চাকরির যোগ্য করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। মোদী সরকার সেই দিকে লক্ষ্য রেখে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বলে তিনি দাবি করেন। 
মোদী সরকারের চাকরি দেওয়ার দায় নেই বলে তার উপদেষ্টা দাবি করলেও, মোদী প্রথমবার সরকার আসার আগে ২০১৪ সালে, বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন। প্রায় ১০ বছর পেরিয়েছে। মোদীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতোই ২০ কোটি চাকরি দেওয়ার কথা তাঁর সরকারের। সরকারি তথ্য জানাচ্ছে ১০ বছরে ২০ কোটি চাকরি দূরের কথা, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় ১২ কোটি মানুষের উলটে কাজ চলে গেছে। অন্যদিকে সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মোদী সরকার চাকরি প্রার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁদের চাকরির যোগ্য করে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছে বলে যে দাবি করেছে, তাও ঠিক নয় বলে সরকারি তথ্য জানাচ্ছে। মোদীর ঘোষিত ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’ হলো, স্বল্প মেয়াদের প্রশিক্ষণ, তাতে কর্মসংস্থান পাওয়ার মতো কোনও প্রশিক্ষণ মেলে না, ফলে কোনও কর্মসংস্থানও হয়নি। একেবারে ছন্নছাড়া অবস্থা মোদীর ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-র। সরকারি  নমুনা সমীক্ষা (এনএসএসও) ২০১০-১১ সালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে মোট কর্মক্ষমদের  মাত্র ২.২ শতাংশ  কাজের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণের সুযোগ মেলে। মোদীর ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’ চালুর পর শ্রম দপ্তরের পিরিওডিক লেবার সার্ভে রিপোর্টে (পিএলএফএস) ২০২৩ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত  কর্মক্ষমদের হার বেড়ে হয়েছে  মাত্র ৩.৭ শতাংশ। মাত্র ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-র অধীন ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’ (পিএমকেভিওয়াই) কার্যত মাঠে  মারা গেছে। এতে না বেড়েছে বিপুল প্রশিক্ষণ, না বেড়েছে কর্মসংস্থান। ফলে মুখ্য পরামর্শদাতার মোদী সরকারের শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধির দাবিরও  কোনও ভিত্তি নেই। প্রসঙ্গত, যে প্রশিক্ষণে সরকারের দায়িত্বের কথা জানিয়েছেন মুখ্য পরামর্শদাতা, তা উন্নত দেশে পালন করা হলেও আমাদের দেশে হয় না। যেমন দক্ষতা বাড়াতে সরকারি সহায়তায় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ আমেরিকায় মেলে মোট কর্মক্ষমের ৫২ শতাংশের, জাপানে ৮০ শতাংশের, দক্ষিণ কোরিয়ার ৯৬ শতাংশের। মোদী সরকার ২০১৫ সালে স্কিল ইন্ডিয়া মিশনে দেশে ৪০ কোটি কর্মক্ষম মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করলেও, কেন্দ্রের পিএমকেভিওয়াই ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে ১ কোটি ৪১ লক্ষ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের হার হলো মোট কর্মক্ষমের মাত্র ৩ শতাংশ। প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের চাকরি মিলেছে। ৮০ শতাংশ বেকার। ফলে মোদীর ইন্ডিয়া স্কিল মিশনেও কাজ দূর অস্ত থেকে গেছে। এখন সরকারের চাকরি দেওয়ার সেই দায়ও ঝেড়ে ফেলার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন মোদীর উপদেষ্টা।

Comments :0

Login to leave a comment