loan trap

কাঁদতে কাঁদতে বললেন নিহত মজিদুলের মা

রাজ্য

‘ঘরের দেনা মেটাতে কাজে গিয়ে ফিরে এল লাশ হয়ে’

জয়ন্ত সাহা: মাথাভাঙা 
সংসারের দায় মেটাতে বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি তালু মিয়া। তাঁর ২১ বছর বয়সি ছেলে মজিদুল হোসেন ভেবেছিলেন, ঋণের জাল থেকে পরিবারকে উদ্ধার করবেন। তাই ঠিকাদারকে ভরসা করে ৮ মাস আগে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। বুধবার তালু মিয়া বললেন, গত বৃহস্পতিবার রাতেই ছেলে শেষবার ফোন করেছিল। প্রায় আধঘণ্টা কথা হয়। ও বলেছিল, কিছু টাকা পাঠাচ্ছি মজুরি পেলে। বন্ধন ব্যাঙ্কের সুদ মিটিয়ে দিও। সেসব কিছুই হলো না। ওর প্রাণহীন দেহ বাড়ি ফিরে এল। মা মর্জিনা বিবি জানালেন, ৮ মাস আগে রাজমিস্ত্রির কাজে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল। সংসারের অভাব আর ঋণের জাল থেকে আমাদের উদ্ধার করতে। সেখান থেকে লাশ হয়ে ফিরে এল। 
ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনার প্রাণ হারিয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় আরও এক নাম জুড়ল কোচবিহারের মাথাভাঙায়। মাথাভাঙা শহর লাগোয়া পূর্ব খাটের বাড়ির ছেড়ারপাড় গ্রামের যুবক মজিদুল হোসেন। বেঙ্গালুরুতে শ্রমিকের কাজ করতে নিয়ে গিয়েছিলেন শিতলকুচির এক ঠিকাদার। মঙ্গলবার তাঁর কফিনবন্দি দেহ পরিবারের লোকেরা বাড়িতে নিয়ে এলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার যেখানে কাজ করতেন সেখানে ছুটি ছিল। ঘরে একাই শুয়েছিলেন মজিদুল। ঘরের বাইরে মালিক জেসিবি লাগিয়ে মাটি সমান করছিল। অসাবধানতায় জেসিবি মেশিনের ধাক্কা লাগে ঘরের দেওয়ালে। হুড়মুড়িয়ে দেওয়াল ভেঙে পড়ে ওই যুবকের ওপর। অন্য শ্রমিকরা ছুটে গিয়ে ভাঙা দেওয়ালের ইট সরিয়ে মজিদুলকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে বেঙ্গালুরু যান। 
মৃত যুবকের বাবা তালু মিয়া এদিন বলেন, শুক্রবার এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও যে কোম্পানির অধীনে কাজ করে, তাদের কেউ কিংবা যে ঠিকাদার ওকে নিয়ে গিয়েছিল, তারা দুর্ঘটনার খবর আমাদের দেয়নি। শনিবার জানানো হয়, আমার ছেলে দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে। ছেলের কাছেই শুনেছি ঠিকাদারের অধীনেই কাজ করতো ছেলে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, যে ঠিকাদার যুবককে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মজিদুলের সঙ্গে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁরা পরিবারের লোকেদের জানিয়েছেন, মূল মালিককে কোনও শ্রমিকই চেনেন না। মালিকের হয়ে ইঞ্জিনিয়ারেরা এসে কাজ বুঝে নেন। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কোম্পানি নেয় না। কোনও সামাজিক নিরাপত্তা নেই। শুধু মেলে মজুরি।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হোসেন, জিয়ারুল হোসেন, কোনা মিয়ার মতো প্রতিবেশীরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে ছিল ও। প্রশাসন কেন এই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াবে না? মৃত যুবকের দিদি তানজিনা বেগম বলেন, ভাই এতদিন বাবার সাথেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। এখানে নিয়মিত কাজ মেলে না। এদিকে একটি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ায় কিস্তি মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই ভাই ৮ মাস আগে বেঙ্গালুরুতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment