গাঁয়ে পদযাত্রার আয়োজন নিয়ে ছিল বেশ উচ্ছ্বাস। স্বাভাবিকভাবেই আবেগ বাঁধ মানেনি বৃদ্ধা শিখা লেটের। লাল ঝান্ডার প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের ভালোবাসা। তাই পদযাত্রায় শামিল হয়েছিলেন। এই ছিল হতদরিদ্র মহিলার 'অপরাধ'। তারই খেসারতে বেধড়ক মার খেয়ে কোমরে, পায়ে গুরুতর জখম নিয়ে হয়েছেন শয্যাশায়ী।
হামলাকারী কে? নিজের ছেলেই তাঁর মায়ের উপর করেছে এমন অমানবিক আচরণ। কারণ ছেলে যে গাঁয়ের মাতব্বর। তৃণমূলের পঞ্চায়েত মেম্বার। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই ছেলের বিরুদ্ধে মা দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের কাছে। তিনি এবিষয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন।
ঘটনা শনিবার দুপুরের। বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের ঘটনা। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার হয়েছিল লাল ঝান্ডার 'চোর তাড়াও, গ্রাম জাগাও' পদযাত্রা। তাতে স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে শামিল হয়েছিলেন শিখা লেট। শিখা লেটের বড় ছেলে বিধান লেটের তাতে চক্ষুশূল হয়। কারণ সে তৃণমূলের মেম্বার। সেই পঞ্চায়েতের চুরির প্রতিবাদে হওয়া পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন তাঁরই ঘরের লোকেরা। তা মানতে পারেনি বিধান লেট।
এদিন দুপুরে মাকে আচমকা মারধর শুরু করে সে। মদ্যপ অবস্থায় এই মারধর করেছে বলেই অভিযোগ মায়ের। ছেলের হাতে মার খাওয়ার পর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মাড়গ্রাম থানায় হাজির হন শিখা লেট। সঙ্গে পান গাঁয়ের অনেককেই।
থানায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধা বলেন, ‘লাল ঝান্ডার মিছিল হচ্ছে দেখে আনন্দে হয়েছিল খুব। তাই মিছিলে চলে গিয়েছিলাম। এই কারণেই আমার বড় ছেলে আমার গলা টিপে ধরে , লাথি মারে তারপর তুলে আছাড় মারে। আমার কোমর, পায়ে খুব যন্ত্রণা করছে। আমি দাঁড়াতে পারছি না। সোজা হতে পারছি না।’ বৃদ্ধা আরও বলেন, ‘ছেলে আমাদের সঙ্গে থাকে না। আমাকে দেখেও না। আমার তিন বিঘা সম্পত্তিও নিয়ে নিয়েছে আগেই।’ মা’কে নিয়ে থানায় যাওয়া বৃদ্ধার ছোট ছেলে শ্রীধন লেট যিনি নিজেও শামিল হয়েছিলেন পদযাত্রায় বলেছেন, ‘দাদা মেম্বার তৃণমূলের। খুব দাপট দেখায়। মাকে দেখে না। বের করে দিয়েছে। মা আমার কাছেই থাকে। কষ্ট করেই মা ও অসুস্থ বাবাকে নিয়েই আমাদের সংসার চালাতে হয়। এদিন দুপুরে হঠাৎ আমার দুই ছেলে এসে মাকে মারার খবর দেয়। আমি ছুটে গিয়ে দেখি এই কাণ্ড।’
আক্রান্ত বৃদ্ধাকে নিয়ে থানায় ছুটে আসেন সকলে। যেহেতু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে টালবাহানা করে পুলিশ। এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় বৃদ্ধাকে। থানা থেকেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে শিখা লেটের।
সিপিআই(এম) নেতা সঞ্জীব বর্মণ বলেছেন, ‘ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক, মহকুমা পর্যন্ত প্রতিবাদ হবে। তৃণমূল মেম্বারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।’ অভিযুক্ত তৃণমূল মেম্বার বিধান লেটের দাবি, ‘মা ঘরে ঢুকতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। মা মিছিল করেছে আমি জানিই না।’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments :0