CAR ACCIDENT

সাংসদের গাড়ির ধাক্কায় মৃত শিশু

রাজ্য

তৃণমূল সাংসদের গাড়ি বলে কথা! বেপরোয়া গতি আর তাতেই প্রাণ হারালো ছয় বছরের এক শিশু সন্তান। 
নওদায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ আবু তাহের খানের গাড়ির বেপরোয়া গতির জেরে সরাসরি ধাক্কায় মৃত্যু হলো এক শিশুর। বিপুল রক্তক্ষরণ হয় প্রান্তিক কৃষক পরিবারের ছয় বছরের শিশু সন্তানের। হাসপাতালে যাওয়ার পরে মৃত ঘোষণা করা হয়।


এই মর্মান্তিক ঘটনার পরেও তৃণমূলের স্বভাবসিদ্ধ ঔদ্ধত্য নিয়েই সাংসদ আবু তাহের খান তাঁর গাড়ির তলায় পড়ে শিশুর মৃত্যুর পরেও কার্যত সাংবাদিকদের সামনে সদ্য সন্তান হারানো মা’কেই কাঠগড়ায় তুলে দিলেন। মায়ের নজর না থাকাতেই ঐ শিশুটি তাঁর গাড়ির নিচে চলে আসে বলে সাফাই দিলেন। 
আর ততক্ষণে ‘‘এমপি বলে আমার ব্যাটাকে মেরে ফেলল’’ এই আর্তনাদেই ভারী হলো মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। শোকস্তব্ধ পরিবার। অসহায় আর্তি বাবার। পরিবারের স্পষ্ট অভিযোগ, গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর। শিশুর বাবা হামিদুল সরকার বুক ফাটা আর্তনাদের মধ্যেই বলেন, “ছেলেকে খেয়ে না খেয়ে বড় করছিলাম। কতো কষ্ট করে মানুষ করছিলাম। এমপি হয়েছে বলে এরকম করে গাড়ি চালাবে !” প্রান্তিক কৃষক পরিবার। দিনমজুরের কাজও করেন স্বামী, স্ত্রী। গোটা ঘটনার পরে ভাষা হারিয়েছেন তাঁরা। সাংসদ খোদ মায়ের দিকেই অভিযোগ আঙুল তোলায় মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছেন সন্তান হারা জননী। 


৬ বছরের ওই শিশুর নাম হাসিম সরকার। বাড়ি নওদার গঙ্গাধারী গ্রামে। মায়ের সাথে পিপড়াখালিতে ব্যাঙ্কে এসেছিল ওই শিশু। দুপুর প্রায় আড়াইটে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নওদায় পিপড়াখালির কাছে রাস্তায় ওই শিশুকে ধাক্কা মারে সাংসদের গাড়ি। সাংসদের গাড়িতে করেই ওই শিশুকে নিয়ে আসা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় ঘণ্টাতিনেক পর শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এদিন সন্ধ্যায় প্রথমে ঐ শিশুর মৃত্যুর কথা সরাসরি অস্বীকার করেন সাংসদ। যদিও গাড়িতে ওঠার পর স্বীকার করে বলেন,  মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর। মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই অবশ্য পারিষদদের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ছাড়েন সাংসদ আবু তাহের খান। 
সদ্য শিশু সন্তান হারানো মায়ের দিকেই দায় চাপিয়ে মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ‘ওই শিশু গাড়ির সামনে ছুটে আসে।  শিশুর মা ব্যাঙ্কে কাজের জন্য এসেছিল। ব্যাঙ্কে ওপরেই ছিল। সে বুঝতেই পারেনি। ঘটনা ঘটার পর যখন ৫০-৬০ জন এসেছে তখনও মায়ের দেখা পাওয়া যায়নি। অনেক পরে মা খোঁজ খবর করেছে। আমি কোলে করে বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে আসি। আমি মর্মাহত’। 


মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার জানান,‘ এফআইআর করা হয়েছে। গাড়ির চালক আলমগীর মণ্ডলকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ঘাতক গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে’। 

সাংসদের গাড়ির বেপরোয়া গতির বলি এক গরিব কৃষক পরিবারের শিশু সন্তানের। গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে যেভাবে সন্তান হারানো মাকেই মিডিয়ার সামনে দোষারোপ করেছেন তাতে আর রুচি, ঘৃণ্য মনোভাব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাতে যদিও ফোন করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।  

সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা ওই শিশুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। জামির মোল্লা বলেন,‘তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, বিধায়ক, সাংসদদের সাদা কালো স্করপিও গাড়ির দাপটে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। বেপরোয়া গতিতেই চলে তৃণমূল নেতাদের গাড়ি। শুধু চালককে গ্রেপ্তার করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। বেপরোয়া গাড়ির চালককে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব গাড়ির মালিকেরই। সেই মালিকের এমন অসংবেদনশীল মন্তব্যের দায়ও তো নিতে হবে শাসক দলকেই।’’

Comments :0

Login to leave a comment