অনিন্দিতা দত্ত
নাগাড়ে বৃষ্টি চলছেই। আর লাগাতার ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণে ধসে জেরবার উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল। বাংলা - সিকিম লাইফ লাইন এখনও বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল এড়াতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকটা ঘুরপথে যানবাহন চলাচলেও বিপদ বাড়ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ২৯মাইল, লিকুভির, ২৭মাইল সহ জাতীয় সড়কের সর্বত্র জায়গায় জায়গার ধস নেমেছে। সারা রাত টানা বৃষ্টিতে ১০নম্বর জাতীয় সড়কে শুক্রবার ফের নতুন করে একাধিক ধসের খবর মিলেছে।
শনিবার ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকাগুলিতে। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত সিকিম পাহাড়, দার্জিলিঙ ও কালিম্পঙে ফের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষনের পূর্বাভাষ জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে তিস্তার জলস্তর সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু পরে রাতভর প্রবল বৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ, সিকিম, ভূটান পাহাড়ে। জলের তলায় চলে গেছে দার্জিলিঙ, কালিম্পঙের রাস্তা। অবিরাম বৃষ্টির জেরে ফের খরস্রোতা তিস্তা নদী ফুঁসছে। ক্রমশই জল বেড়েই চলেছে। লাগাতার বৃষ্টিতে তিস্তাবাজার এলাকা আরোও ধস বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে। তিস্তানদীর জলচ্ছাসে রাস্তার কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি পরিস্থিতির কোনরকম উন্নতি না ঘটায় যতো দিন যাচ্ছে ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তিস্তা। তিস্তার জলে রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় এপাড় ওপাড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কালিম্পঙের তিস্তাবাজার এখনও জলমগ্ন। তিস্তা গ্রাস করে নিয়েছে রাস্তা। কালিম্পঙ-দার্জিলিঙের সংযোগকারী তিস্তাবাজার,পেশক,লামাহাটা, ঘুম, জোরবাংলো রাস্তার হাল বেহাল। এই রাস্তা ধরেই সারা বছর পর্যটক বোঝাই গাড়িগুলি চলাচল করে দার্জিলিঙ ও সিকিমের বিভিন্ন পাহাড়ী ডেস্টিনেশনে। কিন্তু গত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে রাস্তাটি নিশ্চহ্ন হয়ে গেছে। নদী ও রাস্তার মধ্যে দূরত্ব ঘুচেছে। ঝুঁকি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলেও কিছু ছোট গাড়ি চলাচল করলেও, শুক্রবার ওই রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অনির্দিষ্টকালের জন্য রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে হু হু করে তিস্তার জলস্ফীতি ঘটছে তাতে করে উদ্বেগ বাড়ছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের।
ধসে সেলফিদারা ধসে বিধ্বস্ত ছিলোই। ১০নম্বর জাতীয় সড়কের কালিম্পঙের বিরিকদারা ও সেলফিদারার মাঝে ধসের কারণে রাস্তাটির বড় অংশ তিস্তার জলে ভেসে যায়। ফলে পাহাড় কেটে রাস্তা সম্প্রসারন ও বাংলা—সিকিম লাইফ লাইন সংষ্কারের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এদিন ২১মাইল অর্থাৎ বিরিকধারার কাছে নতুন করে ধস নামায় ১০নম্বর জাতীয় সড়কের একটা বড় অংশ তিস্তা নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। ধসের জেরে ২১মাইলে জাতীয় সড়ক একেবারে সঙ্কীর্ন হয়ে পড়েছে। বাংলা ও সাউথ সিকিম সীমানা মেল্লিতে বড় আকারের ধস নেমে সকাল থকে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা অবশ্য দ্রুততার সাথে ধস পরিষ্কারের কাজে হাত লাগান। রাস্তা পরিষ্কারের পরে ওই রাস্তায় অত্যন্ত ধীর গতিতে একমুখী যান চলাচল শুরু হয়। বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে ১০নম্বর জাতীয় সড়ক জল কাদায় ভরে গেছে। দার্জিলিঙ—কালিম্পঙ সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ থাকায় গাড়িগুলি ঘুরপথে কালিম্পঙ-আলগাড়া-লাভা-গোরুবাথান-ডুয়ার্স-সেবক হয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছাবে।
এদিন ধসের জেরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উত্তর সিকিমে। পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ে একটি চলন্ত গাড়িতে। দুমড়েমুচড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে সিঙ্গবেল থেকে সিংতামের দিকে যাচ্ছিল গাড়িটি সেই সময়ই ধস নামে। বিশাল একটি পাথর গাড়ির উপরে এসে পড়ে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনায় এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিকিম ও কালিম্পঙে প্রবল বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো বন্ধ রয়েছে বাংলা সিকিম লাইন লাইন ১০নম্বর জাতীয় সড়ক। মাঝে কয়েকদিন খুললেও প্রবল বৃষ্টি আর ধসে ফের অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাতীয় সড়ক। কালিম্পঙ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৃষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে জাতীয় সড়ক স্বাভাবিক হতে। যদিও বৃষ্টি চলছেই। নতুন করে একের পর এক ধসও নেমে আসছে। প্রতিবছরই বর্ষার মরশুমে ধসের জেরে বন্ধ হয়ে যায় বাংলা সিকিম লাইফ লাইন ১০নম্বর জাতীয় সড়ক। চলতি বছরেও গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় ধসে গিয়েছে ১০নম্বর জাতীয় সড়ক। এখনও ধস বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে গোটা এলাকা। জাতীয় সড়কের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।
Comments :0