মানিকচকের বালুটোলায় আবার বোমা বিস্ফোরণে আহত হলো দুই শিশু। বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হয়েছে এই দুই শিশু। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে জেরবার মানিকচকের গোপালপুরের এই বালুটোলা অঞ্চল। সম্প্রতি এখানে বোমা বাঁধতে গিয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলবার আবার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পরিকল্পিত সন্ত্রাস কায়েম করার লক্ষ্যেই শাসক দল বোমা তৈরি ও মজুত করছে।
এদিন ঘটনার খবর পেয়ে মানিকচক থানার আইসি পার্থসারথি ঘোষ সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী বালুটোলায় ছুটে আসে। আসেন জেলা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরাও। গোটা এলাকায় ঘিরে ফেলে পুলিশ। বোম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা গিয়েছে, আশিকুল ইসলাম (৯) ও আব্দুল মোমিন (৫) খুড়তুতো দুই ভাই বাড়ির পাশেই একটি ইটভাটার কাছে খেলা করছিল। সেখানে বলের মতো কিছু দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। তারা তাদের ঠাকুরমাকে এটি বল না অন্য কিছু জানতে চায়। কিছু বুঝতে না পেরে তাদের ঠাকুরমা সেটিকে বাইরে ফেলে দিতে বলে। ঠাকুমার নির্দেশে ঘরের ভেতর থেকেই আশিকুল বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। ছুঁড়ে ফেলতে প্রচণ্ড শব্দে বাড়ির বারান্দায় বোমাটি ফেটে যায়। বিস্ফোরণে দুই শিশুই আহত হয়েছে। আশিকুলের ডান চোখের উপরে ও পায়ে আঘাত লাগে। ছোট্ট আব্দুলের বাম কপাল ও পায়ে ক্ষত হয়। ঘটনায় প্রচণ্ড ভীত আব্দুল জানায়, খেলতে গিয়ে বাঁশবাগানের কাছে বলটি পেয়েছিলাম। আমার দাদা আশিকুল বলটি হাতে তুলে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার দাদী বলটি বাইরে ফেলে দিতে বলে। বলটি ফেলতেই সেটি ফেটে যায়। প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। আমার কপাল, পায়ে অনেকটা কেটে গেছে। দাদা চোখে ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, এই এলাকাতেই গত মে মাসে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে মুড়ি-মুড়কির মতো এলাকায় বোমা পড়ে। গোপালপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মোহাম্মদ নাসির ও মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বলে জানা যায়। এই সংঘর্ষের এক সপ্তাহের মধ্যে এলাকা থেকে ব্যাপক সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে মানিকচক থানার পুলিশ। এরই জেরে গত ১৭ জুলাই গভীর রাতে বালুটোলার একটি আমবাগানে বোমা বানাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় দু’জনের। পরে মালদহের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বিস্ফোরণে আহত আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয় এই বোমাকাণ্ডে।
সিপিআই(এম) নেতা দেবজ্যোতি সিনহা এদিন বলেন, গোপালপুরের বালুটোলা যে বোমা তৈরির আঁতুরঘর তা আমরা আগেই বলেছি। বারবার বালুটোলাতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসক দল তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক সন্ত্রাস কায়েম করতে চাইছে। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ না করলে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে মানিকচকে রক্তের বন্যা বইবে। সন্ত্রাস রুখতে পুলিশ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।
Comments :0