Tapan Sen

দুই প্রতারক, জালিয়াতের সরকারকে হটাতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ের আহ্বান

জাতীয়

Tapan Sen


পথে নেমে ধারাবাহিক লড়াই আন্দোলনই হলো দাবি আদায়ের মূল অস্ত্র। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে ধর্মঘটে যেতে হবে বারবার। বৃহস্পতিবার কলকাতার রানি রাসমণি রোডে অসংগঠিত শ্রমিকদের এক বিরাট সমাবেশে একথা বলেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। তিনি বলেন, দেশে এবং রাজ্যে প্রতারণা এবং জালিয়াতির দুই সরকার চলছে। শ্রমিকদের সেস লুট করছে কেন্দ্রে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূলের সরকার। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে লড়তে হবে। এদিনের সমাবেশে সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু বলেন, যতদিন মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ততদিন রাজ্যের শ্রমিকরা কাজ পাবেন না। চা শ্রমিক থেকে শুরু করে কয়লা, বিড়ি, পরিবহণ, নির্মাণ, ইটভাটা, মিড ডে মিল, আশাকর্মী—এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ওপর দিনরাত জুলুম চলছে। শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করে লুটপাট চালতে মদত দিচ্ছে মমতার সরকার এবং বিজেপি সরকারও। আমাদের শপথ নিতে হবে সামনের নির্বাচনে ওই দুই দল পিছু হটতে যেন বাধ্য হয়।

বুধবার থেকেই গোটা রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিকদের গন্তব্য ছিল কলকাতা। দূরবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা এসেছেন কলকাতায়। এদিন সকাল থেকে রাজপথে মিছিল করেছেন তাঁরা। রানি রাসমণি রোডের সমাবেশ স্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অসংখ্য মুষ্টিবদ্ধ হাত বারেবারে স্লোগান তুলে ন্যায্য অধিকারের দাবি তুলেছেন। জীবন-জীবিকা, রুজি বাঁচাতে তীব্র লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। 
  সমাবেশে তপন সেন বলেন, বারবার পথে নেমে জোরদার লড়াই হলে অধিকার দিতে বাধ্য হবে সরকার। শ্রমিকদের সেস কালেকশনের টাকা লুট করছে এরাজ্যের সরকার। শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলি উধাও হয়ে যাচ্ছে। ৮০ শতাংশ প্রান্তিক মানুষের যাবতীয় সুবিধাগুলি ছেঁটে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে কর্মস্থল ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখন কৃষক ও খেতমজুরদের সংগঠন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে বৃহৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। আগামী ৫ এপ্রিল সংসদ অভিযানে জোরালো আওয়াজ উঠবে ন্যায্য দাবি দাওয়ার।

অনাদি সাহু সমাবেশে বলেন,  শ্রমিকদের যে অধিকার একসময়ে বামপন্থীরা এনে দিয়েছিলেন তা তৃণমূল ও বিজেপি কেড়ে নিচ্ছে। না কেন্দ্রের, না রাজ্যের, কোনও বাজেটেই শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। রেগার টাকা, আবাস যোজনার টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। মোদী এবং মমতা দুজনেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন। শ্রমিকদের চিকিৎসা, তাঁদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, থাকার জায়গা, পিএফ— সবই ভুলুণ্ঠিত। আইসিডিএস, মিড ডে, আশাকর্মীরা আজ গভীর সঙ্কটে। বন্ধ কলকারখানা খোলার কোনও উদ্যোগ রাজ্যে নেই। অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বার্থে আমাদের আন্দোলন আরও অনেক জোরদার করতে হবে। এলাকায় এলাকায় সংগঠনকে আরও বেশি মজবুত করতে হবে। রাজ্যে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ’র দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এদিন সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

  এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন গার্গী চ্যাটার্জি, এস এম সাদী, মধুমিতা ব্যানার্জি, দেবাশিস রায়, প্রণব মজুমদার প্রমুখ সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি। সমাবেশ থেকে ১৪ দফা দাবিতে শ্রমমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয় সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, মলয় সরকার, জীবন সাহা, আসাদুল্লা গায়েন, শিহরণ আচার্য, শিলা মণ্ডল। এছাড়াও সাবিনা ইয়াসমিন, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, দেবাশিস দে, বিমান সান্যাল প্রমুখ ছিলেন এই প্রতিনিধিদলে।
  অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের দাবি দাওয়াগুলির উল্লেখ করে সুভাষ মুখার্জি বলেন, কর্মচ্যুত শ্রমিক ও বেকার যুবকদের কাজ দিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে হবে, সুনিশ্চিত করতে হবে সার্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা। এছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের সমস্ত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, সম্মানজনক মজুরি, জীবিকার নিরাপত্তা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। আইসিডিএস, আশা, মিড ডে মিল সহ সমস্ত প্রকল্প কর্মীদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি, ন্যূনতম বেতন সাপেক্ষে ভাতা, স্থায়ীকরণ, অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা দিতে হবে সরকারকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী আইন শক্ত হাতে চালু করতে হবে। তিনি বলেন, দাবিগুলি নিয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দরকারে প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘেরাও করে রাখতে হবে যতক্ষণ না দাবি আদায়ের মীমাংসা হয়।  

 এদিন লেবার কমিশনের কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচির পর দেবাঞ্জন চক্রবর্তী জানান, আশা, মিড ডে মিল কর্মীদের পিএফ, ইটভাটা শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার ক্ষেত্রে লেবার কমিশনার বলেছেন, সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে চিঠি দিলে তা বিবেচনা করা হবে। এছাড়া সরকারে আলোচনা হবে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন নিয়েও। পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম রেজিস্ট্রির জন্য একটি অ্যাপ তৈরি হবে। সিআইটিইউ’র দাবির প্রেক্ষিতে লেবার কমিশনার জানিয়েছেন, বিড়ি শ্রমিকদের জন্য নতুন আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া গৃহসহায়িকাদের জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন এবং পরিবহণ শ্রমিকদের সামাজিক সুবিধা প্রকল্পও বিবেচিত হবে বলে লেবার কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন। দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন মৌখিক প্রতিশ্রুতিগুলিকে সরকারকে কাজে পরিণত করতে হবে অবিলম্বে।  

Comments :0

Login to leave a comment