ফের ভোট রাজ্যে। নতুন করে ভোট হবে হাওড়া, সিঙ্গুর ও হাবরায়। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানালো রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ গণনার দিন তুমুল লুটের অভিযোগ জানিয়েছে বহু কেন্দ্রে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে ফের ভোট নেওয়ার ঘোষণা করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
১৫টি বুথে ফের নির্বাচন হবে হাওড়ার সাঁকরাইলে। কমিশন জানিয়েছে ভোট হবে, হাওড়ার সাঁকরাইলের মানিকপুর দর্জিপাড়া প্রাথমিক স্কুলের আটটা বুথে। রশ্মি মহল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের একটি বুথ। সারেঙ্গা হাইস্কুলের ৫টি বুথে ও হিরাপুর পল্লিশ্রী পাঠাগারের একটি বুথে। সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির ১৩ নম্বর নেতাজি জয়ন্তী পাঠাগারে একটি বুথ ভোট হবে।
নতুন করে ভোট হবে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরাতেও। হাবরার ভুরখুন্ডা পুমলিয়ার দুটি স্কুল ও ভুরখুন্ডা এমদালিয়া হাই মাদ্রাসায় একটি বুথেও ভোট হবে। ব্যালট লুটের অভিযোগ উঠেছিল গুমার দোগাছিয়ার নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের একটি বুথে। সেখানেও ভোট হবে।
গত ১১ জুলাই ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। হাওড়া জেলায় ১৪টি গণনা কেন্দ্র দখল করে কারচুপি করে পঞ্চায়েতের বহু আসন দখল করে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। কোথাও ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে বিধায়কের দাদাগিরি আবার কোথাও গণনা কেন্দ্রের বাইরে থেকে পাওয়া গেল গোছা গোছা বান্ডিল করা ব্যালট পেপার। দেখা গিয়েছে ফেলে দেওয়া হয়েছে সিপিআই(এম) প্রার্থীদের পক্ষে ভোট পড়া ব্যালট পেপার।
সাঁকরাইল ব্লকের ভোট গণনা হয় সিকম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। গণনা কেন্দ্রে বামপন্থী প্রার্থী ও এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা। তাদের বাধাকে অতিক্রম করেই প্রার্থী ও কাউন্টিং এজেন্টরা হলে প্রবেশ করেন। তার আগেই হলের ভেতর কয়েকজন সমাজবিরোধী নিয়ে ঢুকে পড়েন তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক প্রিয়া পাল। গণনার প্রথম পর্বে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধী দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আইনকে তোয়াক্কা না করে গণনা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায় দক্ষিণ হাওড়া বিধায়ক নন্দিতা ব্যানার্জিকে।
সব দলের কাউন্টিং এজেন্টরা ভিতরে ঢুকলে অতর্কিতে বামপন্থী প্রার্থী ও এজেন্টদের উপর আক্রমণ করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। নেতৃত্ব দেন সাঁকরাইলের বিধায়ক প্রিয়া পাল। পুলিশ প্রশাসনের সামনেই মারধর করে গণনা কেন্দ্রের বাইরে বের করে দেওয়া হয় বিরোধী দলের প্রার্থী ও এজেন্টদের। রেহাই পাননি গণনা কেন্দ্রের ভিতরে থাকা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। এরপরই গণনা কেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন গণনার সাথে যুক্ত সরকারি কর্মীরা।
বাইরে বেরিয়ে তারা জানান যে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে তারা আর গণনার কাজে যাবেন না। সরকারি কর্মীরা অভিযোগ করেন সকাল থেকে গণনা কেন্দ্রের ভিতরে বহু মানুষ প্রবেশ করেছেন। বিরোধী দলের প্রার্থী জয়ী হলেই বাইরে থেকে লোকজন গিয়ে টেবিল চেয়ার ভাঙচুর করছে। এমনকি ব্যালট পেপার ছিনতাই করা হয়েছে। তাঁরা বলেন, গণনা কেন্দ্রের ভিতরে শুধুমাত্র একজন রাজ্য পুলিশ থাকলেও দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
সরকারি কর্মীরা বেরিয়ে আসায় বন্ধ হয়ে যায় গণনা। অভিযোগ, তৃণমূলের দুই বিধায়ক প্রিয়া পাল ও নন্দিতা ব্যানার্জির সঙ্গী দুষ্কৃতীদের সহায়তা করেন সাঁকরাইল থানার ওসি।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের সিপিআই(এম) সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সওকত মন্ডল ২৫৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন গণনায়। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা গণনা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে বাইরে জলে ফেলে দেয়। সিপিআই(এম) সমর্থকরা সেই ব্যালট উদ্ধার করে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কমিশন তার দিকে কর্ণপাত না করে ওই বুথের তৃণমূল প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করে। শুরু হয় প্রতিবাদ। তার কিছু পরেই আইএসএফ’র এক জয়ী প্রার্থীকে মারধর করে গণনা কেন্দ্র থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করা দেয় তৃণমূলের লুম্পেন বাহিনী। তারপরেই গণনা কেন্দ্রে আসেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। হাবড়া ২ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলির জয়ী প্রার্থীদের জোর করে বাইরে বের করা হয়। তৃণমূলের মস্তান বাহিনীকে সঙ্গত দেয় বারাসাত জেলার পুলিশ বাহিনী।
গণনা চলাকালীন গণনা কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছিড়ে ফেলেন, কিছু চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। এই অভিযোগে সরব হন ওই বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদার। হাবরা-২ নম্বর ব্লকের ভুরকুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। ওই বুথে সিপিআই(এম) প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদার চার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু কমিশন তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটিকে জয়ী বলে ঘোষণা করেন। তারপরেই গণনা কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন বামফ্রন্ট কর্মী সমর্থকরা। রাস্তা অবরোধও হয়।
বৃহস্পতিবার এই আসনেও পুনর্নির্বাচন হবে।
Comments :0