West Bengal Panchayat Elections 2023

বাম-কংগ্রেসকেই ভয় পাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি

রাজ্য

West Bengal Panchayat Elections 2023


বাম কংগ্রেসের ভূত দেখছে বিজেপি-তৃণমূল!
পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হামলা সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে প্রার্থী মনোনয়নে বাম কংগ্রেস আইএসএফ যেভাবে বিজেপি’কে পিছনে ফেলে দিয়ে শাসকদলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তাতে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই আতঙ্কিত। দুই দলেরই আক্রমণের কেন্দ্রে চলে এসেছে বাম কংগ্রেস। সোশাল মিডিয়া এবং মেনস্ট্রিম মিডিয়ার সব মুখ ব্যবহার করে তৃণমূল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে বাম কংগ্রেস মিলিতভাবে এরাজ্যে বিজেপি’র সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর বিজেপি প্রচার করছে, তৃণমূলকে রেহাই দিতে বাম কংগ্রেস এখন তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। এর জন্য ভূয়ো বা ফেক প্রচারেও কুন্ঠা করছে না তারা।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বাম কংগ্রেস শূন্য বিধানসভা দেখে রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি’র দ্বিমেরুকরণ সম্পন্ন হয়ে গেছে ভেবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন তৃণমূল বিজেপি নেতারা। মতাদর্শগত শত্রু খতম ভেবেছিলেন বিজেপি নেতারা, দূরবীন দিয়েও সিপিএম দেখা যাচ্ছে না বলে বিদ্রুপ করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেই পশ্চিমবঙ্গে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে তৃণমূলের হামলার মোকাবিলা করে বামফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন দিয়েছেন, জোর করে পুলিশ ও তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরেও বামফ্রন্টের মনোনয়ন সংখ্যা বিজেপি’কে ছাপিয়ে গেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপি মোট ৩৮৪৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, সিপিআই(এম) একাই প্রার্থী দিয়েছে ৩৫৪১১ টি আসনে। বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে কংগ্রেস এবং আইএসএফ প্রার্থীদের লড়াই হিসাব করলে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীই হয়ে উঠেছে বাম কংগ্রেস আইএসএফ। বিজেপি পিছনে। পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ৯৭৩০ আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের প্রার্থীর সংখ্যাই ৭ হাজারের বেশি, যা ছাপিয়ে গেছে বিজেপি’র প্রার্থী সংখ্যাকে। বামফ্রন্টের প্রার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন কংগ্রেস ও আইএসএফ সহযোগীরা।

সব মিলিয়ে শুধু সংখ্যাতথ্যের নিরিখেই নয়, রাজনৈতিকভাবেও গ্রাম বাংলায় মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইতে বাম কংগ্রেসকেই দেখতে পাচ্ছেন। মানুষ দেখতে পাচ্ছেন, বিজেপি প্রার্থীদের ওপরে হামলা না হলেও রক্তাক্ত হয়েও লড়তে হচ্ছে বামফ্রন্ট প্রার্থীদেরই। লাল ঝান্ডার মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, জেলাগুলিতে সমাবেশের চেহারাতেও তা স্পষ্ট। গোদী মিডিয়া আর অনুপ্রাণিত মিডিয়া দিয়ে ব্ল্যাক আউট করেও এই সত্যকে আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। 
এই কারণেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপি’তে প্রশ্ন উঠে গেছে। ৬ মাস আগে অমিত শাহ নিজে কলকাতায় মুরলিধর লেনে বিজেপি রাজ্য দপ্তরে সভা করে দলের রাজ্য নেতাদের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলায় ২০২১ সালের নির্বাচনে বামেদের খোয়ানো ভোট আবার বামে ফিরছে কী করে?’ রিপোর্ট চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এসে রাজ্য বিজেপি’র হাল আরও খারাপ। বামেদের ভূত দেখছে আতঙ্কিত বিজেপি এবং তৃণমূল। কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘আগে যাঁরা বামফ্রন্ট করতেন এবং এখনও বামফ্রন্ট করেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ করে বলছি বামফ্রন্টকে ভোট দেওয়া মানেই তৃণমূলকে ভোট দেওয়া। ঘুর পথে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তৃণমূল করুন ও সরাসরি তৃণমূলকে ভোট দিন। আর যদি তৃণমূলকে হারাতে চান তাহলে একমাত্র নরেন্দ্র মোদীর পার্টি বিজেপিকে ভোট দিন।’ রবিবার জঙ্গলমহলে নির্বাচনী প্রচারে শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে হয়েছে, ‘সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া। তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে চুরির তদন্ত বন্ধ হওয়া। মমতা ব্যানার্জি সীতারাম ইয়েচুরি ও রাহুল গান্ধীর পায়ে পড়ে দিল্লির সরকার পরিবর্তন করতে চাইছেন।

তৃণমূল মানে চোর, চোরেদের সঙ্গ দিচ্ছে সিপিএম কংগ্রেস।’ অথচ এই শুভেন্দু অধিকারীই গত ২৪ মার্চ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাম আমলে আমিও রাজনীতি করেছি। কিন্তু শিক্ষক পদে নিয়োগ দুর্নীতি হয়নি। বামেরা টাকা নিয়ে চাকরি দেয়নি।’ সম্পূর্ণ উলটো দিক থেকে প্রচার করছে তৃণমূল। স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘বাম কংগ্রেস বিজেপি জোট করেছে তৃণমূলকে হারাতে।’ পাটনা বৈঠকে শেষপর্যন্ত গেলেও আগে তিনি ঘোষণাই করে দিয়েছিলেন, বাম কংগ্রেস এরাজ্যে যেভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছে তারপরে তিনি দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী শিবিরে যোগ দেবেন না। পাটনা বৈঠকের পরে সীতারাম ইয়েচুরি এবং অধীর চৌধুরি দুজনেই বলেছেন, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী লড়াই হলেও রাজ্যে রাজ্যে লড়াই হবে বাস্তবতা অনুসারে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়বে বাম কংগ্রেস। কিন্তু তৃণমূল ক্রমাগত বিরোধী ঐক্যে শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, বিজেপি বিরোধী লড়াই করতে হলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে মাঠ ছেড়ে দিতে হবে, সরে দাঁড়াতে হবে বাম কংগ্রেসকে।
এখানেই শেষ নয়, বাম কংগ্রেস আইএসএফ’এর সঙ্গে বিজেপি যোগ প্রমাণ করতে সোশাল মিডিয়াতে ফেক ছবি, আইএসএফ বিধায়কের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ইত্যাদিও রটাচ্ছে। বিজেপি’র পতাকা এবং লালঝান্ডা একসঙ্গে ফটো শপে মিশিয়ে যৌথ মিছিলের ফেক ছবি প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে দ্বিমেরু রাজনীতি বজায় রাখতে বামেদের একপাশে ঠেলে দিতে। কিন্তু বামেদের প্রাসঙ্গিকতা আর অস্বীকার করতে পারছে না।

বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, বালিগঞ্জ উপনির্বাচন এবং সাগরদিঘি উপনির্বাচনের পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কেন তৃণমূলকে টক্কর দিতে পারছে না সেই প্রশ্ন আর কেন্দ্রীয় নেতারা তুলছেন না এরাজ্যের নেতাদের কাছে। কেন বামেরা আবার বাড়ছে তা নিয়েই উদ্বেগ তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দশ বছরের শাসনেই বিজেপি-আরএসএস’এর রমরমাকে মাথায় রেখে তাঁদের আতঙ্ক, বাংলায় তৃণমূল বিরোধী জনবিক্ষোভে আবার লালঝান্ডা উড়লে তার প্রভাব পড়বে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধিতার একীকরণে। তাই দুর্নীতি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিই হোক, কিংবা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো নিয়েই হোক, মোদী শাহের তাড়া নেই। এরাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনই তাদের লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে আদর্শগতভাবে বিপজ্জনক কমিউনিস্টদের বাড়বাড়ন্ত নিয়েই তাদের দুশ্চিন্তা।

Comments :0

Login to leave a comment