Women Bill

আজ কি মহিলা বিল? বিভ্রান্তি রেখেই ঘোষণা

জাতীয়

বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোন মহার্ঘ বিষয় আলোচনা করা হবে, তা সোমবার রাত পর্যন্ত ধোঁয়াশাই রেখে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠকের পরেও কোনও সরকারি ভাষ্য না জানিয়ে উলটে এড়িয়ে যাওয়া হয়। পরে নানা সূত্র মারফত ভাসিয়ে দেওয়া হয় যে, এই অধিবেশনে বহু বছরের ঝুলে থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিল আনা হচ্ছে। কিন্তু এতেও বিভ্রান্তি থেকে গেল। এই বিল কি মঙ্গলবারই আনা হবে? আনা হলেও আলোচনার জন্য পড়ে থাকবে মাত্র চারদিন!
আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য বীরদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, এই বিশেষ অধিবেশনে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশবাসী তো দূর অস্ত, সাংসদরা পর্যন্ত জানতে পারলেন যে, সেই ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’-টি কী? আসলে কি মহিলা বিল আনাই তাঁর সেই ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’? এমনিতে ধারণা করা হয়েছিল যে, মহিলা সংরক্ষণ অথবা অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিল নিয়ে সম্মতি জানিয়েছে মন্ত্রীসভা। তবে বহু চর্চিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিল এই অধিবেশনে সম্ভবত আনা হচ্ছে না। রবিবার সর্বদল বৈঠকে আলোচ্যসূচির যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল তাতে ওই বিলের উল্লেখ নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, এমন রহস্যে মোড়া অধিবেশন অতীতে ডাকা হয়নি।
সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও এদিনই রাতের দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল এক্স হ্যান্ডেলে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনা হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জয়গান গেয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘একমাত্র মোদী সরকারেরই নৈতিক সাহস আছে মহিলা সংরক্ষণের দাবির প্রত্যাশা পূরণে। মন্ত্রীসভার বৈঠকের সম্মতি ফের তা প্রমাণ করল।’’ নিজে মন্ত্রীসভার সদস্য হয়েও তিনি এজন্য ব্যক্তিগতভাবে নরেন্দ্র মোদী এবং মোদী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অবাক ব্যাপার, আরও রাতের দিকে অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রী প্যাটেল এই পোস্ট এক্স হ্যান্ডেল থেকে তুলে নেন!
বস্তুত, রীতি ভাঙাই অভ্যাস করে ফেলেছে মোদী সরকার। মহিলা সংরক্ষণ বিল  আনা হচ্ছে তা সরকারিভাবে জানানো হলো না কেন? অথচ মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত জানানোর রেওয়াজ চিরকালের। সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়ে রাতের দিকে নানা সূত্র মারফত সরকার যে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনতে চলেছে তা ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমগুলিও সেই সূত্র ধরে খবর করে। একজন মন্ত্রীই বা কীভাবে সরকারি ঘোষণা ছাড়া সমাজমাধ্যমে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। তাহলে কি ওই মন্ত্রীকে দিয়েই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হলো যা বিজেপি’র চিরকালের কায়দা। আবার বিল পেশ হলেও বিষয়বস্তু কী থাকবে, তা নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে।
তাসত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিল যে সরকার আনতে চলেছে এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছে কংগ্রেস। তবে এনিয়ে সর্বদল বৈঠকে আলোচনা হলে ভালো হতো। একটা সর্বসম্মত ধারণা তৈরি করা সম্ভব হতো গোপনীয়তা না রেখে। পি চিদাম্বরম মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে জয় কংগ্রেসেরই। ইউপিএ আমলেই মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হয়েছিল রাজ্যসভায়।
এমনিতেও কংগ্রেস, বামপন্থীরা সহ বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে আইনসভায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে আসছে। এমনকি এদিনও কংগ্রেসের তরফে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনার দাবি জানানো হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। রাজ্যসভায় ‘৭৫ বছর ধরে সংসদের পথচলা’ সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের আরজি জানান। রীতিমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, সংসদের দু’কক্ষ মিলে এখন মাত্র ১৪ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি রয়েছেন। রাজ্য বিধানসভাগুলিতে সবমিলিয়ে মহিলা প্রতিনিধিদের হার মাত্র ১০ শতাংশ। সেই তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে এই হার যথাক্রমে ২৮ ও ৩৩ শতাংশ। মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে দাবি জানান জনতা দল (ইউ)-র রামনাথ ঠাকুর, এনসিপি’র সুপ্রিয়া সুলেও।
আবার ওদিকে, কেন বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল আলোচনার তালিকায় রাখা হলো না, তা নিয়েও চর্চা চলছে। বিরোধীরা একযোগে জানিয়ে দিয়েছিল, ওই বিল আনা হলে তারা তীব্র বিরোধিতা করবে। তাহলে বিরোধীদের চাপে কি সরকার মত বদল করল? কেননা, বিরোধীরা বিলের বিষয়বস্তু নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, ওই সংশোধনী বিলে এমন কিছু বিষয় রাখা আছে তা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী। ওইদিন সর্বদল বৈঠক শেষে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও এবিষয়ে একটি বাক্যও খরচ করেননি। সাংবাদিক প্রশ্ন করলে উলটে জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘আমি যা বলতে এসেছি, তাই বলেছি।’’ এদিন অবশ্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার এখন নাকি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত সংশোধনী বিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে। সরকার যদি বিবেচনাই করবে তাহলে গত বুধবার বেশ রাতের দিকে নির্বাচন কমিশনার সংক্রান্ত সংশোধনী বিল আনা হতে চলেছে বলে বুলেটিন প্রকাশ করা হলো কেন? আসলে বিশেষ অধিবেশন ডাকাকে ঘিরে প্রথম থেকেই বিভ্রান্তি এবং রহস্য বজায় রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার। আবার সর্বদল বৈঠকে সাংসদদের মধ্যে বিলি করা তালিকায় তার উল্লেখ নেই। কেন এই ধরনের লুকোচুরি, প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল গত ১০ আগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনে রাজ্যসভায় পেশ করেছিলেন আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল। এরপরেই বিরোধীদের পাশাপাশি এন গোপালাস্বামী, ভি এস সম্পৎ এবং এস ওয়াই কুরেশির মতো কয়েকজন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নয়া বিলের বেশ কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধিতা করে চিঠিও দিয়েছেন। এখন জানা যাচ্ছে, বিতর্ক এড়াতে সরকারের একাংশও এখন বিলটি আইন ও বিচার মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর পক্ষপাতী। সম্ভবত এইসব কারণেই ঘোষণা করে দিয়েও ওই বিল নিয়ে পিছিয়ে এল সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment