MUMBAI 2023

সিনেমার মুম্বাই: অনেকেরই ফিরে আসার বছর ২০২৩

জাতীয় বিশেষ বিভাগ

সৌরভ গোস্বামী

ব্যর্থতা থেকে ফিনিক্সের মতো ঘুরে দাঁড়ানো, এমন একটি শিক্ষা যা ২০২৩ সালে দেখা গিয়েছে মুম্বাইয়ের শিল্পজগতের একাংশে। ২০২৩ সাল আক্ষরিক অর্থেই ছিল ‘ব্লকবাস্টার ইয়ার’। একদিকে কোভিড অন্যদিকে শীর্ষ অভিনেতাদের একের পর এক ফ্লপ ছবিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সেখান থেকে কার্যত উল্কা গতিতে উত্থান। 
২০২৩ সাল শুরু হয়েছিল শাহরুখ খানের 'পাঠান' বক্স অফিসের গতি আনে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে শাহরুখের প্রথম হিট ছবি। শুধু তাই নয়, এটি বলিউডের প্রত্যাবর্তনও, বলছেন সিনেমা সমালোচকদের অনেকেই। ‘পাঠান’-এ আরও আকর্ষনীয় ছিল বলিউডের আরেক অভিনেতা সলমন খানের ক্যামিও। দুই জনপ্রিয় অভিনেতার ‘পাঠান’ আক্ষরিক অর্থেই ঝড় তোলে বক্স অফিসে। 
টানা পাঁচ বছর ধরে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বলিউডের কিং খানকে। অন্যদিকে ধর্মেন্দ্র থেকে শুরু করে তাঁর দুই ছেলে সানি ও ববির জন্যও ২০২৩ সাল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
কারিনা কাপুর খান সহ বেশ কয়েকজন অভিনেতাও ওটিটি-তে সাড়া জাগানো কিছু সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন এবং করণ জোহর সাত বছর পরে 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' দিয়ে পরিচালনার কাজে ফেরেন। ২০২৩ পরপর মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে এমন ঘটনাক্রম দেখেছে।

'জব হ্যারি মেট সেজল' এবং 'জিরো' ছবির ব্যর্থতার পর চার বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা থেকে সরে ছিলেন শাহরুখ খান। যশরাজ ব্যানারের স্পাই ওয়ার্ল্ড থেকে 'পাঠান' ছবিতে তাঁর দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন। 
এর মাত্র আট মাস পর অ্যাটলি পরিচালিত 'জওয়ান' ছবির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি টাকা আয়ের রেকর্ড চুরমার করেন শাহরুখ। ছবিটিতে তাঁকে একটি হাই-অকটেন অ্যাকশন চরিত্রে অভিনয় করতে হয় এবং কিছু রাজনৈতিক থিমও তুলে ধরা হয়। বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহরুখ রাজকুমার হিরানির ছবি 'ডানকি' বক্স অফিসে ধীর গতিতে হলেও প্রশংসা পেয়েছে।
কে ভেবেছিল যে এই বছর কেবল বাবা ধর্মেন্দ্রকেই নয়, তাঁর দুই ছেলে সানি দেওল এবং ববি দেওলকেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে? 'রকি অর রানী কি প্রেম কাহানি' ছবির মাধ্যমে পর্দায় ফেরেন ৮০’র দশকের বলিউড কাঁপানো নায়ক বর্ষীয়ান ধর্মেন্দ্র। করণ জোহর পরিচালিত এই ছবিতে শাবানা আজমির সঙ্গে পর্দায় রোমান্স করে সবাইকে চমকে দেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। এই সিনেমার রেশ কাটতে না কাটতেই, বড় ছেলে সানি দেওল 'গদর' এর সিক্যুয়েলের মাধ্যমে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করেন। ছবিটি বক্স অফিসে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সানিকে আরও একবার বলিউডের মানচিত্রে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আর এ মাসের শুরুতে ববি দেওল 'অ্যানিম্যাল' ছবির মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলেন। তার পাওয়ার প্যাকড অ্যাকশন দৃশ্য থেকে শুরু করে তার নাচের গান 'জামাল কুডু', অভিনেতা প্রমাণ করেছেন কেন ’৯০-এর দশকে তাঁকে 'লর্ড ববি' বলে ডাকা হতো।
ইন্ডাস্ট্রিতে কুড়ি বছর কাজ করার পরেও কারিনা কাপুর খানকে এখনও 'কাভি খুশি কাভি গম' ছবির 'পু' এবং 'জব উই মেট'-এর গানের নায়িকা হিসেবে মনে করা হয়। যদিও প্রায়শই এই ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন তিনি এবং ২০২৩  তাঁকে সেই সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছে। সুজয় ঘোষের 'জানে জান' ছবিতে সিঙ্গেল মাদার চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন কারিনা। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত এবং এফটিআইআই-প্রশিক্ষিত বিজয় ভার্মা এবং জয়দীপ আহলাওয়াতের বিপরীতে এই অভিনেতা সাবলীল অভিনয় উপহার দেন দর্শকদের। 
তিনি হানসল মেহতা পরিচালিত 'দ্য বাকিংহাম মার্ডারস' ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন এবং সহ-প্রযোজনা করেছিলেন, যা সম্প্রতি বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রিমিয়ার হয়েছিল। কারিনা কাপুর খানের মতো, ৯০-এর দশকের বলিউডের আরেক হার্টথ্রব কাজলও তার প্রতিভা এবং বয়সের সাথে মানানসই চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। আর 'দ্য ট্রায়াল' তাকে ঠিক সেই সুযোগই দিয়েছে। একজন আইনজীবীর চরিত্রে কাজল তাঁর অভিনয়ে শৈলি হাজির করেন। সুপর্ণ ভার্মা পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজে অভিনেত্রী একজন শিল্পী হিসাবে তাঁর বাধা দূর করেছিলেন এবং দর্শকদের বিস্মিত করেছেন, বলছেন সমালোচকদের অনেকেই। 
এদিকে ‘টাইগার’ সিরিজের দ্বিতীয় সিক্যুয়েল ‘টাইগার জিন্দা হে’র পরে আশানুরূপ কোনো হিট না দিতে পারলেও চলতি বছরে টাইগার সিরিজের তৃতীয় কিস্তি ‘টাইগার ৩’ নিয়ে হাজির হন বলিউডের ‘ভাইজান’ সলমন খান। যদিও দীপাবলি এবং ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ায় আশা অনুযায়ী চলেনি। কিন্তু তা সত্বেও সাড়া জাগান সলমন। 
২০২৩ সাল চলচ্চিত্র নির্দেশক করণ জোহরের জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাত বছর পর আলিয়া ভাট-রণবীর সিং অভিনীত 'রকি অর রানি কি প্রেম কাহানি' ছবির শুটিংয়ের জন্য সেটে ফেরেন পরিচালক। চলচ্চিত্রটি কেবল বক্স অফিস সংগ্রহের দিক থেকে ভাল ব্যবসাই করেনি, লিঙ্গ রাজনীতি, সমকামিতার মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করার জন্য সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সিনেমা বক্স অফিসে টাকা তুললেই তাকে ভালো সিনেমা বলা যায় না প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। সমাজের সঙ্গে সেই চলচ্চিত্রের সম্পর্ক কী, কিভাবে দেখাচ্ছে সমাজকে, জনপ্রিয় হয়েছে কেন- এমন বিবিধ প্রশ্নের বিশ্লেষণই জরুরি। সেই চর্চা স্বাভাবিক কারণেই চলছে চারপাশে, রয়েছে বিতর্কও। 

Comments :0

Login to leave a comment