AIPSO ISRAEL-PALESTINE CONFLICT

বোমায় স্কুল যেন ভাঙা না হয়, সংহতি সভায় সই খুদেরও

রাজ্য কলকাতা

AIPSO ISRAEL PALESTINE CONFLICT BENGALI NEWS সংহতি সভায় এসএফআই’র কোরাস। ছবিঃ রবীন গোলদার।

রাজাবাজারে তখন চলছে এআইপিএসও’র ডাকে প্যালেস্তাইন সংহতি দিবসের সভা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্যালেস্তাইনের জমি দখলে নেওয়ার জন্য ইজরায়েলী আগ্রাসনের চরিত্র ব্যাখ্যা করছেন রবীন দেব। মঞ্চের পাশে রাখা একটি বোর্ড। সেখানে ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমত সংগ্রহ করতে সাধারণ মানুষের সই সংগ্রহ করা হচ্ছিল। এআইপিএসও কর্মীরা পথ চলতি সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করছিলেন সই করার জন্য। কেউ সেই ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন, আবার কেউ দিচ্ছিলেন না। 

সন্ধ্যা সাতটা বাজার কিছু আগে এক মহিলা এগিয়ে এলেন সেই বোর্ডের দিকে। তাঁরসঙ্গে তাঁর পাঁচ-সাত বছর বয়সী পুত্র। মহিলা সই করলেন বোর্ডে। তারপর পুত্রের দিকে দেখিয়ে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবককে প্রশ্ন করলেন উর্দুতে, ‘‘ও সই করলে আপনাদের আপত্তি নেই তো?’’

এক স্বেচ্ছাসেবক সেই খুদেকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘তুমি সই করতে চাও কেন?’’

কিশোরের জবাব, ‘‘টিভিতে দেখেছি প্লেন থেকে বোমা ফেলে স্কুল ভেঙে দিয়েছে। মা বলেছে এখানে সই করলে আর স্কুল ভাঙা হবে না। তাই সই করব।’’

মঞ্চে দাঁড়িয়ে এআইপিএসও’র সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব তখন বলছেন, ‘‘গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলী বর্বরতা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বের চেতনাকে। প্রতিটি মহাদেশে এমন কোনও দেশ নেই যেখানে প্যালেস্তাইনের সংহতিতে আজকে মিছিল হয়নি, বিক্ষোভ হয়নি। সমষ্টি আন্দোলনের এই হল গুরুত্ব। রাজাবাজারের এই সভা সেই অর্থে একাত্ম হতে পেরেছে সারা পৃথিবীর সঙ্গে।’’

সভা চলাকালীন সমাবেশে ঢোকে এসএফআই কলকাতা জেলা কমিটির একটি মিছিল। রামমোহন হলে এদিন ছাত্রদের উদ্যোগে কলকাতা জেলার প্রাক্তন ছাত্র নেতৃত্ব মানব মুখার্জি এবং প্রদ্যোৎ করের স্মরণসভা ছিল। সভা শেষে ছাত্ররা ঠিক করেন রাজাবাজারের এই সভায় যাবেন। সমাবেশে যোগ দেন তাঁরা। 

যদিও এখানেই শেষ নয়। সমাবেশে পৌঁছে ছাত্রকর্মীদের মনে হয়, এই সংহতি সভায় গান করলে কেমন হয়? জোগাড় হয় গিটার। ‘হাম দেখেঙ্গে’ গান করে এসএফআই’র কোরাস। 

বুধবার ছিল প্যালেস্তাইন সংহতি দিবস। সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজাবাজার মোড়ে জনসভা করে এআইপিএসও বা সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা। গানে, কবিতায়, বক্তৃতায় ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিরোধিতা উঠে আসে এই সভা থেকে। 

আর সেই সভা প্রাণ খুঁজে পায় এমনই ছোট ছোট দৃশ্যের কোলাজে।

সভায় বক্তব্য রাখেন এআইপিএসও’র অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন বেরা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রতিটি দিন প্যালেস্তাইন সংহতি দিবস। এটা কেবল একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের সমস্যা নয়। প্যালেস্তাইনে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে বিশ্ব শান্তির স্বার্থে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে। একটা অংশ এটাকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, ভাগ করার রাজনীতি করছে। সেটার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। তাই প্যালেস্তাইন সংহতি আন্দোলনের সঙ্গে এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইও।’’

এই সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিলের সভাপতি পল্লব সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ভগৎ সিংকে এখনও সন্ত্রাসবাদী বলে বিজেপি। সেই বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা প্যালেস্তাইনের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্ন।’’

সভায় বক্তব্য রাখেন ফুয়াদ হালিম, সুমিত ভট্টাচার্য, রূপক মুখার্জি, রুহুল আমিন গাজী, প্রবীর দেব,  আরশাদ আলি, বিনায়ক ভট্টাচার্য, আতিফ নিসার, রুবিনা মুস্তাফা, তমোনাশ ভট্টাচার্য প্রমুখ। বক্তব্যে উঠে আসে, এদিন গোটা বিশ্বের পাশাপাশি সারা দেশে প্যালেস্তাইন সংহতি দিবস পালিত হয়েছে। রাজ্যের আরামবাগে বিশাল সংহতি মিছিল হয়েছে। এছাড়া নদীয়া, হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগণা, শিলিগুড়ি’র মত জায়গাতেও এই দিবস পালিত হয়েছে। 

সংহতি সভায় প্রস্তাব পাঠ করেন রাজীব ব্যানার্জি এবং ইবাদাত হোসেন রিজওয়ান। কবিতা আবৃত্তি করেন স্বপন দাস, শ্রীকান্ত মুখার্জি, শান্তি বসু প্রমুখ। 

সভা পরিচালনা করেন সমর চক্রবর্তী। 

 

Comments :0

Login to leave a comment