করিম মোস্তাফা বেঞ্জেমা। বর্তমান ফুটবল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার তিনি। কারণ, সম্প্রতি ব্যালন ডি’ওর জিতেছেন প্রথমবারের জন্য। গত দেড় বছরে স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন। গোল করছেন। করাচ্ছেন। কার্যত একাই রিয়াল মাদ্রিদ ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে পরিণত-শানিত হওয়ার পাশাপাশি আদর্শ টিম ম্যান হয়ে উঠেছেন। বেঞ্জেমার নিঃস্বার্থ ফুটবলের প্রশংসা বরাবর করে এসেছেন পর্তুগিজ কোচ জোসে মোরিনহো। করিম সম্পর্কে মোরিনহো বলতেন, ‘বেঞ্জেমা এমন একজন যে নিজের কথা ভাবতো না। দলের ভালোর জন্য নিজেকে উজাড় করে দিত সর্বদা।’
আট বছর পর ফের দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলবেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের সর্বাধিক গোলদাতা হওয়ার পরও রাশিয়া বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাননি। একটি বিতর্কে জড়িয়ে। গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারার আক্ষেপ তাঁর রয়ে গিয়েছে। সারাজীবন বয়েও বেরাবেন। কেন? যেহেতু তিনি বিশ্বকাপ জয়ী (ফ্রান্স) দলের সদস্য হিসাবে থাকতে না পারার আপশোস। তাই, ঠিক করেছেন কাতার বিশ্বকাপে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেবেন। নিজেও গোল করবেন, সতীর্থদের দিয়েও করাবেন। ক্লাবের ছন্দ দেশের জার্সি গায়ে দেখাতে চান। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে চান তিনি। যথেষ্ট আশাবাদী। বলছেন, ‘বিশ্বকাপে শুধুমাত্র নিজে গোল করার কথা ভাবছি না। জানি গোল করার ক্ষমতা আমার রয়েছে। সবসময় দলকে সাহায্য করার ভাবি।’ দিদিয়ের দেশঁ প্রথম একাদশেই কিলিয়ান এমবাপ্পের পাশে খেলাবেন তাঁর তুরুপের তাস বেঞ্জেমাকে। দেশের জার্সিতে ফিরে দু’জনের জুটি ও বোঝাপড়া বেশ জমে উঠেছে। একে অপরকে পাস দিতে ও ওয়াল খেলতে দেখা গিয়েছে। উদাহরণ ২০২১ নেশন্স লিগের সেমিফাইনাল-ফাইনাল। দু’জনে মিলে ডিফেন্ডারদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন। আসন্ন বিশ্বকাপেও কি নিজেদের ধারাবাহিকতা দেখাতে পারবেন ‘এম বি’ জুটি? ফ্রান্সের জার্সি গায়ে প্রত্যাবর্তনের পর বেঞ্জেমা ১৬ ম্যাচ গোল করেছেন ১০ টি।
বেঞ্জেমা নিজের আইডল জিনেদিন জিদানের মতোই আলজেরিয়ান। ফ্রান্সের হয়ে খেলেন। তাঁর খেলার সঙ্গে জিদানের খেলার মিল পান, অনেক বিশেষজ্ঞই। এমনিক রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, এই কথা একটি সাক্ষাৎকারেই বলেছিলেন। জিদানের মতোই বেঞ্জেমার ভিশন, বল কন্ট্রোল, বডি ফেন্টিংয়ে ডিফেন্ডারদের ছিটকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। বেঞ্জেমার স্তুতি শোনা গিয়েছে জিদানের গলায়। জিদান বলছেন, ‘বেঞ্জেমার বল নিয়ন্ত্রণ অবিশ্বাস্য। চোখের আরাম। সে নিজেও গোল করতে পারে, আবার সতীর্থদের দিয়েও গোল করাতে পারে।’ জিদান বেঞ্জেমার থেকে বয়সে বড় হলেও একই পরিস্থিতিতে বেড়ে হয়ে উঠেছেন দুজনে। শৈশব থেকে স্বপ্ন দেখেছেন ফুটবলার হবেন। জিদান বিশ্বকাপ জিতেছেন। ব্যালন ডি’ওর পেয়েছেন। বেঞ্জেমার ক্যাবিনেটে সদ্য ঢুকেছে সেরা ফুটবলের মুকুট পাওয়া বাকি এখন শুধু বিশ্বকাপ। সেই স্বপ্নেই বিভোর তিনি।
সেই খারাপ সময় এখন ভুলতে পারেন না বেঞ্জেমা। যখন তিনি জাতীয় দলের বাইরে। তখন জিদানকেই একমাত্র পেয়েছিলেন। বেঞ্জেমাকে জিদানই প্রেরণা দিতেন। বলতেন, ‘ফুটবল উপভোগ করো। যাতে একদিন বিশ্বকাপ জিততে পারো। এটাই আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছে।’
বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ক’দিন বাদেই ৩৫’ পা দেবেন। বয়স যে তাঁর কাছে সংখ্যা মাত্র। মন্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘বয়স আমার কাছে কোনও বাধা নয়, যদি আপনি দেখেন ত্রিশের পরই বহু ফুটবলারের জাত বোঝা গিয়েছে। আমি বাকিদের চেয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করি। মনে যদি কোন স্বপ্ন জন্মে থাকে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’
Comments :0