কাজের মেয়াদ ফুরানোর তিন বছর আগে আচমকা ইস্তফা দিয়েছেন অরুণ গোয়েল। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছাড়া আর কোনও সদস্য নেই নির্বাচন কমিশনে। সামনেই ভোট। এই অবস্থায় সবিস্তারে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। রবিবার এই দাবি তুলল সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
অষ্টাদশ লোকসভা গঠনের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে দেশে। কমিশন রাজ্যে রাজ্যে যাচ্ছে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে। তার মাঝে ইস্তফা দিয়েছেন গোয়েল। গত মাসেই তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের আরেক সদস্য অনুপ পান্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে। ফলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ছাড়া কমিশনে আর কোনও সদস্য নেই। রবিবার বিভিন্ন অংশ জানাচ্ছে যে মুখ্য নর্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতের মিল হচ্ছিল না বলেই পদ ছেড়েছেন গোয়েল।
পলিট ব্যুরো বলেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে নিয়েছেন। সাধারণ নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কমিশনের সদস্য কারা হবে তা এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে কেন্দ্রের সরকারের ওপর। পরিস্থিতিতে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা এবং অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্পন্ন করার ক্ষমতা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
পলিট ব্যুরো বলেছে, কোন ঘটনাক্রমে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো তা ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দিতে হবে কেন্দ্রকে।
গোয়েল এ মাসের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গেও এসেছিলেন। তবে কমিশনের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন না গোয়েল। শুক্রবার নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে। সাধারণ নির্বাচন ছাড়াও অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, সিকিম, মহারাষ্ট্র এবং অরুণাচল প্রদেশে এ বছরই ভোট করাতে হবে কমিশনকে।
কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্বে নিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালও ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি মনে করিয়েছেন যে ২০১৯’র নির্বাচনের পর্বে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র নোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার দায়ে। তাঁর পরিবারকে এরপরই কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের মুখে পড়তে হয়। লাভাসাকে সরে যেতে হয়। বেণুগোপাল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকছে না।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংসদে আইন পাশ করিয়ে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে নেওয়া হয়। আগে সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করতেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই পদ্ধতি পালটে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্যানেল গড়ে দেয়। এই প্যানেলকে নাম চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেয় আদালত।
কেন্দ্র এই রায় বদলে দিতে আইন পাশ করে। এখন নিয়ম হলো কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্যানেল সম্ভাব্য নামের তালিকা তৈরি করবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রী, তাঁরই মন্ত্রীসভার কোনও সদস্য এবং বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে তৈরি প্যানেল। এখানে নির্ণায়ক গরিষ্ঠতা সরকারের। কিন্তু তবু অনুপ পান্ডের অবসরের এক মাস পরও নতুন নিয়োগ হলো না সেই প্রশ্নও রয়েছে।
শনিবার ইস্তফার আগে অরুণ গোয়েল আলোচনার কেন্দ্রের এসেছিলেন নিয়োগের সময়েও। ২০২২’র নভেম্বরে স্বেচ্ছামূলক অবসরের পরদিনই এই আইএএস আধিকারিককে নির্বাচন কমিশনার করা হয়। এই অস্বাভাবিক দ্রুততায় প্রশ্ন তুলেছিল সুপ্রিম কোর্টও।
Comments :0