২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য ১০০ দিনের কাজ বা রেগার রাজ্যওয়াড়ি মজুরির তালিকা প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের গ্যাজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছে রেগার মজুরি। গত বছরের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে রেগার মজুরি বেড়েছে মাত্র ১৩ টাকা।
বৃহস্পতিবারের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারা দেশে গত আর্থিক বছরের তুলনায় নামমাত্র হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মজুরি। মজুরি বৃদ্ধির হার ৪ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। হরিয়ানার ক্ষেত্রে দৈনিক মজুরির পরিমাণ দেশে সর্বোচ্চ, ৩৭৪ টাকা। অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের ক্ষেত্রে মজুরি বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২৩৪ টাকায়, যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। সিকিমের ক্ষেত্রে মজুরি ২৪৯ টাকায় বেঁধে দেওয়া হলেও, নাথাং, লাচেন এবং লাচুংয়ের মত দুর্গম এলাকায় ৩৭৪ টাকা মজুরি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে গত আর্থিক বছরের তুলনায় মাত্র ১৩ টাকা মজুরি বাড়ানো হয়েছে। নতুন মজুরি বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা। গোটা দেশের নিরিখে সবথেকে কম মজুরি বেড়েছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ডে। এই দুই রাজ্যে মাত্র ৭ টাকা করে মজুরি বেড়েছে। নতুন মজুরি মাত্র ২৩৭ টাকা।
মজুরির তালিকা সামনে আসার পরে এর বিরুদ্ধে জোরালো ভাবে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন ‘‘ বৃহস্পতিবার মোদী সরকার রেগার মজুরির তালিকা প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কিনা, আমরা সেই বিতর্কে যাচ্ছিনা, কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যের ক্ষেত্রেই মজুরি চারশো টাকার কম। কংগ্রেসের তরফে শ্রমিক ন্যায় সংকল্প পত্রে রেগার ন্যূনতম মজুরি ৪০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’’
কংগ্রেস বলেছে, দেশজুড়ে মজুরি অসাম্য ও মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় কম মজুরি পাওয়ার সঙ্কট থেকে দেশের শ্রমিকদের মুক্তি দেওয়ার জন্য শ্রমিক ন্যায় গ্যারান্টি আনা হয়েছে। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার তৈরি হলে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে চারশো টাকা করা হবে। এর পাশাপাশি মোদী সরকারের আনা শ্রমকোডকে নতুন করে খতিয়ে দেখে, শ্রমিক বান্ধব সংশোধনী আনা হবে।
চলতি বছরের গোড়ায় গ্রামনোন্নয়নের উপর গঠিত লোকসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে দেশে রেগার মজুরির করুণ চিত্র উঠে আসে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির হার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রেগার মজুরি পুনঃবিন্যাসের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অনুপ সতপথী কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিও বলেছিল, রেগার মজুরি অত্যন্ত কম। সেই কমিটি গোটা দেশের মজুরি ন্যূনতম ৩৭৫ টাকা করার সুপারিশ করে। কিন্তু নিজেদের তৈরি কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করল মোদী সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বছরে ১০০ দিনের কাজের কথা বলা হলেও, অধিকাংশ জায়গায় গড়ে ২০-৩০ দিনের বেশি কাজ মেলেনা। পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে রেগায় ঢালাও দুর্নীতি হয়েছে। এরমধ্যে সরকার যদি বেঁচে থাকার মত পর্যাপ্ত মজুরি না দেয়, তবে রেগা প্রকল্প অর্থহীন হয়ে পড়ে।
অপর একটি অংশের বক্তব্য, আদর্শগত ভাবে বিজেপি বামপন্থীদের উদ্যোগে প্রথম ইউপিএ সরকারের চালু করা এই প্রকল্পের ঘোর বিরোধী। কিন্তু সরাসরি এই প্রকল্পে ইতি টানার সাহস মোদী সরকারের নেই। তাই বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে, কিংবা নামমাত্র মজুরি বৃদ্ধি করে গ্রাম ভারতের জনতার কাছে রেগার জনপ্রিয়তা কমানোই মোদী সরকারের মূল লক্ষ্য। যাতে কর্মহীন গ্রামীণ মানুষ বাধ্য হন জলের দরে বেসরকারি সংস্থায় শ্রমদান করতে।
Comments :0