সঞ্জিত দে
শারদোৎসবের আগে শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় তিনটি চা বাগান। ২৪ ঘন্টা কাটনে না কাটতে শনিবার ফের বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার চামুর্চি চা বাগান। দুই দিনে কাজ হারালেন প্রায় সাড়ে চার হাজার চা শ্রমিক। মহালয়ার সুরে ভোর হতেই বিষাদের সুর। ক্ষোভের চাপা ক্ষোভ ছড়িয়ে পরলো ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার চামুর্চি এগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড পরিচালিত চামুর্চি টি এস্টেটের চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। ভুটান পাহাড়ের নিচে সীমান্তের গেটের গা জড়িয়ে থাকা ১০৭৪ জন স্থায়ী চা শ্রমিক ডুবে গেলেন ঘোর অনিশ্চিত অন্ধকারে। শনিবার সকাল হতেই দলে দলে মহিলা পুরুষ চা শ্রমিকরা আসেন রুটিন মেনে কাজে যোগ দিতে। এসে দেখেন কারখানার গেট বন্ধ। বিরাট তালা ঝুলছে। গেটেই লটকানো সাসপেনশন ওয়ার্কের। নিমেষের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে সব মহল্লায়। সকলে ছুটে এসে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পরেন। বাগানের অফিসে কোনো বাবু স্টাফ নেই। ম্যানেজার সহকারি ম্যানেজার তাদের বাংলোও ফাঁকা। খোঁজ করে জানা গেল শুক্রবার রাত দশটার পরে নোটিশ ঝুলিয়ে ম্যানেজার সহ অনান্য অফিস কর্মী এবং তাদের পরিবার বাংলো ছেড়ে চলে গেছেন। খবর পেয়েই জয়েন্ট ফোরামের বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিক নেতৃত্ব চলে আসেন। বাগানের ফ্যাক্টরি এবং অফিস বন্ধ থাকায় শ্রমিক নেতৃত্ব সহ সমস্ত শ্রমিক চলে আসেন চামুর্চি পুলিশ ফাঁড়িতে। দীর্ঘ সময় ধরে ফাঁড়ির সামনে জয়েন্ট ফোরামের নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন এবং লিখিত অভিযোগ জানান। পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দীর্ঘ সময় শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলতেই থাকে। পরে জলপাইগুড়ি থেকে যুগ্ম সহকারি লেবার কমিশনের চিঠি আসে তাতে বলা হয় আগামী ১৬ অক্টোবর মালিক পক্ষকে সভায় ডাকা হয়েছে। আলোচনার আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যান।
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের রিজিওনাল কমিটির সদস্য রফিক আনসারি বলেন, চা বাগান মালিকদের সংগঠনের সাথে তিনদিন আগে শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতৃত্বের সভায় বোনাস চুক্তি হলেও এই বাগানের কতৃপক্ষ জানায় আমরা নিজেরা বাগানে শ্রমিক নেতৃত্বের সাথে বসে বোনাস চুক্তি করে নেব। এই বাগান রুগ্ন বলে আমরা সে কথা মেনে নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, গত বছর আমরা ১৭ শতাংশ হারে বোনাস পেয়েছিলাম এবার আমরা কমিয়ে ১৫ শতাংশ চেয়েছি। শুক্রবার ম্যানেজার হঠাৎ আমাদের সাথে বসতে চায়। আমরা জানাই আমাদের লিখিত চিঠি দিতে হবে এবং আমরা সব শ্রমিককে নিয়ে সভা করে আলোচনায় বসব। সেই কথামতো শনিবার সকালে আমরা গেট সভা করব। তার আগে রাতেই তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেল। আমাদের কথা বাগান চালু রাখতে হবে কারো পেটের ভাত হাতের কাজ কেড়ে নেওয়া যাবেনা। বানারহাটে চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের রিজিওনাল সম্পাদক নারায়ন রাজগড় বলেন, বাগানের পরিস্থিতি জানেন বলেই শ্রমিকরা গত বছর থেকে এবার বোনাস কম চেয়েছেন। তবুও মালিক পক্ষ এভাবে বাগান ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত হয়নি। আমরা প্রশাসন এবং শ্রমদপ্তরের কাছে দাবি করছি দ্রুত মালিকপক্ষকে সভায় নিয়ে এসে আলোচনা করে বাগান খুলতে এবং বোনাস দিতে বাধ্য করবে না হলে শ্রমিকরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
শুক্রবার ডুয়ার্সের এই দু’টি বাগান বন্ধ করে দেন মালিকরা। বৃহস্পতিবার রাতেই বাগান ছেড়ে চলে যান বাগানের পরিচালকরা। বোনাস পাওয়া তো দূরের কথা, শারদোৎসবের আগে কাজ হারালেন প্রায় ২৩০০ শ্রমিক।
গরাকাটা ব্লকের নয়া সাইলি চা বাগানে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা থেকে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করে বাগান নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বলা হয় ১৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা কর্তৃপক্ষ দিত অক্ষম। নিরাপত্তার কারনে ম্যানেজেরিয়াল কর্মী প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের মুজনাই চা বাগানও বন্ধও হয়েছে। সেখানে ৯৯৯ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন। বোনাসের দাবিতে সরব হয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকরা। ‘সাসপেন্স অফ ওয়ার্ক’ নোটিশ ঝুলিয়ে বেপাত্তা মালি। শুক্রবার ভোরে ম্যানেজার অনিন্দ্য বাগচী ‘সাসপেন্স অফ ওয়ার্ক’ নোটিশ ঝুলিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যায়। বোনাসের আন্দোলনে জয়ী হয় চা বাগান শ্রকিকরা। তারপরেই বাগান ব্ন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে।
Comments :0