Child Death

ফের বোমা বিস্ফোরণ মুর্শিদাবাদে, মৃত্যু দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার

রাজ্য

ফের তাজা বোমা বিস্ফোরণ, ফের বিপন্ন শৈশব। এবার মুর্শিদাবাদের এক প্রাইমারি স্কুলের পাশেই পুকুরে রাখা বোমা ফেটে মৃত্যু হল দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের। বৃহস্পতিবার দুপুরে দৌলতাবাদ থানার চোঁয়াডাঙ্গা গ্রামে বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটে। স্কুল থেকে দেড়শো মিটারের মধ্যেই ঘটে বিস্ফোরণ। মৃতের নাম মুকলেসুর রহমান(৭)। ওই শিশু চোঁয়াডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে টিফিনের সময় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়ার। এদিন দুপুরে স্কুলে টিফিনের পর স্কুলের পাশেই খেলছিল মুকলেসুর। স্কুলের পাশেই রয়েছে একটি শুকিয়ে যাওয়া পুকুর। ওই পুকুরেই পড়ে ছিল বোমা। খেলতে খেলতে সেই পুকুরেই নেমেছিল ওই শিশু। কুড়িয়ে পাওয়া বোমা বল ভেবে পুকুর থেকে তুলে একটি দেওয়ালে ছুড়ে মারে । এতেই গুরুতর আহত হয় সে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। গুরুতর আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
চোঁয়াডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিঠুন মণ্ডল জানিয়েছেন, “ স্কুলে সেই সময় টিফিনের ব্রেক চলছিল। বাচ্চারা বাইরে সবাই খেলতে ব্যস্ত। টিফিন পিরিয়ড শেষে ক্লাসে ফেরত আসার সময় হটাৎ একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম বাচ্চাটি একদম রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে”।  তবে কে বা কারা রাস্তার পাশে বোমা রেখেছিল তা খতিয়ে দেখছে দৌলতাবাদ থানার পুলিশ। ঘটনা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওই শিশুর মা। কেন গ্রামে ছড়িয়ে থাকবে বোমা ? প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ মানুষ। ছেলেকে ফেরত চেওয়ার কাতর আর্তনাদে ভেঙে পড়েছেন নিহত শিশুর মা। শিশুর বাবা হাসিবুল সেখ পেশায় প্রান্তিক কৃষক। বাড়ির ছোটছেলেকে হারিয়ে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে ওই পরিবারের। 
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, যে পঞ্চায়েতে এই বিস্ফোরণ হয়েছে সেই পঞ্চায়েত দখল করতে মরিয়া ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমার পর থেকেই গ্রামজুড়ে চলেছে ব্যাপক বোমাবাজি। বোমা আর সমাজবিরোধীদের জোরেই পঞ্চায়েত দখল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গ্রামবাসীদের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ধরলেই বোঝা যাবে কারা ওই বোমা রেখেছিল।
তবে স্কুলের পাশেই বিস্ফোরণ নতুন নয় মুর্শিদাবাদ জেলায়।  ১৩ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদেরই  ডোমকলে বোমা বিস্ফোরণে হয়েছিল দুই শিশু। ডোমকল থানার জুড়ানপুরের  কুশাবাড়িয়া গ্রাম ঘটেছিল সেই ঘটনা। দুই শিশুর এক জনের বয়স ৮ ও অন্য জনের বয়স ১১। কুশাবাড়িয়া গ্রামে  এক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাশেই  রাখা ছিল বোমা। খেলার বল ভেবে বোমায় হাত দেয় এক শিশু। সেই সময়েই বিস্ফোরণ ঘটে৷  এই বছরই ২২ নভেম্বর ফারাক্কায় আইসিডিএস কেন্দ্রে খিচুড়ি  খেতে গিয়ে বোমায় আহত হয়  তিন শিশু। সেখানেও আইসিডিএস সেন্টারের পাশে রাখা ছিল বোমা। শাসক দলের ছত্র ছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীদের তান্ডব অব্যাহত রাজ্যে। তাজা বোমা মিলছে যেখান সেখানে। মজুত বোমায় বিস্ফোরণও হচ্ছে। বিপন্ন শৈশব। পরপর ঘটনায় শিশুদের মৃত্যুরও খবর মিলছে নিয়মিত। গ্রামের মানুষের প্রশ্ন বোমা উদ্ধারে কতটা সতর্ক পুলিশ, কতটাই বা কড়াকড়ি? দুষ্কৃতীরা কতটা বেপরোয়া হলে স্কুলের খেলার মাঠে রেখে আসতে পারে বোমা। রাজ্যের একাধিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা থেকে কার্যত কোন শিক্ষাই নেয় নি প্রশাসন। যদিও প্রতিদিন মিলছে বিভিন্ন থানা থেকে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র  উদ্ধারের খবর।
ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)। সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা বলেছেন, “থানার ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্য অস্ত্র উদ্ধারের নামে প্রতিদিন নাটক হচ্ছে। গ্রামে দুষ্কৃতীরা স্কুলের পাশে, পথে ঘাটে বোমা রেখে দিচ্ছে। প্রশাসনের নজর নেই। অপরাধীরা বেপরোয়া”।

Comments :0

Login to leave a comment