PANCHAYAT WATCH-TUFANGANJ

‘বাংলার চেরাপুঞ্জি’র চরে এবার জোর টক্কর

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়: তুফানগঞ্জ, 
 

জোর লড়াই বালাভূত অঞ্চলে। নদী ঘেরা বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতে লাল নিশানের লম্বা মিছিল শাসক দলের চিন্তার কারণ। গ্রামীণ মানুষের দৃপ্ত প্রতিরোধের সামনে সন্ত্রাসের রাজনীতি এখানে এসে অনেকটা থমকে গেছে।  

তুফানগঞ্জের চিমটা মোড় থেকে নাককাটি হয়ে বালাভূত। কালজানি, রায়ডাক, ঘরঘড়ি, বুড়া ও তোর্ষা নদী ঘেরা তিন চরে বাস করেন মূলত সংখ্যালঘুর মানুষরা। এক পাশে আসামের ধুবড়ি জেলা, অন্য পাশে বাংলাদেশের রংপুর। এর মাঝে নদী ঘিরে রেখেছে বালাভূতের তিনটি চর। 

চর বালাভূত, নয়ার চর এবং মধ্য চর। ‘বাংলার চেরাপুঞ্জি’ বলে খ্যাত বালাভূতেই রাজ্যের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়। চিমটা মোড় থেকে সড়ক পথে মধ্য চরে আসাটা যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন চর বালাভূতে যাওয়া। পার হতে হয় ভয়ঙ্কর কালজানি নদী। 


কালজানি তীব্র। প্রবল। চরে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধও কিছুটা কালজানির মতই।

নৌকায় চর বালাভূত থেকে এপারের মধ্য চরে আসতে গেলে গ্রামবাসীদের আধার কার্ড জমা রাখতে হয় নদী ঘাটে। সেখানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আউট পোস্ট। কাজকর্ম সেরে ফের চর বালাভূতে ফেরার সময় তা ফেরত দেয় বিএসএফ। বাজার নিতে ওপার থেকে এপারে নৌকা ঘাটে নামার সঙ্গে সঙ্গে আউট পোস্টে জানাতে হবে বাজার থেকে ঠিক কী কী নিয়ে যাওয়া হবে ওপারে।   

বিএসএফের খাতায় আগে থেকে লেখা জিনিসের পরিমাণে উনিশ-বিশ হলে তা চর বালাভূতে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সেখান থেকে আসা-যাওয়া করা যায়। অসুস্থতার কারণ ছাড়া ওই সময়ের পর খেয়া পারাপার বন্ধ। এখানে বিএসএফের কথাই শেষ। কিছু হলেই লিখিত অনুমতিপত্র দেখাতে হবে মহকুমা শাসকের। দৈনিক বিভ্রাটের মধ্যে চলতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের।

ওপারের চর বালাভূতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূখণ্ড মিশে রয়েছে। রংপুরের কুড়িগ্রামের সঙ্গে ওপারের চরের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ। সেখানে নেই কোনও কাঁটাতারের বেড়া কিংবা সীমান্ত প্রহরা। তাই এপার থেকে ওপারে যাওয়াটা বেশ কঠিন। চর বালাভূতে রয়েছে চারটি গ্রাম। কেল্লাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, বুড়ির ঝাঁক, নামাচর গ্রাম। চার গ্রাম মিলিয়ে এখানে রয়েছেন দুইজন পঞ্চায়েত প্রার্থী। তিন চর মিলিয়ে বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েত। 

তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত এই পঞ্চায়েতেই এবার জোর লড়াই। বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে এবার রয়েছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী। দুর্গমতম চর বালাভূতে রয়েছেন সিপিআই(এম)’র দুই পঞ্চায়েত প্রার্থী। ভোটে দাঁড়িয়ে এবার রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন কেল্লাবাড়ির বাসিন্দা গোলাম সোভান মিঞা আর বড়াইবাড়ির বাসিন্দা সকিনা বিবি। ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির এবারের প্রার্থী ওই এলাকার মিজানুর রহমান।


মধ্য বালাভূতে এবারে পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম)’র প্রার্থী হয়েছেন সাহেরা বিবি। তুফানগঞ্জ সংলগ্ন ধলপল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষক, পার্টিনেতা অসীম সাহা লাগাতার এলাকার মানুষদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে যখন শাসক দল সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা করেছে, সেখানেই পার্টির প্রচার মিছিলে মানুষের ঢল নেমেছে।

সকলের একটাই লক্ষ্য যেকোন উপায়ে লোভী, স্বার্থপর, লুটতরাজ চালানো শাসক দলের প্রার্থীদের হারানো। সেই লক্ষ্যে চলছে প্রচার অভিযান। চর বালাভূতে রবিবার রাতে শাসক দলের ভাড়াটে দুষ্কৃতী হানা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আনা হয়েছে তাদের। চর বালাভূতের গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক ছড়াতে সোমবার থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন গ্রামবাসীরা। 


গত পাঁচ বছরে বালাভূত এলাকার এতটুকু কোনও পরিবর্তন হয়নি। বালাভূত বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয় এবং বালাভূত উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক প্রায় নেই-ই। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে কোনমতে সেখানে চলছে পঠনপাঠন। মধ্য চরে বালাভূত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ। সেখানে একসময় শুধু চিকিৎসা নয়, ছিল রোগী ভর্তির ব্যবস্থা। এখন সেখানে কলাচাষ হচ্ছে। 

রাস্তাঘাটের সমস্যার সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য-শিক্ষা এখানে চরম উপেক্ষিত। করোনা লকডাউন একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে ওইসব মানুষকে। তার ওপর চলছে নায্য পাওনা নিয়ে রাজনীতি। এবার তাই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

Comments :0

Login to leave a comment