Mohammad Salim rally in maldah

নভেম্বরে হাওয়া, ডিসেম্বরেই রাজ্যে ঝড় উঠবে লাল ঝাণ্ডার: সেলিম

রাজ্য

গ্রাম জাগছে এবং এককাট্টা হয়ে কীভাবে তৃণমূল-বিজেপি’কে হঠাতে হবে, তা গ্রামের মানুষ নিজেরাই দেখিয়ে দিচ্ছেন— বললেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সোমবার মালদহের রতুয়ায় শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে সিপিআই(এম)’র ডাকা এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, গ্রাম বাঁচানোর লড়াই শুরু হয়েছে। মানুষ যত এককাট্টা হচ্ছেন, চোরের মনে তত ভয় বাড়ছে। নভেম্বর মাসে গ্রামে গ্রামে যে হাওয়া দেখছেন, ডিসেম্বরে তা ঝড়ে পরিণত হবে। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে সেই ঝড়ে তৃণমূল উড়ে চলে যাবে। হকের জন্য, ইনসাফের জন্য সিপিআই(এম) লড়াই করছে। যে মানুষের অধিকার লুট হবে, যাঁদের উপরে অন্যায় হবে, তাদের পাশেই লাল ঝান্ডা থাকবে। 


সেলিম বলেছেন, রাজ্য জুড়ে যখন পদযাত্রায় লাল ঝান্ডার স্রোত বইতে শুরু করেছে, তখন তৃণমূল এবং বিজেপি’র দিশাহীন অবস্থা। পুলিশকে বাদ দিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতার রাস্তায় চলার ক্ষমতা নেই। দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল গত তিন মাসে নিজেদের দলের ঝান্ডা লাগিয়ে কোনও মিটিং করতে পারেনি। সরকারি টাকায় পুজোর কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন। ঠাকুর-দেবতার ছবি ছাড়া উনি ভাষণ দিতে পারছেন না। এভাবেই শুরুতে হিজাব পড়ে মঞ্চে উঠেছিলেন ফেরেস্তা সেজে। হাদিসে লেখা আছে, মানুষকে ধোঁকা দিতে শয়তানও ফেরেস্তা সেজে আসে। 


রতুয়ার শ্রীপুরের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে সেলিম বলেছেন, ‘‘এখানকার জিএস মাদ্রাসায় আপনারা তৃণমূলকে পরাজিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন, পুলিশের জুলুম এবং তৃণমূলের মস্তানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কীভাবে জবাব দিতে হয়। রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মানুষ এভাবেই জাগছেন। তাঁরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, এককাট্টা হলে তৃণমূল, বিজেপি এবং পুলিশ এক হয়েও কিছু করতে পারবে না।’’ 


এদিনই সকালে মানিকচকের নূরপুরের শ্যামলালপাড়ায় পদযাত্রায় অংশ নেন মহম্মদ সেলিম সহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। এখানে পদযাত্রা শুরুর আগে শতাধিক তৃণমূল সমর্থক লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে বামপন্থী আন্দোলনের প্রতি তাঁদের সমর্থন ঘোষণা করেন। ৫ কিলোমিটার পদযাত্রা ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ ছিল লক্ষ্যনীয়। পথের দু’ধারে মহিলারা দাঁড়িয়ে পদযাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন ফুল ছুঁড়ে।

পদযাত্রা নূরপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন মহম্মদ সাহিমুদ্দিন। সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র সভায় বলেন, আজ নূরপুরের মানুষ লাল ঝান্ডার স্রোত দেখলেন, যা আগামী দিনে পার্টির কর্মীদের ভরসা জোগাবে ও উৎসাহিত করবে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশাসনের সহায়তায় এখানে ভোট লুট করেছিলেন। কিন্তু আজকের লাল ঝান্ডার মিছিল বুঝিয়ে দিচ্ছে, এবার আর মানুষ লুট করতে দেবেন না। তার জন্য লাল ঝান্ডার ডান্ডাকেও শক্ত হাতে ধরতে হবে। সভায় ভাষণ দেন সিপিআই(এম) নেতা শতরূপ ঘোষ‌, দেবজ্যোতি সিনহা এবং মোজাফফর হোসেনও।


রতুয়ার শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ডে সিপিআই(এম)’র সমাবেশে সেলিম বলেছেন, গ্রামে গ্রামে মানুষ বলছেন, চোর তাড়াও। চোর ধরা পুলিশের কাজ, কিন্তু এখন পুলিশ চোরদের পাহারা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে চোরদের কথায়। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদেরও পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যে পুলিশ অফিসাররা তৃণমূলের কথায় মিথ্যা মামলা দায়ের করছেন, আদালতে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবিধান না মেনে কেউ শাসকের দালালি করলে ছাড় পাবেন না। 


তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে সাজানো যুদ্ধে বিভ্রান্ত না হওয়ার আবেদন জানিয়ে সেলিম বলেছেন, মমতা ব্যানার্জি এরাজ্যে বিজেপি’কে আটকাচ্ছে? জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে বিজেপি মাথা তুলতে পারেনি। এখন এত বিজেপি এল কোথা থেকে? আরে বিরোধী দলনেতা কে? এই শুভেন্দু অধিকারী তো তৃণমূলের হয়েই মানুষের প্রাণ কেড়েছিলেন, মমতা ব্যানার্জির জন্য টাকা জোগাড় করেছিলেন, কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলে নেতা নিয়ে এসেছিলেন। মুকুল রায় কাদের লোক? একটা কোম্পানির শো রুমে আরেকটা কোম্পানির মাল বিক্রি হচ্ছে। আরএসএস টাকা দিয়ে তৃণমূলের শোরুমে বিজেপি’র প্রোডাক্ট বিক্রি করছে। এভাবেই আড়ালে আবডালে বিজেপি’র মসনদ তৈরি করছেন মমতা ব্যানার্জি। 


তিনি বলেন, বিজেপি এবং তৃণমূল হলো জঞ্জাল-আবর্জনা কুড়িয়ে জড়ো করা দল। বামপন্থীদের তৃণমূলের গোয়াল থেকে গরু আনতে হয় না, বিজেপি’র খাটাল থেকে ছাগল নিয়ে আসতে হয় না। তৃণমূল-বিজেপি’তে দেখুন, খালি এদিক থেকে ওদিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুকুল রায়, বাবুল সুপ্রিয়, অর্জুন সিংদের দেখুন। তৃণমূলটা আসলে একটা টেম্পোরারি পার্টি, কেউ স্থায়ী নয়। ওদের সব নেতা ঠিকায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম)’র নির্দিষ্ট একটা আদর্শ আছে, একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হয় আমাদের। ঝড়-দুর্যোগ যা-ই হোক, আমরা লক্ষ্যচ্যুত হই না।’’


চুরি, দুর্নীতি, জনজীবনের উপরে আক্রমণ— সব কিছুর বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম সবাইকে একজোট হয়ে লড়ার আবেদন জানিয়ে সেলিম বলেছেন, স্কুলে শিক্ষক নেই, মাদ্রাসাতেও নেই। দুই জায়গাতেই নিয়োগে দুর্নীতি। অথচ বিজেপি স্কুল আর মাদ্রাসাকে আলাদা করে দেখাতে চাইছে, মন্দির-মসজিদের নামে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। ঘরে ঘরে সার্ভের নাম করে মমতা ব্যানার্জি এনপিআর করাচ্ছেন। ভাইপো আর ভাইপোর বউকে বাঁচাতে মোদীর সব কথা মেনে চলছেন। উত্তরবঙ্গকে ভাঙতেও রাজি হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এত সহজে বাংলার মানুষ মাথা নোয়াবেন না। 
শ্রীপুরের সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম)’র এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্তল চ্যাটার্জি। সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র সভায় বলেছেন, ওই মাদ্রাসার নির্বাচনে মালতিপুরের তৃণমূল বিধায়কের ছেলে ভোটার না হয়েও মাদ্রাসায় ঢুকে ভোট লুটের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এলাকার মানুষ লুটেরাদের তাড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর বরদাস্ত করা হবে না। 

সিপিআই(এম) নেতা শতরূপ ঘোষ‌ বলেন, এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে। শুধু তা নয়, এর জন্য মালদহ জেলাকে ২৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে নীরব। ১০০ দিনের কাজে টাকা দিতে না পারলেও খেলা-মেলা-উৎসবে টাকার অভাব হচ্ছে না। হিম্মৎ থাকলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে তিনি শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। সভায় পার্টির নেতা জমিল ফিরদৌস বলেন, তৃণমূল আর বিজেপি’র লুটতরাজ আর চলবে না। এলাকার মানুষ মাদ্রাসার নির্বাচনে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment