Kharisa

দশবার জয়, তৃণমূল-বিজেপি মিলেও হারাতে পারেনি খড়িশাকে

রাজ্য

রামশঙ্কর চক্রবর্তী: তমলুক, 
 

খাড়িশায় সিপিআই(এম) এবারও জিতেছে। এই নিয়ে দশবার। 
কোলাঘাট ব্লকের কোলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাড়িশা গ্রাম। সাজানো গোছানো পরিছন্ন একটি গ্রাম। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে পার্ক, খেলার মাঠ, উন্নত পরিকাঠামোর প্রাথমিক বিদ্যালয় রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে বনসৃজন প্রকল্পে লাগানো গাছ, পাকা রাস্তা। সারা রাজ্যের মধ্যেই যেন দৃষ্টান্ত এই গ্রাম। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটানা সিপিআই(এম)'র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কেন একটানা সিপিআই(এম)'র প্রার্থীরাই জয়ী হচ্ছেন? খাড়িশা ব্রিজ থেকে কোলাঘাট পর্যন্ত পথশ্রী প্রকল্পের একটি রাস্তা হয়েছে। এই প্রকল্পের রাস্তাগুলি মূলত জেলা পরিষদের মাধ্যমেই হয়। তত্ত্বাবধানে শাসক তার নিজেদের লোকেদেরই রাখে। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম। এই রাস্তার কাজে তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিপিআই(এম)'র বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য প্রশান্ত সানকি। প্রশান্ত সানকি জানান,‘‘তৃণমূলের লোকজনই আমাকে বলল আপনি দায়িত্ব নিয়ে রাস্তার কাজটা করুন। আপনার ওপর ভরসা আছে।’’ 
টিউবওয়েল থেকে ৩০টি স্বসহায়ক দল— অনেক উন্নয়নের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে এই গ্রামে। আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা কোনোটাতেই কাটমানির গল্প শোনা যায় না এখানে। এপর্যন্ত ৩৪টি আবাস যোজনার বাড়ি হয়েছে এই এলাকায়। কাজ হয়েছে রেগারও। মানুষ সেই হিসাব জানেন।


নদী তীরবর্তী গ্রাম। মানুষের প্রধান জীবিকা ফুল চাষ এবং দিনমজুরি। চাকরিজীবী রয়েছেন তবে সংখ্যাটা কম। এক দিকে রূপনারায়ণ নদী, কোলাঘাট বাজার। অন্যদিকে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। নদী তীরবর্তী কিন্তু বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জল জমার কোনও ভয় থাকে না এখানে। কারণ নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড় খালের সঙ্গে নিকাশি খালগুলি যুক্ত রয়েছে। নিকাশি নালাগুলির সঙ্গে ছোট ছোট ড্রেনের সংযোগ রয়েছে। ফলে সহজেই জমা জল বেরিয়ে যেতে পারে। ২০২৩ সালে জয়ী হয়েছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী স্নিগ্ধা প্রামাণিক। তাঁর পাশেই ছিলেন বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য প্রশান্ত সানকি। এখানে মোট ভোটার ১১০০ এর মত। সিপিআই(এম) পেয়েছে ৫৫৪, বিজেপি ৩০৭, তৃণমূলের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১৮৪ টি। অর্থাৎ ৫০%-র ভোট পেয়েছে সিপিআই(এম)। 
স্নিগ্ধা প্রামাণিক বলেন,‘‘গ্রামে, গ্রাম সংসদ সভা নিয়মিত হয়। গ্রামের মানুষেরাই ঠিক করেন কোন কাজটি করা হবে। আর তারা যা ঠিক করে দেন তা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে জমা দেওয়া হয়। বামফ্রন্ট সরকার যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল সেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সফল রূপায়ণ এই গ্রামেই হয়েছে। আর তাই এত বছর ধরে মানুষ সিপিআই(এম)'র প্রার্থীকেই জয়ী করছে।’’ বাণিজ্য শাখায় স্নাতক ৫৮ বছরের স্নিগ্ধা প্রামাণিক যখন কথাগুলি বলছেন তাঁর পাশে বেশ কয়েকজন গ্রামের মানুষ জড়ো হয়েছেন।


১৯৭৮ সালে এই বুথে জয়ী হয়েছিলেন বংশীধর সেনা। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কোলা১ গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে ছিল। ১৯৮৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিআই(এম) পরিচালনা করেছে। কিন্তু ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের শাসনে রয়েছে। তবুও এই বুথে সিপিআই(এম) জয়ী হয়েছে।
সিপিআই(এম) নেতা রানা ভট্টাচার্য বলেন,‘‘মানুষ জানেন সারা বছর যে কোনও বিপদে আপদে কারা পাশে রয়েছে। তাঁদের সেই আস্থাই প্রতিফলিত হয়েছে দশটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে।’’ তমলুক ব্লকের পদুমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিশলয় সঙ্ঘ পাঠাগার ও আজাদ এসএসকে বুথে রিনা খাতুন এবং শেখ মুস্তফা জয়ী হয়েছে। এই দুটি বুথ আগে একটি ছিল। ১৯৭৮ থেকে একটানা সিপিআই(এম) প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছে এখানে। অন্যদিকে এই ব্লকের পিপুলবেরিয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দামোদরপুর বুথে একটানা সিপিআই(এম) প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ২০২৩ সালে সিপিআই(এম) প্রার্থী মৌসুমী চক্রবর্তী সেই ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। অন্যদিকে নন্দকুমার ব্লকের সাওড়াবেড়িয়া জালপাই ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কালাপেনিয়া বুথে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা ১৯৭৮ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে জয়ী হচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে আরতি রানি আড়ি জয়ী হয়েছেন।
এই প্রত্যেকটি এলাকায় সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে প্রায় এক হয়েই লড়াই করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। কিন্তু হারাতে পারেনি সিপিআই(এম) প্রার্থীদের।
 

Comments :0

Login to leave a comment