Doluakhaki

দলুয়াখাকির ঘটনায় ভয়াবহ ইঙ্গিত

রাজ্য উত্তর সম্পাদকীয়​

মণীন্দ্র চক্রবর্তী
 

দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুন হবার পর, সাক্ষ্য লোপাট করতে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী প্রথমে তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর লোককে পিটিয়ে মেরেছে গণরোষের নামে। তারপর, নেতা খুনের দায় বামেদের উপর চাপিয়ে দিতে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের দলুয়াখাকি গ্রামে বেছে বেছে বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের ঘরগুলোতে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নি সংযোগ করে জান্তব উল্লাস প্রকাশ করেছে স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আখ্যা দিয়ে। ঠিক যেমন করে তারা ভস্মীভূত করেছিল বগটুই গ্রামকে। সেদিন তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী লক্ষ্যবস্তু করেছিল দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়িগুলিকে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাড়িগুলিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল নিরাপরাধ মহিলা ও শিশুদের। অভিযোগ, দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশ ছিল নিস্ক্রিয়। শুধু নিস্ক্রিয় বললে কম বলা হয়, কারণ দলুয়াখাকিতে বহ্ন্যুৎসব চলেছে পুলিশের উপস্থিতিতে। ভৈরব বাহিনীর 'স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ' এতটাই তীব্র ছিল যে, দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা বাড়িগুলো দেখেও দমকল বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। বলা ভাল, পৌঁছাতে দেওয়া হয়নি। 


আসলে, 'স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ', 'জনরোষ', 'গণরোষ' প্রভৃতি শব্দগুলির এমনই মহিমা যে, অপরাধের চরিত্র যত নৃশংসই হোক না কেন, অপরাধী কিংবা আইনরক্ষক, কাউকেই সেই নৃশংসতার দায় নিতে হয় না। যে কারণে আজও সংগঠিত অপরাধকে আড়াল করার জন্য 'জনরোষ', ' স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ'র মতো তত্ত্ব আমদানি করা হয়। এবং সেই তত্ত্বকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার প্রাক শর্ত হল, অপরাধের অকুস্থলকে ঘটনার আগে থেকেই সম্পূর্ণভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া।
ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পূর্বে হিটলারের ঝটিকা বাহিনীবাহিনী ঠিক এই কাজটাই করেছিল এই নভেম্বর বিপ্লবের দিনগুলিতেই। ‘গেস্টাপো’ প্রধান হেনরিখ মুলার ৯  নভেম্বর রাতে দেশের প্রতিটি পুলিশ ইউনিটকে আগাম টেলিগ্রাম বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন অভিযানের বিষয়ে। পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বোধহয় এই ভাবেই সংঘটিত হয়। 
ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিল ১৯৩৮ সালের ২৮ অক্টোবর। জার্মানিতে বসবাসকারী পোলিশ ইহুদিদের পোল্যান্ডে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে নাৎসি জার্মানি। কিন্তু পোল্যান্ড সরকার তাঁদের ফেরত নিতে অস্বীকার করায় জার্মান সরকার প্রায় ৫০ হাজার ইহুদিকে একসঙ্গে জড়ো করে পোল্যান্ড সীমান্তে ছেড়ে দিয়ে আসে। আশ্রয় ও খাবারের অভাবে পোল্যান্ড সীমান্তে হাজার হাজার ইহুদি মারা যায়। ঘটনার সপ্তাহখানেক বাদে, ফ্রান্সে পাঠরত হার্শেল গ্রিন্সজপ্যান নামের ১৭ বছরের এক ইহুদি যুবক খবর পান, পোল্যান্ড সীমান্তের সেই নিষ্ঠুর ঘটনায় তার মা-বাবা মারা গেছেন। মা-বাবা'র হত্যার প্রতিশোধ নিতে নভেম্বরের ৭ তারিখে হার্শাল প্যারিসে নিযুক্ত জার্মান কূটনীতিক আর্নস্ট ভোম রাথকে গুলি করেন। দুই দিন পর ওই কূটনীতিক মারা যান। এই মৃত্যুর খবর হিটলারের কাছে পৌঁছালে, তার নির্দেশে প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস তৎক্ষণাৎ 'স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ' প্রদর্শনের নামে ইহুদিদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক প্রতিশোধের আহ্বান জানান।
সেই রাতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার ইহুদিদের উপর নামিয়ে আনা হয় লাগামহীন সন্ত্রাস। দুই দিন দুই রাত ধরে চলতে থাকা সেই ভয়ঙ্কর আক্রমণে হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ১০০ ইহুদিকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ৩০ হাজার জনকে। হিটলারের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে কমবেশি সাড়ে সাত হাজার ইহুদি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ভেঙে ফেলা হয় তাদের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সম্পত্তি। এক হাজারের বেশি ইহুদি উপাসনালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ধ্বংসলীলা সেই উপাসনালয়গুলির ধ্বংসাবশেষ সাফাই করার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় ইহুদি সম্প্রদায়ের উপরেই। 


কাজেই, বগটুই অথবা দলুয়াখাকিতে একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবর পেয়েও পুলিশ কেন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করল না, কেন দমকল বাহিনীকে নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল, সেটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। একই ঘটনা ঘটে চলেছে মেওয়াত থেকে মণিপুরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু হল সেই সমস্ত জনগোষ্ঠী, যারা সংখ্যায় দুর্বল। শুধু দূর্বল নয়, শাসকের চক্ষুশূলও বটে। সুতরাং এই অংশের উপর সংগঠিত আক্রমণ নামিয়ে আনতে পারলে, সমাজের বাকি অংশের মানুষের মনের মধ্যে ইতিউতি উঁকি মারতে থাকা প্রতিবাদের সামান্যতম সম্ভাবনাগুলিও চিরতরে নির্মূল করে দেওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করে ফ্যাসিবাদ। পাশাপাশি তারা এও বিশ্বাস করে, এই ধরনের ভয়ের বাতাবরণ প্রকৃত সমস্যা থেকে মানুষকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য করে। 
তথাপি যদি কেউ মুখ খোলে, তাহলে সেই প্রতিবাদী ভাষা, বিরুদ্ধতার কন্ঠস্বর স্তব্ধ করার জন্য ফ্যাসিবাদের কিছু নিজস্ব প্রক্রিয়া আছে। জার্মানিতে সেই কাজটি শুরু হয়েছিল, জার্মানবাসীকে 'আচ্ছে দিন আনেওয়ালা হ্যায়' স্বপ্ন দেখিয়ে। বলা হল, বিদেশি শক্তি, দেশের পূর্বতন নেতারা এবং তাদের গৃহীত নীতি দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে জার্মানির গৌরবোজ্জ্বল সোনালী অতীত। সুতরাং সেই ঐতিহ্যশালী গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে দেশের মধ্যে থেকে যারা দেশবিরোধী যদি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করতে হয়, যদি দেশকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে হয়, তাহলে দেশের প্রয়োজন একজন অনন্য সাধারণ ক্ষমতার অধিকারী ও বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন নেতৃত্বের। যিনি শক্ত হাতে যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম। বলাবাহুল্য, সাধারণ মানের একজন নেতাকে বিশ্বগুরুর আসনে বসাতে গেলে প্রচুর জুমলাবাজি করতে হয়। নাৎসি পার্টি এবং জার্মান প্রচার মাধ্যম সেই কাজটাই করেছিল গুরুত্ব সহকারে। পাশাপাশি বিলানো হয়েছিল অজস্র প্রতিশ্রুতি। তার মধ্যে একটি ছিল- মেক জার্মানি গ্রেট এগেইন। 
অতীতে পৃথিবীর যে কটি দেশে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে বা বর্তমানে মাথাচাড়া দেবার চেষ্টা করছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তারা এই ফর্মুলা প্রয়োগ করেছে। এর সাথে তারা যুক্ত করে দেশপ্রেম ও তীব্র জাতীয়তাবাদী আবেগকে। কারণ দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত আবেগ উন্মাদনা সহজেই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ফলে, মেকি দেশপ্রেমের বুলি কপচিয়ে, কিংবা ছদ্ম জাতীয়তাবাদী উন্মাদনাকে পুঁজি করে যারা পুঁজিবাদের তাঁবেদারিত্ব করে, দেশদ্রোহী শব্দটি তাদের কাছে অতি প্রিয় অস্ত্র বিশেষ। কারণ, এই দেশদ্রোহী শব্দটি ব্যবহার করেই তারা সেই সমস্ত মানুষ বা গোষ্ঠীকে সমাজের চোখে ঘৃণ্য জীবে পরিণত করে, যারা পুঁজিবাদের বিরোধিতা করে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। 


সঙ্গত কারণেই কমিউনিস্টরা ফ্যাসিবাদের চক্ষুশূল। কিন্তু কমিউনিস্টদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কারও নেই। অথচ জনমানসে নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ফ্যাসিবাদের প্রয়োজন ছিল এমন একটা জাতি বা জনগোষ্ঠীর, যাদের সহজেই গদ্দার প্রতিপন্ন করা যায়। সেই লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে অসত্য ধারণা নির্মাণের মধ্য দিয়ে ইহুদিদের একঘরে করে দেওয়া হল। এমনিতেই ইহুদিদের সম্পর্কে ভ্রান্ত কিছু ধ্যান ধারণা এবং বিরুদ্ধ মনোভাব জার্মানিতে প্রচলিত ছিল। নতুন অপপ্রচার শুরু হল- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিরা জার্মানদের ধোঁকা দিয়েছে। তার সাথে যুক্ত হল তীব্র জাতি ঘৃণা। ফলাফল যা হবার তাই হল। ঘৃণা আরও তীব্র করার জন্য ক্ষমতায় বসেই হিটলার ইহুদিদের সঙ্গে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করল। কারণ জার্মানদের আর্য রক্ত দুষিত করার জন্য ইহুদিরা 'লাভ জিহাদ' চালাচ্ছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এদেশের হিন্দুত্ববাদীরাও লাভ জিহাদ রুখতে বদ্ধপরিকর। শুধু হিন্দুত্ববাদীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, এরাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী, অধুনা জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও সিপিআই (এম)-র সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক, এমনকি সামাজিক সম্পর্ক রাখতেও নিষেধ করেছিলেন।
এভাবে হয়ত একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে একঘরে করা যায়, কিন্তু অর্থনীতিগতভাবে তো তাদের দুর্বল করা যায় না। তাই হিটলার নিদান দিলেন ইহুদি দোকান বয়কটের। যে আহ্বান আজ শোনা যাচ্ছে আরএসএস- বিজেপি সহ কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের স্লোগানে। শুধু দোকান বয়কট নয়, সরকারি পদ নিষিদ্ধ হল ইহুদিদের জন্য, নাগরিকত্ব হরণ করে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানো হল। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মনে রাখতে হবে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের আগের ধাপে তৈরি হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্প। আসামে যে রকম বানানো হয়েছে আর কি। একদিকে প্রচার চালানো হল হিটলারের বাহাদূরির, অন্যদিকে গঠন করা হল নাৎসি মতাদর্শের অনুসারী শিক্ষাক্রম। সে এক এমন শিক্ষাক্রম, যা প্রকৃত ইতিহাস ও যুক্তিবোধকে ধ্বংস করতে সিদ্ধহস্ত। যে ধ্বংস প্রক্রিয়ার অভিঘাতে মানুষের চিন্তা-চেতনা, বিবেক- মনুষ্যত্ব প্রভৃতি লোপ পায়। এবং সেই সুযোগে ফ্যাসিবাদ তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর নীল নকশা প্রস্তুত করে। 


সেই নীল নকশা মোতাবেক একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনার উদাহরণকে সামনে রেখে ৯ নভেম্বর রাতে নাৎসি বাহিনী নির্মম আক্রমণ নামিয়ে এনেছিল সমগ্র ইহুদি জাতির উপর। ওই একই কায়দায়, এদেশের সংখ্যালঘু, দলিত- আদিবাসী এবং কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদতে।
১৯৩৮ এর গণহত্যা শেষে নাৎসি সরকারের পক্ষ থেকে হারম্যান গোরিং মন্তব্য করেছিলেন, 'শুয়োরেরা আর কাউকে হত্যা করার সাহস করবে না। কোনো অবস্থাতেই আমি জার্মানিতে একজন ইহুদিও দেখতে চাই না।' জাতি ঘৃণা এবং জাতি বিদ্বেষ কতখানি তীব্র হলে এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করা যায়, সেটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। ফ্যাসিবাদী মগজে বিদ্বেষ কেলাসিত অবস্থায় থাকে বলেই, এহেন নারকীয় গণহত্যা এবং ধ্বংসলীলার নামকরণ করেছিল তারা ‘ক্রিস্তালনাখ্ত’ বা ‘ভাঙা কাচের রাত’। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে, এদেশে গণতন্ত্রের লাশের উপর দাঁড়িয়ে আরএসএস- বিজেপি ঘোষণা করছে- ভারতবর্ষ হল 'গণতন্ত্রের জননী'। অন্ধকারের পূজারীরা দেশবাসীকে আজ স্বপ্ন দেখাচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। 
অন্ধকারের পূজা অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। প্রাচীনকালে রোমান ও গ্রিকের মানুষেরা ধর্মীয় রীতি মেনে, অন্ধকার রাতে কালো রঙের পশুকে আগুনে ঝলসিয়ে তারা পাহাড়ের মাথায় রেখে আসত উপঢৌকন হিসাবে। যাতে দেবতারা তুষ্ট হন।  এটাকে তারা বলতো Holokaustos। Holos শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ এবং Kaustos মানে দগ্ধ। তবে, আধুনিক যুগে 'পুঁজি' নামক দেবতাকে খুশি করতে, জার্মানির ইহুদিদেরও যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত সেই ঝলসানো পশুর মতো পরিণতি হবে, সেটা কে জানত! অথচ সেটিই বাস্তবায়িত করা হয়েছিল নাৎসি জার্মানিতে। ইহুদিদের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে ফেলতে সেদিন নাৎসি জার্মানি আমদানি করেছিল সভ্যতার ইতিহাসের সবচাইতে কলঙ্কজনক ঘটনা 'হলোকাস্ট’।
ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া হলোকাস্টের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করলে, আজও শিউরে উঠতে হয়। পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র কত নির্মম হতে পারে, হিটলারের নাৎসি জার্মানি ছিল তার জ্বলন্ত উদাহরণ।কাজেই, আজ যখন আবার নতুন আঙ্গিকে বিরুদ্ধতার মতগুলিকে ধ্বংস করার জন্য রাষ্ট্রের পূর্ণ সহায়তা নিয়ে শাসকেরা নির্বিচারে খুন, সন্ত্রাস, অগ্নি সংযোগের মতো নারকীয় ঘটনা ঘটিয়ে হলোকাস্টের সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলিকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যত, তখন আপ্তবাক্যের মতো যে কথাই কেবল মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে আসে, তা হল- ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেই পুনরাবৃত্তি শুধু প্রকরণে নয়, পরিণতিতেও সত্য। আরএসএস- বিজেপি এবং তাদের সহযোগিরা সর্বদা যেন সেই কথাটি মনে রাখে।

Comments :0

Login to leave a comment