দুই ২৪ পরগনার গ্রাম ফেরত পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের উদ্যোগে গাড়ি ভাড়া করছেন ব্রিগেডে আসার জন্য। মহেশতলা, বাটা শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরাও আসবেন রবিবারের সমাবেশে। প্রয়োজনে লুকিয়ে। কলকাতার ৭ জায়গা থেকে হবে মিছিল।
ডিওয়াইএফআই’র ডাকা ব্রিগেড সমাবেশের ঘন্টা তিরিশেক আগে, চুম্বকে এটাই কলকাতা সহ লাগোয়া জেলাগুলির প্রস্তুতির ছবি।
কলকাতা জেলার যুব নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, মূলত পায়ে হেঁটে ব্রিগেডে ঢুকবে জেলা। পার্কসার্কাস, হাজরা মোড়, খিদিরপুর মাজার, শিয়ালদহ স্টেশান সহ ৭টি জায়গা থেকে হবে বিশাল আয়তনের মিছিল। জেলার ডিওয়াইএফআই কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি জেলার বামপন্থী কর্মী সমর্থকরাও সামিল হবেন সেদিন।
ইতিমধ্যেই দেওয়াল লিখন সারা। গোটা শহর জুড়ে চলছে ট্যাবলো প্রচার। শেষ মুহূর্তে গতি বেড়েছে অটো প্রচার এবং এলাকায় এলাকায় ছোট সভার। ইতিমধ্যেই শ্যামবাজার, বেহালা চৌরাস্তা সহ একাধিক জায়গায় হয়েছে বড় মাপের জনসভা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুব সহ বামপন্থী নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, জেলার চট্টা, মহেশতলা সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হোশিয়ারি শিল্প রয়েছে। দর্জি শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত করার কাজ চলছে। কিন্তু ইনসাফ যাত্রা এবং তারপরে ব্রিগেডকে ঘিরে বাড়তি গতি পেয়েছে সেই প্রক্রিয়া।
জেলার যুব আন্দোলনের নেত্রী পারমিতা চৌধুরী জানাচ্ছেন, ব্রিগেডের সমর্থনে আক্রা সহ জেলার সমস্ত প্রান্তে সভা হয়েছে। দর্জি শ্রমিকরা নিজেদের উদ্যোগে বাস, ছোট গাড়ি ভাড়া করেছেন ব্রিগেডে আসার জন্য। বামফ্রন্ট সরকার ১৪ তলার নবান্ন ভবন তৈরি করেছিল পোষাক শিল্পের উন্নয়নের জন্য। মমতা ব্যানার্জি সেই ভবন দখল করে রেখেছেন। জেলার দর্জি শ্রমিকদের মধ্যে এই জেদ তৈরি হচ্ছে, যে নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জিকে সরাতে হবে, এবং ফের সেই ভবনকে পোষাক শিল্পের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে।’’
জেলার শ্রমিক নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, এই অংশের মধ্যে সংগঠন বরাবর ছিল। কিন্তু এতদিন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছিল না। এইবার যেই সংখ্যাটাকে সংগঠিত করার কথা ভাবা হয়েছিল, সেটা সম্ভব হয়েছে।
একইভাবে জেলার শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা তৃণমূলের হুমকি উপেক্ষা করে ব্রিগেডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রয়োজনে গোপনে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিনরাজ্যে কাজ করেন। তাঁদের একটা অংশ ব্রিগেডে যোগ দেওয়ার জন্য গ্রামে ফিরেছেন। ভিনরাজ্য থেকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন অনেকে।
উত্তর ২৪ পরগণার যুব নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, ব্রিগেড এবং ইনসাফ যাত্রার প্রস্তুতির পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়ে সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়েছে। তথাকথিত বাম বৃত্তের বাইরে যাঁরা রয়েছেন, প্রতি বুথে চেষ্টা হয়েছে তাঁদের কাছে পৌঁছনোর। জেলায় এই বছর ৪ লক্ষের বেশি যুব সদস্যপদ সংগ্রহ করা হয়েছে। এবং এর সিংহভাগ নতুন সদস্য। তাঁদের কাছে ব্রিগেডের বার্তা নিয়েই যাওয়া হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার যুব আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব সপ্তর্ষি দেব বলছেন, ‘‘সল্টলেক, নিউটাউন, রাজারহাটে বহু যুবক গিগ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কেউ বাইক ট্যাক্সি চালান, তো কেউ ডেলিভারির কাজ করেন। ব্রিগেডের বার্তা নিয়ে নতুন প্রজন্মের এই কর্মক্ষেত্রগুলিতেও গিয়েছেন যুব সংগঠকরা। সেক্টর ফাইভেও চলেছে প্রচার। প্রতিটি ক্ষেত্র ধরে ধরে যুবদের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা চালিয়েছেন যুবরা।’’
সেই প্রচারের ফলশ্রুতি হিসেবে, গিগ শ্রমিকদের একটা অংশ সংগঠিত ভাবে রবিবার ব্রিগেডে যাবেন।
গ্রামে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশও রবিবারের ব্রিগেডের অংশ হবেন।
জেলার যুব এবং বামপন্থী নেতৃত্বের কথায়, জেলা থেকে ১ হাজার বাস ভাড়া করা হয়েছে ব্রিগেডের জন্য। এর পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে অসংখ্য ছোট গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। শিয়ালদহ শাখার রেল ব্যবহার করেও বড় অংশ ব্রিগেডে পৌঁছবে।
সপ্তর্ষি দেবের কথায়, ‘‘জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষ রবিবার ব্রিগেডে হাজির হবেন। ১ হাজার বাস আছে। তারপর ট্রেন, ছোট গাড়ি, অসংগঠিত জমায়েত রয়েছে। মানুষের যা প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি, তাতে জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যেতে পারে।’’
Comments :0