EAST BENGAL

যুবভারতী থেকে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে আনল ইস্টবেঙ্গল

খেলা

East Bengal fc Borja Herrera Harmanjot Singh Khabra Nandhakumar Sekar nishu kumar east Bengal news today bengali news durand cup north east united

ইস্টবেঙ্গল-২(৫)

নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড-২(৩)

 

ডুরান্ডের প্রথম সেমিফাইনালে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৩ গোলে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে সমতায় ফেরে লাল হলুদ। তারপর পেনাল্টি শুট আউটে জিতে ১৯ বছর পর ডুরান্ড কাপ জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল কার্লেস কুয়াদ্রাতের বাহিনী। 

ময়দানের প্রাচীন প্রবাদ, পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর। আবার একটা অংশের কাছে ইস্টবেঙ্গল সাবেক জার্মান ফুটবল দর্শনের অনুসারী। যেই দর্শন বলে হারার আগে হারতে নেই।  ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার আগে কখনও মনে করতে নেই ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। 

মঙ্গলবারের যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলকে দেখলে মনে হয়েছে, সেই দর্শনকে হাতিয়ার করেই মাঠে নেমেছেন লাল হলুদ জার্সিধারীরা। এবং এর কৃতিত্ব কোনও জার্মানের নয়, বরং এক স্প্যানিয়ার্ডের। বার্সেলোনা রিজার্ভ দলের জার্সি পড়ে খেলা কার্লেস কুয়াদ্রাতের। তাঁর জাদু কাঠির ছোঁয়াতেই পালটে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আইএসএল’র ৩ মরশুমের হতশ্রী পারফর্মেন্স পিছনে ফেলে রেখে উঠে এসেছে এক নতুন ইস্টবেঙ্গল। যেই ইস্টবেঙ্গল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। টুর্নামেন্ট জেতার জন্য। এই ইস্টবেঙ্গলের গেমপ্ল্যান প্রতি ম্যাচ অনুযায়ী বদলায়। প্রতিপক্ষকে মেপে নিয়ে তৈরি হয় তাঁদের রোখার টোটকা। 

মঙ্গলবার বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি দেখল বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদেরও। ৬০ মিনিটের মাথায় খেলা চলছে। দল ২-০ গোলে পিছিয়ে। কিন্তু তারপরেও ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি দেখে মনে হয়নি সমর্থকরা ভেঙে পড়েছেন। কারণ, গ্যালারি জানে এই দল শেষ না দেখে ছাড়বে না। সমর্থকদের সেই ভরসার মূল্য এদিন সত্যিই দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। 

এদিন ম্যাচের ২২ মিনিটে মিগুয়েল জ্যাবাকোর গোলে পিছিয়ে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল। বাম প্রান্ত থেকে ফাল্গুনী সিংয়ের ভাসানো ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন জ্যাবাকো। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ফলাফল নিয়েই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। তাঁদের দৃষ্টিনন্দন পাসিং ফুটবল উপভোগ্য হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি হলেও কাজে লাগাতে পারছিলেন না লাল-হলুদের আপফ্রন্টের খেলোয়াড়রা। 

এরই মাঝে ৫৭ মিনিটের মাথায় একক দক্ষতায় লাল হলুদ রক্ষণকে কাঁপিয়ে দিয়ে গোল করে যান নর্থ ইস্টের ফাল্গুনী সিং। এরপরেই দ্রুত কয়েকটি পরিবর্তন করেন লাল হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। হারমনজোৎ সিং খাবরা এবং জর্ডন এলসিকে তুলে মাঠে আনেন গুরসিমরত গিল এবং ক্লেইটন সিলভা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে আক্রমণে ওঠার সিদ্ধন্ত নেন কুয়াদ্রাত। 

তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপে ফল মেলে। ক্লেইটন মাঠে নামতেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে ইস্টবেঙ্গলের। কোয়ার্টার ফাইনালে গোকুলামের বিরুদ্ধেও পরে মাঠে নামান ক্লেইটনকে। এবং ক্লেইটন মাঠে নামতেই খেলা ফেরে ইস্টবেঙ্গলের। 

সিলভা আসার পরে আক্রমণ ভাগ জমাট বাঁধতে শুরু করলেও গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও ১৭ মিনিট। ৭৭ মিনিটের মাথায় ব্যবধান কমান নওরেম মহেশ সিং। কিংস কাপের দলেও ডাক পেয়েছেন এই মিডফিল্ডার। ক্রেসপো-মহেশ যুগলবন্দীর ফসল এই গোল। ক্রেসপোর পাস ধরে গড়ানো শট নেন মহেশ। নর্থ ইস্ট ডিফেন্ডার দীনেশের পায়ে লেগে বল দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে যায়। তাকিয়ে থাকা ছাড়া নর্থ ইস্ট গোলরক্ষকের অন্য কিছু করারও ছিলনা। 

এরপর শুরু হয় ইস্টবেঙ্গল ঝড়। ৮৭ মিনিটে নর্থ ইস্ট বক্সে সিভেরিওকে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেওয়া হলেও পেনাল্টির দাবি অগ্রাহ্য করেন রেফারি। ৯০ মিনিট খেলা শেষে ৮ মিনিট সংযুক্ত সময় যোগ করা হয়। সংযুক্ত সময়ের ৬ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের একটি কাউন্টার অ্যাটাক প্রতিহত করতে গিয়ে ফাউল করেন মিগুয়েল জ্যাবাকো। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। দশজন হয়ে যাওয়া নর্থ ইস্টের পক্ষে সম্ভব ছিল না ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ প্রতিহত করা। 

জ্যাবাকোর করা ফাউলের জন্য ফ্রিকিকের নির্দেশ দেন রেফারি। ফ্রিকিক থেকে ভাসানো বল শেভ করেন নর্থ ইস্ট গোলরক্ষক মির্শাদ। ফিরতি বল যায় ক্লেইটনের কাছে। ক্লেইটন বল বাড়ান নন্দকুমারকে। কম্পাসে মাপা নীচু ক্রসে মাথা ছুঁঁইয়ে দলকে সমতায় ফেরান নন্দ। 

ডুরান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, নক আউট পর্যায়ে অতিরিক্ত সময়ের খেলা হয়না। তাই ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। এই ম্যাচের বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে কার্লেস কুয়াদ্রাত নিজের টিমকে পেনাল্টি শুট আউটের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী ৫টির মধ্যে ৫টি শটই গোলে রাখে ইস্টবেঙ্গল। অপরদিকে ১টি শট মিস করে নর্থ ইস্ট। তারফলে ৫-৩ ব্যবধানে জিতে ১৯ বছর পর ডুরান্ড ফাইনালে পৌঁছে গেল লালহলুদ। 

এদিন ম্যাচ শেষে যুবভারতী জুড়ে জ্বলে ওঠে কাগজের মশাল এবং লাল হলুদ রঙ মশাল। দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করে গোটা দল। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও ভাইকিং ক্ল্যাপের মাধ্যমে সম্মান জানান টিম কুয়াদ্রাতকে। 

Comments :0

Login to leave a comment