ফ্ল্যাটের টাকা প্রতারনা কান্ডে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানকে তলব করলো ইডি। নুসরতের সাথে ওই সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ সিংহকেও তলব করা হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থার পক্ষ থেকে। ইডি সূত্রে খবর আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার দুজনকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২৪ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান ও তাঁর রিয়েল এস্টেট সংস্থার বিরুদ্ধে! প্রতারণা, সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বৈভবের জীবন কাটানোর অভিযোগ এরাজ্যের শাসক দলের একাধিক নেতা, বিধায়ক সাংসদের বিরুদ্ধে। সারদা কেলেঙ্কারি থেকে নিয়োগ দুর্নীতি— বিস্তৃত সেই তালিকা।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা তুলে তা আত্মসাৎ করা। অভিযুক্ত ‘৭ সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’। যে সময়ে এই দুর্নীতির কারবার চলেছিল তখন এই সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস’র অন্যতম সদস্য ছিলেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। অভিযোগ জানানো হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কাছেও। প্রতারিতরা আদালতেও মামলা করেছিলেন। আদালত সমন পাঠিয়েছিল নুসরত জাহানকে। যদিও তিনি সাংসদ, তিনি দিল্লিতে ব্যস্ত, তাই হাজিরা দিতে পারবেন না বলে আদালতে জানিয়েছিলেন। অন্যতম প্রতারক তৃণমূলের সাংসদ, ফলে পুলিশও কার্যত হাত গুটিয়ে।
নুসরত জাহান ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগটি কী? প্রতারিত অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মীদের কথায়, ৭ সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামক একটি সংস্থা ফ্ল্যাট করে দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা তুলেছিল। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সমবায় গড়ে টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওই সংস্থার কাছে। ৪২৯ জন ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার হাজার টাকা করে প্রায় ২৪ কোটি তুলে দিয়েছিল। কথা ছিল ওই সংস্থাটি তাঁদের রাজারহাটে তিন কামরার ফ্ল্যাট করে দেবে।
প্রতারিত অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী সুশান্ত হাজরার কথায়, প্রথমে ওরা বলেছিল রাজারহাটে হিডকোর কাছে জমি কিনে ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবে, সেই কারণে প্রথম দফায় আমাদের কাছে ৫ লক্ষ ৫৫ টাকা নেওয়া হয়। তিন বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় আমাদের হাতে তুলে দেওয়া কথা ছিল। এখন ৯ বছর পেরিয়েছে, ফ্ল্যাটও হয়নি, টাকাও ফেরত পাইনি। ওই কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর তৃণমূলের সাংসদ নুসরত জাহান’।
শুধু তাই নয় এরপর প্রতারিতরা আরও বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আনেন। তাদের অভিযোগ সেই সময় সংস্থার যাঁরা ডিরেক্টর ছিলেন তাঁরাই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর রাকেশ সিং, নুসরত জাহান, বিনায়ক সেনরা সমবায় গড়ে যে টাকা অবসরপ্রাপ্তরা দিয়েছিলেন সেই টাকাই তাঁরা নিজেরাই ফ্ল্যাট কিনে নেন। রাকেশ সিং, বিনায়ক সেন হিন্দুস্থান পার্কে ফ্ল্যাট কিনে নেন, নুসরত জাহান প্রতারণার টাকায় পাম অ্যাভিনিউতে ফ্ল্যাট কেনেন। এমনকি অভিযুক্ত রাকেশ সিংয়ের স্ত্রীর নামেও ফ্ল্যাট কেনা হয় বলে তাঁরা প্রকাশ্যেই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করেছেন।
৯ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, ফ্ল্যাট পাওয়া তো দূর অস্ত, টাকাও ফেরত পাননি কেউ। প্রতারণার বিষয়টি সেই সময় প্রথমে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মীরা গড়িয়াহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করছিলেন। যদিও থানা প্রথমে সেই অভিযোগ নিতেই চায়নি। পরে আলিপুর আদালতে মামলা দায়ের হয়। আদালত লালবাজারকে তদন্তের সত্যতা খতিয়ে দেখতেও বলেছিল। পরে পুলিশের তরফে অনুসন্ধান কমিটি গড়ে তদন্ত করা হয়। আদালতে নির্দেশেই পুলিশ আরেক অন্যতম অভিযুক্ত রাকেশ সিংকে গ্রেপ্তার করেছিল, ইতিমধ্যে তারও জামিনও হয়ে যায়।
চলতি বছরের গোড়াতেই এই মামলা আলিপুর আদালত নুসরত জাহান সহ অভিযুক্ত সংস্থার আট জনকে আদালতে সশরীরে হাজিরা নির্দেশ দেয়। যদিও তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান সেই সমনে হাজিরা দেননি। ফের তাঁকে গত এপ্রিল মাসে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের সেই নির্দেশও এড়িয়ে যান নুসরত জাহান।
Comments :0