Post Editorial

মানুষই হোক লড়াইয়ের অ্যাজেন্ডা

উত্তর সম্পাদকীয়​

শমীক লাহিড়ী 


ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি হিন্দি ছাড়াও উর্দু, মণিপুরি, গুজরাটি ও ওড়িয়া ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলা তো বাদ বটেই, এমন কি ইংরেজি ভাষাতেও এটি প্রকাশ করা হয়নি। অথচ সংবিধানের অষ্টম তফসিলে ২২টি ভাষাকে সাংবিধানিক মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ২২টি ভাষায় প্রকাশিত না হলেও, কেন ইংরেজি ভাষায় অন্তত প্রকাশ করা হলো না? সেখান থেকে ভারতের অ-হিন্দি ভাষাভাষী সংবাদ মাধ্যম নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে নিতে পারতো। এটাই তো স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে।
হিন্দি আধিপত্যবাদের সূচনা মোদী সরকার আগেই করেছে, এবার তা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা শুরু হলো। দেশের সংবিধান তৈরির সময়ে হিন্দির সাথে ইংরেজি ভাষাকেও সরকারি কাজে ব্যবহৃত দ্বিতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ১৫ বছরের মধ্যে ইংরেজিকে বাদ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৬০ সাল থেকে বিভিন্ন অ-হিন্দি ভাষী রাজ্যগুলিতে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয় হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ে ইংরেজি ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে বহাল রাখা হয়, সংবিধানিক পদ্ধতি মেনেই।
কিন্তু আরএসএস সহ হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্য, একমাত্র হিন্দি ভাষাই হবে 'জাতীয় ভাষা'। এটাই ভারতের মতো বহুভাষী দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে একমাত্র দাওয়াই। অথচ এদেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলে না। ২৮টা রাজ্যের মধ্যে মাত্র ৯টি রাজ্যের মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন। তাও সেসব রাজ্যের হিন্দি ভাষার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। গায়ের জোরে ১৯টি রাজ্যের মানুষের ওপর, ৯ টি রাজ্যের মানুষের ভাষা চাপিয়ে দিলে দেশ এক থাকবে?
মন্ত্রীসভার কাজ কি?
এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় অবশ্য ভাষা নয়। ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কি আছে? বলা হয়েছে দেশের মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দিত করছে মন্ত্রীসভা। কি কারণ অভিনন্দনের? কারণ তিনি ‘রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করেছেন। ৫০০ বছরের ‘বেঘর রামলালা’কে ঘর অর্থাৎ মন্দিরে স্থান দিয়েছেন। এটাই ভারতের মন্ত্রীসভার ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা অতীতে কখনও হয়নি।
অর্থাৎ ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠন, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন দেশের নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন— এসব তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে। এগুলোর চাইতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ 'বেঘর রামলালা'কে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করে তার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করা! এটা মন্ত্রীসভার কাজ? বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে বেড়ানোর জন্য দেশের মানুষ ভোট দিয়ে সরকার, মন্ত্রীসভা এসব বানায়?
কার প্রাণ প্রতিষ্ঠা
আসলে এটা রামলালা’র প্রাণ প্রতিষ্ঠা নয়, এটা ৩য় দফার মোদী সরকারের প্রাণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। অযোধ্যায় তাই ‘রামলালা’কে সামনে রেখে আসলে মোদী পুজো হয়েছে। ফলে মন্দির উদ্বোধনের নামে ঢাক-ঢোল সহকারে বিপুল সমারোহে প্রচার হলো। অযোধ্যার আকাশ মোদি’র কাট-আউটে ঢেকে গেল। মাঝে মধ্যে অবশ্য কিছু রামচন্দ্রের কাট-আউটও ইতিউতি দেখা গেছে। ভোট আছে ২০২৪ সালে। তাই অসম্পূর্ণ মন্দিরেই ‘প্রাণ-প্রতিষ্ঠা’ হ’লো। পুরোহিত বা শাস্ত্রজ্ঞরা ব্রাত্য থাকলেন আর প্রচারের আলোয় থাকার জন্যই ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। 
হিন্দুধর্মের চারধামের শঙ্করাচার্যেরা সমস্বরে বললেন– প্রধানমন্ত্রীর এ-কাজ হিন্দু ধর্ম বিরোধী। প্রশ্ন উঠলো – সীতা কেন ব্রাত্য নতুন মন্দিরে! জয় সিয়ারাম ধ্বনি কেন সীতামাইয়াকে বাদ দিয়ে জয় শ্রীরাম হয়ে গেল সঙ্ঘীদের পাল্লায় পড়ে! এসব কথার তোয়াক্কা না করে নিজেই নিজেকে ঈশ্বরের দূত ঘোষণা করে মোদীময় প্রচারের ঢেউ তোলা হলো। দেশের সংবিধান আর ধর্মনিপক্ষতাকে খাটিয়ায় তুললেন মোদী, তাঁর বশংবদ মিডিয়াকুল ‘রামনাম সত্য হ্যায়’ এই ধ্বনি তুলে সেই খাটিয়ার বাহক হয়ে গেল।
রাষ্ট্রের ধর্ম
রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকতে পারে না। তবেই বহু ধর্মের দেশের নাগরিক নিরপেক্ষ শাসন-বিচার পাবে। আর রাষ্ট্র যদি কোনও এক ধর্মের পক্ষে দাঁড়ায় তাহলে অন্য ধর্মের মানুষ নিরপেক্ষ বিচার-শাসন পাবে কিভাবে? সংগরিষ্ঠতার বিশ্বাস-আবেগ দিয়ে, যুক্তি রহিত রাষ্ট্র যদি চলে, তাহলে তো গভীর বিপদ। দেশ এক থাকবে নাকি? আজ মসজিদের তলায় ৫০০ বছর আগে মন্দির ছিল, শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের এই বিশ্বাসের ওপর যদি তা ভেঙে মন্দির হয়, তাহলে অন্য দেশে অন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষ উলটোটা করবে। এটা তো দেশ বিশ্বকে এক ঘোর অরাজকতায় নিয়ে যাবে। মারপিট-দাঙ্গা হাঙ্গামা-আগুন-খুন-লুটপাট-ভাঙচুর এই চলবে? এটা কোনও সভ্য সমাজ চাইতে পারে। আসলে ভারতকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী শাসিত চূড়ান্ত পিছিয়ে প্রায় একটা দেশে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।
তাই চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি, ফ্যাসিস্ত না মানে মানবতার কাহিনি। ফ্যাসিস্তদের কাছে ক্ষমতা দখল, তারপর ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই একমাত্র লক্ষ্য। তাতে যা করতে হয়, তাই করবে ওরা। অতীতে জার্মান দেশে বিদ্বেষের জিগির তুলে ইহুদি-কমিউনিস্ট নিধন হয়েছে হিটলারের নেতৃত্বে। তাঁরও দাবি ছিল, জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে তাঁকে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছে। তাই ইহুদি তাড়াও। বিদ্বেষ ছড়াও, গণহত্যা চালাও। এখন আর এক জায়নবাদী ফ্যাসিস্ত ইজরায়েলের নেতানেয়াহু প্যালেস্তাইন অধিবাসীদের গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখান থেকে আরবীয়দের হটাতে। তারও স্লোগান, ইহুদিদের পূণ্যভুমি পিতৃভূমি উদ্ধার করো।
হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ 
এদের যোগ্য উত্তরাধিকার হিন্দুত্ববাদীরা। এদের সাথে হিন্দু ধর্মের কোনও সম্পর্কই নেই। হিন্দুধর্ম তো হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এর অসংখ্য ধারা-উপধারা, শাখা-প্রশাখা তৈরি হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। স্থানীয় লোকাচারে এই ধর্মের রীতিনীতি পালনেও বহু বৈচিত্রের সমাবেশ রয়েছে। বৈদিক যুগের পূজা-আর্চার রীতিনীতি কতটুকু অবশিষ্ট আছে আজ? আজকের মতো এমন ৩৩ কোটি দেব-দেবীর সমাহার তো চার বেদে খুঁজে পাওয়া যায় না।  ফলে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে  দীর্ঘ যাত্রাপথ অতিক্রম করে এসেছে হিন্দু ধর্ম, আর চলার পথে বারবার বিবর্তিত হয়ছে।
আর হিন্দুত্বের ইতিহাস তো মাত্র ১০০ বছরের। বিনায়ক দামোদর সাভারকার ১৯২২ সালে Essentials of Hindutva, এই শিরোনামে একটি প্রচারপত্র লেখেন যা ১৯২৩ সালে  Hindutva: Who Is a Hindu? এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এখানেই প্রথম হিন্দুত্বের ধারণা উপস্থিত করা হয়, যা হিন্দুত্ববাদীদের ভাবনার আধার। এটা কোনও ধর্ম পুস্তক নয়, একেবারে আপাদমস্তক একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। তাঁর নিজের কথাতেই হিন্দুত্ব হলো হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। 
শুধু মন্দির নয়, চাই বিদ্বেষ
আরএসএস, বিজেপি, মোদী সবাই চাইছে এই আবহেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হোক। সরাসরি তারা বলছেন– রাম কে নাম পে ভোট দো। এদের হাবভাব দেখে মনে হয় রামচন্দ্র যেন বিজেপি’র জাতীয় কর্ম সমিতির সদস্য। আসলে এরা জানে মোদীর ১০ বছরের পারফরমেন্স দেখিয়ে যদি ভোট করতে হয়, তাহলে নিজেরাই ‘বেঘর’ ‘প্রাণহীন’ হয়ে যাবে। তাই মোদীর নামে ‘গ্যারান্টি’র যতই বিজ্ঞাপনী প্রচার হোক না কেন, চিঁড়ে ভিজবে না তাতে। তবে এটাও বুঝেছে হিন্দুত্ববাদীরা উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যে রামের নামে ভোট পাওয়া গেলেও, গোটা দেশে তা কার্যকর হবে না। তাই শুধু রাম মন্দির তৈরিতে কাজ হবে না বুঝেই চিরাচরিত ফ্যাসিস্ত কায়দায় তীব্র মুসলমান-খ্রিস্টান-কমিউনিস্ট বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করে চলেছে।
বাস্তবকে আড়াল করতে কল্পিত শত্রু খাড়া করার তত্ত্ব ফ্যাসিস্তদের বহু পুরানো কায়দা। মুখে আপাত ধনীদের বিরুদ্ধে কিছু স্লোগান তুলে গরিবীর যন্ত্রণাকিষ্ট মানুষদের সাথে টেনে আনো, আর তাদের গরিবির জন্য সরকার বা রাষ্ট্র নয়, অন্য ধর্ম বা ভাষা বা জাতির মানুষরাই দায়ী– এই প্রচারের ধুয়ো তোলাই ওদের চিরাচরিত কায়দা। হিন্দুদের সমস্যার জন্য মুসলমান-খ্রিস্টানরা দায়ী। মুসলমান-খ্রিস্টানদের তোল্লা দেয় কমিউনিস্টরা, তাই ওরাও শত্রু। আসলে কমিউনিস্টরা সব ধর্ম-ভাষা-জাতি নির্বিশেষে মানুষের অধিকার ছিনিয়ে আনার জন্য সব শ্রমজীবী মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ করে, সেই সত্যকেই আড়াল করতে চায় ফ্যাসিস্ত আর তাদের বশংবদ মিডিয়া।
তাই শুধু মন্দির নির্মাণ করা ওদের উদ্দেশ্য নয়। যদি সেটাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে তো দেশের যে কোনও জায়গাতেই ওরা তা করতে পারত। কিন্তু মসজিদ ভেঙে মন্দির করলে তবেই তো মুসলমান বিরোধী জিগির তোলার কাজটা করা যাবে। তাই মন্দির তৈরির উৎসবের চাইতেও হিন্দুত্ববাদীদের হনুমানীয় লম্ফঝম্ফের মূল কারণ, মুসলমানদের টাইট দেওয়া গেছে এই প্রচার তোলার চেষ্টা। একইভাবে ধর্মান্তকরণ, লাভ জিহাদ ইত্যাদি জিগির তোলারও মূল কারণ মুসলমান-খ্রিস্টান বিরোধী জিগির তুলে, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদের স্থায়ী প্রাচীর তুলে দেওয়া।
মোদী শাসনের হাল হকিকত
কেন মোদীর ১০ বছরের শাসনকালে ১৪ টাকার কেরোসিন ৮৯ টাকা, ৪১৪ টাকার গ্যাস ৯২৯ টাকা হলো? কেন ১০০ টাকার পেট্রোল-ডিজেল কিনলে ৬০ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়? কেন ১৩ টাকার চাল ৬০ টাকা? ২০১২ সাল থেকে মার্চ ২০২২ এই সময়ের মধ্যে গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় ৪৭ শতাংশ। কেন বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ভারতে বেড়েই চলেছে? পৃথিবীর ৫ম বড় অর্থনীতির দেশে কেন বিশ্বের সব চাইতে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস?  কেন স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে সবচাইতে বেশি বেকারত্বের হার মোদীর আমলে? এসব প্রশ্ন নিয়ে নির্বাচন যেন না হয়, এটাই লুটেরা ধনতন্ত্রের মনোনীত ফ্যাসিস্ত শাসক আর এদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মূল লক্ষ্য। তাই মন্দির-প্রাণ প্রতিষ্ঠা— মুসলমান টাইট দেওয়া এসব প্রচারের ঝড় তুলে ভোট চাইছেন মোদী।
দেশের লোকের কাজ নেই, মজুরি বাড়ছে না, চাষি ফসলের পাচ্ছে না অথচ  জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। 
লুটেরা পুঁজি-ফ্যাসিস্ত আঁতাত
অন্যদিকে আদানি-আম্বানি সহ হাতেগোনা কিছু সরকার ঘনিষ্ট লুটেরা পুঁজির মালিক গোটা দেশের মালিকে রূপান্তরিত হয়েছে গত ১০ বছরে। দেশের বড় ৬টা এয়ারপোর্টের মালিক একাই আদানি। মুম্বাইতে আরও একটা এয়ারপোর্ট বানাচ্ছে এরাই। দেশের ১৫টা জাহাজ বন্দরের মালিকও এই গৌতম আদানি। কয়লাখনি, বিদ্যুৎ, রেল এই সবেরই দখলদারি নিচ্ছে এক এক করে এরাই। এখন সংবাদ মাধ্যম দখলে নেমেছে আদানি গ্রুপ। একই চেহারা মুকেশ আম্বানি নিয়ন্ত্রিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিসের। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট এই দুই লুটেরা পুঁজির মালিকই দেশের দখলদারি নিচ্ছে। অবশ্য কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলা মুশকিল। তাই দেশ লুটের জন্যই মোদীকে সরকারে রাখা যে এদের জন্য অত্যন্ত জরুরি সেটা সবাই বোঝে।
ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, কয়লা সহ সব রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা পাওয়ার জন্যই ফ্যাসিস্তদের দরকার লুটেরা পুঁজি’র। কারণ মোদীকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েই আদানি বিগত ৫বছরে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছে ২৫০০ শতাংশ। কোভিডের সময়ে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের সবাইকে ঘরবন্দি করে কাজ কেড়ে নিয়েছিলেন, সেই সময়ে ২০২০ সালে আদানির সম্পদ বেড়েছিল ৭৫০শতাংশ আর আম্বানির ৩৫০ শতাংশ। লকডাউনের জন্য দেশের মানুষ খেতে পাচ্ছিল না, কাজ হারিয়েছিল ৪০ কোটি মানুষ। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হ্যারিকেন-মোমবাতি-ঘণ্টা-থালা ধরিয়ে ব্যস্ত রাখলেন, আর তখনই লুট চলল দেশজুড়ে।
ফ্যাসিস্তদের ভোটের অ্যা জেন্ডা
এসব প্রশ্ন নিয়ে ভোটার যাতে ভোটবাক্সের সামনে না যায়, তাই কপালে তিলক আঁকিয়ে, দাঙ্গা-বিদ্বষের আগুনে সেঁকা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চায় হিন্দুত্ববাদীরা। গতবার পাকিস্তানের জুজু দেখিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের আবেগে ভাসিয়ে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রের লাইনে দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। এবার রাম মন্দির আর মুসলমান-খ্রিস্টান বিদ্বেষে ভরপুর ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চায় এরা। রুটি-রুজি-দেশের সম্পদ লুট, গণতন্ত্র হত্যা, প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোকে জেলে বন্দি রাখা এই সব যাতে ভোটের অ্যা জেন্ডা না হয় সেই চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদী আর তাঁর বশংবদ মিডিয়া। ওরা চায় রাম মন্দির অ্যা জেন্ডায় ঘৃণা-বিদ্বেষের আবহে ভোট করতে। 
লড়াইয়ের অ্যা জেন্ডা কি হবে
আমরা চাই মানুষের অ্যা জেন্ডায় লড়াই হোক, ভোট হোক। মোদী সরকারের ১০ বছরের ব্যর্থতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, মুল্যবৃদ্ধি, কৃষক আত্মহত্যা আসুক ভোটের আলোচনায়, লড়াই হোক তা নিয়ে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, সব ছাত্রের শিক্ষার অধিকার, বেকারের কাজের অধিকার, মহিলাদের সমানাধিকার ও সমমর্যাদা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে লড়াই চলুক, ভোট হোক। 
আদানি-আম্বানি-বিজেপি’র কুচক্রী জোটের অ্যা জেন্ডার ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। ঐ কুখ্যাত চক্রীদের তৈরি করা মাঠে নয়, লড়তে হবে মানুষকে নিয়ে, মানুষের ময়দানে, মানুষের জন্য।
 

Comments :0

Login to leave a comment