মণিপুরকে দেশের ফুটবল হাব বললে অত্যুক্তি হবেনা। সারা রাজ্য জুড়ে রয়েছে অজস্র ছোট বড় ফুটবল অ্যাকাডেমি। জাতীয় দল, কিংবা আইএসএল হোক বা আইলিগ, সেই অ্যাকাডেমির ফসলরা ছড়িয়ে রয়েছেন গোটা দেশ জুড়েই। কিন্তু গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুনে জ্বলছে সেই মণিপুর। মে মাস থেকে বাধ্য হয়ে তালা ঝোলাতে হয়েছে সেই অ্যাকাডেমিগুলিতে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এই অ্যাকাডেমিগুলির পড়ুয়াদের ভবিষ্যত। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল শহরের ফুটবল শিক্ষার্থীরা।
এই অবস্থায় তাঁদের পাশের দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিল ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব। মঙ্গলবার এমন ২৪জন ফুটবল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় ক্লাবের তরফে। ইউনাইটেড স্পোর্টস শীর্ষকর্তা নবাব ভট্টাচার্য তাঁদের হাতে জার্সি তুলে দেন।
কিন্তু কীভাবে শুরু হল এই যাত্রা?
এই প্রসঙ্গে ইউনাইটেড স্পোর্টসের সিইও অর্ণব ভৌমিক জানিয়েছেন, ‘‘মণিপুর থেকে এক প্রাক্তন খেলোয়াড় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সেইল মোহনবাগান অ্যাকাডেমির প্রোডাক্ট। বর্তমানে তিনি এফসি ইম্ফল সিটি’র ম্যানেজার। ইম্ফলে তাঁর অ্যাকাডেমি আছে। কিন্তু গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলে সেই অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনি ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ছেলেগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে।’’
সেই মত শুরু হয় কাজ। উত্তর ২৪ পরগণার শ্যামনগরে এই ২৪জন ফুটবল শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁরা যাতে একসঙ্গে থাকতে পারে, সেইজন্য একটি পুরনো বাড়ি জোগাড় করেন ইউনাইটেড স্পোর্টস কর্তারা। ক্লাবের উদ্যোগে সেই বাড়িকে বসবাসের উপযোগী করা হয়।
এরমাঝে ইম্ফল সিটি এফসি’র প্রতিনিধিরাও শ্যামনগর ঘুরে যান। তার দিন ১৫ পরে পাকাপাকি ভাবে এই ২৪ ফুটবল শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয় ইউনাইটেড স্পোর্টস।
মঙ্গলবার এই ২৪ জনের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে জার্সি তুলে দেওয়া হলেও, তাঁরা প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে শ্যামনগরে প্র্যাক্টিস করছেন।
ক্লাব সূত্রে খবর, প্রত্যেক ফুটবলারের পড়াশোনার দায়িত্বও তাঁরা নেবেন। আপাতত তাঁরা মণিপুরের স্কুলে অনলাইন ক্লাস করলেও, ইন্টারনেট সংযোগ প্রায়সই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করানো হবে।
জানা গিয়েছে, এই ফুটবলাররা মূলত অনূর্ধ-১৬, অনূর্ধ-১৭ এবং অনূর্ধ-১৮ বিভাগের। ১০-১২ বছরের শিক্ষার্থীও রয়েছে। ইউনাইটেড স্পোর্টসের সিনিয়র, জুনিয়র, রিজার্ভ দল মিলিয়ে ১০-১২জন কোচ রয়েছেন। দলের হেড কোচ স্টিভেন হারবোট্স ছাড়াও দেবরাজ চ্যাটার্জি, অঞ্জন নাথের মত প্রথম সারির ফুটবল কোচের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যেই প্র্যাক্টিস শুরু করেছেন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মণিপুর থেকে আসা এই ফুটবলাররা।
অর্ণব ভৌমিকের কথায়, ‘‘এই ছেলেগুলোর মধ্যে কয়েকজনের খেলা খুবই ভালো মানের। আগামীদিনে আমাদের এলিট টিমের জন্য তাঁদের দিকে নজর থাকবে।’’
গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুণ পেরিয়ে নতুন ভোরের স্বপ্নে ইতিমধ্যেই মশগুল ২৪জন কিশোর। সাধে কি আর বলে, কত ঝড় বিবাদ সামাল, জিতে খেলাই কথা বলে!
Comments :0