কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ, কতটা তৈরি কাতার?

খেলা

QATAR FIFA WORLD CUP 2022 WORLD CUP

রবিবার কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে কিক অফ হতে চলেছে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের। অর্থাৎ হাতে সময় তিনদিনেরও কম। এই প্রথমবার বিশ্বকাপ আয়োজনের গুরু দায়িত্ব পালন করছে আরব দুনিয়ার দেশ কাতার। কিন্তু তারা কতটা তৈরি? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমরা। 

২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর অবধি চলবে কাতার বিশ্বকাপ। মূলত দোহা শহরকে কেন্দ্র করে চলবে যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। দোহা শহর এবং লাগোয়া অঞ্চলের মোট ৮টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সমস্ত ম্যাচ খেলা হবে। এরমধ্যে নবনির্মিত স্টেডিয়ামের সংখ্যা ৭। ২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের ছাড়পত্র অর্জন করে কাতার। তারপর টানা ১২ বছর ধরে চলে স্টেডিয়ামগুলি নির্মাণের কাজ। নবনির্মিত স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে সবথেকে নজরকাড়া হল লুসাইল স্টেডিয়াম। চীনের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এই স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা ৮০ হাজার। বিশ্বকাপের ফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। এছাড়াও এই স্টেডিয়ামেই গ্রুপ লিগের ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, উরুগুয়ে, ক্যামেরুন, মেক্সিকো প্রভৃতি দল। হবে নক আউট পর্যায়ের ম্যাচও।

নতুন স্টেডিয়ামগুলির পাশাপাশি খালিফা ইন্টার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এই স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা ৪০ হাজার। ইংল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন, জাপানের মতো দলগুলি এই স্টেডিয়ামে গ্রুপ লিগের ম্যাচ খেলবে। নক আউট পর্যায়ের ম্যাচও সেখানে খেলা হবে। 

ফিফার অনুমান, বিশ্বকাপ চলাকালীন অন্ততপক্ষে ১২ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী পা রাখতে চলেছেন কাতারে, যা কাতারের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই বিপুল পরিমাণ চাপ কিভাবে মোকাবিলা করবে কাতার? কাতারের শুরা কাউন্সিল বা সেদেশের সংসদের একাধিক সদস্যের দাবি, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই এক মাসের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে কাতার। এই জন বিষ্ফোরণকে মাথায় রেখেই ঢেলে সাজানো হয়েছে সেদেশের পরিকাঠামো। ধারাবাহিক ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সমস্ত অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের জন্য হোটেল, রিসোর্ট, অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভিলা। ফুটবল পর্যটকরা চাইলে কাতারের মরুভূমিতেও তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। রয়েছে সে ব্যবস্থাও। এর পাশাপাশি আয়োজন রয়েছে হোম স্টেরও। 

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে কাতারের রাজধানী দোহা শহরে ৩টি ভাসমান হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩টি হোটেলের মোট শয্যা সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এর পাশাপাশি দোহা শহরের উত্তরে একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে। সেই দ্বীপের মরুভূমিতে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে পারবেন ৩ হাজারের ফুটবল প্রেমী। এতকিছুর পরেও কাতারে থাকার যায়গার অভাব হলেও কুছ পরোয়া নেহি। পর্যটকরা চাইলে পার্শবর্তী দুবাই, মাস্কাট কিংবা জেড্ডা শহরেও থাকতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা সুগম করতে বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রতিদিন ৫০০’র বেশি বিমান দোহার সঙ্গে এই শহরগুলির সংযোগ রক্ষা করবে। 

এতো গেল আস্তানার কথা। কাতারের গণ পরিবহণ ব্যবস্থার কি খবর? বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে কাতার জুড়ে সড়ক পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হয়েছে। ২০১৯ সালে দোহায় গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক মেট্রো রেল পরিষেবা। এছাড়াও শহর জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রাম লাইন। ফুটবল প্রেমীদের সুবিধার জন্য কাতারের সরকার চালু করেছে হাইয়া কার্ড। এই কার্ড সঙ্গে থাকলে ১০ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর অবধি কাতারের সমস্ত গণপরিবহণে বিনামূল্যে ভ্রমণ করা যাবে। 

কাতারের ৮টি স্টেডিয়ামে খেলা হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, দোহা শহরের ৫৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই প্রতিটি স্টেডিয়াম রয়েছে। ফলে দর্শকরা চাইলে দিনে একটির বেশি ম্যাচও দেখতে পারবেন। ৮টির মধ্যে ৫টি স্টেডিয়ামে মেট্রো রেলের সংযোগ রয়েছে। বাকি স্টেডিয়ামগুলি থেকে মেট্রো স্টেশন যাওয়ার জন্য শাটল বাস পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। 

আয়োজকদের অনুমান, বিশ্বকাপ চলাকালীন প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার দর্শক ‘ট্র্যান্সপোর্ট হাব’গুলি থেকে ৮টি স্টেডিয়ামে যাতায়াত করবেন। সেই অনুযায়ী ৪ হাজার বাস নামানো হয়েছে দোহা শহরের রাস্তায়, যার মধ্যে ইলেকট্রিক চালিত বাসের সংখ্যা ১ হাজার।  

এই সাফল্যের পাশাপাশি কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে বিতর্কও কম দানা বাঁধেনি। বিশ্বকাপ সংক্রান্ত পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য নিয়োগ করা হয় ২৬ হাজারের বেশি নির্মাণ শ্রমিককে। যাঁদের সিংহভাগের ঠিকানা ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। অভিযোগ ওঠে, শ্রমিকদের চরম হারে শোষণ করা হচ্ছে কাতারে। কর্মরত অবস্থায় প্রাণ হারান কয়েক হাজার শ্রমিক। আন্তর্জাতিক মহলের চাপে শ্রমিক বান্ধব বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয় কাতারের রাজতন্ত্র। কিন্তু অভিযোগ, সেদেশের প্রভাবশালী অংশের চাপে সেই নীতি কার্যক্ষেত্রে লাগু করা হয়নি। এর পাশপাশি স্টেডিয়ামগুলির গুণগত মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ৯ সেপ্টেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে সৌদি-ইজিপশিয়ান সুপার কাপ আয়োজিত হয়। দর্শকদের অভিযোগ, সেই ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে জল পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও শৌচাগারগুলির অবস্থা তথৈবচ। বহু আসন ব্যবহারের অযোগ্য- এমন অভিযোগও উঠে আসে। সদ্য নির্মিত স্টেডিয়ামের এমন দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিফাও। 

 

Comments :0

Login to leave a comment