JYOTIPRIYO MALLICK ARREST

রেশন দুর্নীতি অস্বীকার করতে পারছে না তৃণমূল, হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়

রাজ্য

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS ration corruption jyotipriya mallick

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রেশন দুর্নীতি কান্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে সল্টলেকের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ব্যাঙ্কশাল আদালত তাঁকে ১০ নভেম্বর অবধি ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিলেও, অসুস্থতার কারণে ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে বর্তমানে সিসিইউ’তে রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 

জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গে ইডি আদালতে জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতি কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া বাকিবুর রহমানের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর পরিবারের আর্থিক লেনদেনের হদিশ মিলেছে। ইডি’র দাবি, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে বিমানের টিকিটও কেটে দিয়েছিলেন বাকিবুর। যদিও সেই টিকিট বাতিল করতে হয়। 

ইডি আদালতে জানিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি এবং মেয়ের অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকার খোঁজ মিলেছে। এই টাকার উৎস জানাতে পারেননি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। 

একইসঙ্গে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ৩টি সংস্থায় খোলা বাজারে রেশনের শস্য বিক্রির টাকা ঢুকেছে। তার মধ্যে শ্রী হনুমান রিয়েলকন প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার নাম সামনে এসেছে। 

এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানতেন জ্যোতিপ্রিয় গ্রেপ্তার হবেন। তাঁর সঙ্গে দিল্লির নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানতেন দুর্নীতি হয়েছে। গ্রেপ্তারি সম্পর্কে জানতেন বলেই ইডি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করানোর হুমকি দিয়েছেন। গোরু এবং কয়লা পাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে অনুব্রত মন্ডলের বেলাতেও এমন হুমকি দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি।’’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য দুর্নীতির কথা বলে আসছে সিপিআই(এম)। সুজন চক্রবর্তীও বিধানসভায় তুলে ধরেন এই বিষয়। চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘তৃণমূল বলে চলেছে ১০ কোটি মানুষকে রাজ্যে রেশন দেওয়া হয়। অথচ রাজ্যের মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি। এরমধ্যে ২০ শতাংশ রেশন নেন না। অর্থাৎ প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি মানুষের রেশন চুরি হয় প্রতি সপ্তাহে।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও দুর্নীতির পরিমাপ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘রেশন দুর্নীতি অনেক বড় মাপের। নিয়োগ দুর্নীতির থেকেও বেশি টাকা জড়িত।’’

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘‘ সাড়ে ৬ কোটি মানুষ রেশনের উপর নির্ভরশীল। এই দুর্নীতির সঙ্গে কৃষকের অতীত-বর্তমান জড়িত। কেন্দ্রের রেশন খাতে বরাদ্দ অর্থ জড়িত।’’

তৃণমূলের তরফে শুভেন্দুকে পালটা আক্রমণ করেছেন নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু ক্যামেরার সামনে টাকা নিয়েছেন। সেই দুর্নীতির পরেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসলে তৃণমূল পুজোর পরে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে পথে নামতে চলেছে। সেই আন্দোলন থেকে নজর ঘোরাতেই এই গ্রেপ্তারি।’’

লক্ষ্যণীয়, মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে শশী পাঁজা, কেউই বলতে পারেননি যে দুর্নীতি হয়নি। তথ্য বলছে, খাদ্য দুর্নীতির তদন্তে নেমে বাকিবুরের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করেছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। স্বাভাবিক ভাবেই সেই দায় তৃণমূল ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই কাজ করছে বিজেপি। 

মমতা ব্যানার্জিও সেই সুরে বলেছেন, ‘‘বিজেপির দুর্নীতির খতিয়ান আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিই নি।’’

তিনি দিল্লিকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, আমরা তোমাদের দুর্নীতিকে ছাড় দিচ্ছি। তোমরাও আমাদের ছাড় দাও। 

যদিও এই গোটা ঘটনায় অপর একটি বিষয় চাপা পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি ও কয়লা পাচার কান্ডে জড়িয়ে জেলে রয়েছেন তৃণমূলের একাধিক ‘হেভিওয়েট’। যেমন পার্থ চ্যাটার্জি, অনুব্রত মন্ডল, জীবনকৃষ্ণ সাহা, মানিক ভট্টাচার্য। সমস্ত দুর্নীতিতেই নাম জড়িয়েছে অভিষেক ব্যানার্জির। তাঁর সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের শীর্ষকর্তা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন। কিন্তু তবুও ইডি অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডি’কে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ইডি’র তদন্তকারী অফিসারকেও। 

এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা হাবড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় রেশন দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছে সিপিআই(এম)। 

Comments :0

Login to leave a comment