Mamata Banarjee Amit Shah

২০০ মি. পোরোতেও অমিতের গাড়িতে মমতা

জাতীয় রাজ্য

সভাঘরের লাগোয়াই রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর বহুতল নবান্ন। সাকুল্যে ২০০ মিটার দূরত্ব। অতি স্বল্প দূরত্বের এই পথেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর গাড়ির সওয়ারি হলেন মমতা ব্যানার্জি। 
এখানেই থামেনি সখ্য। ২০০ মিটার পথ পাড়ি শেষে গাড়ি দাঁড়িয়েছিল নবান্ন’র ভিআইপি ফটকের দোরগোড়ায়। অতিথিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভিআইপি লিফট উঠে যায় সোজা ১৪ তলায়। লিফট পথেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গী মুখ্যমন্ত্রী। 
এরপর দুপুর ২টা ১২মিনিট থেকে ২টা ২৮মিনিট। টানা ১৬মিনিট নবান্নে একান্ত বৈঠক সারেন অমিত শাহ ও মমতা ব্যানার্জি। বৈঠক সেরে ২টা ৩২ মিনিটে লিফটে চড়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে নামিয়ে আনেন গাড়ির দরজায়। নবান্ন ছাড়েন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর গাড়ি দৃষ্টি গোচরে থাকা পর্যন্ত ভিআইপি গেটের সামনে ঠায় অপেক্ষায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 
গোটা কর্মসূচির কোনোটাই পূর্ব নির্ধারিত ছিল না। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ— এই চার রাজ্য নিয়ে গঠিত পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকের এবারের আয়োজক ছিল এরাজ্যেই। নির্ধারিত সূচিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠক শেষে দুপুরের খাওয়ার পর বেলা দেড়টার মধ্যে নবান্ন ছাড়ার কথা। কিন্তু সেই সূচি পার করে নবান্নে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে যাওয়া নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেননি। নবান্ন থেকে অমিত শাহ পৌঁছে যান কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে তাঁর গুয়াহাটি যাওয়ার কথা। আর অমিত শাহ নবান্ন ছাড়ার অল্প কিছু পরেই মুখ্যমন্ত্রীও রওনা দেন কালীঘাটের পথে। 
এর আগে গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে গিয়ে একান্ত বৈঠক করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সে দফায় তবু রাজ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে দেওয়া দাবিপত্র সংবলিত চিঠি পাঠিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু এবার তারও ধারপাশ মাড়াননি মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি এদিন পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে আসা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে পর্যন্ত সময় দিতে চাননি মমতা ব্যানার্জি। বিজেপি বিরোধী দুই সরকারের মুখ্যমন্ত্রীদের থেকেও বৈঠক শেষ হওয়ার পর তাঁর আগ্রহের যাবতীয় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন অমিত শাহ-ই। 


সূত্রের খবর, নবান্ন সভাঘরের সামনে একমাত্র অমিত শাহর গাড়ি রাখার ব্যবস্থা ছিল। লাঞ্চের পর গাড়িতে ওঠার সময়ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীই মমতা ব্যানার্জিকে তাঁর সওয়ারি হতে অনুরোধ করেন। ২০০ মিটার যাত্রা নিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘ বৈঠকের উপলক্ষ যাই থাক, লক্ষ্যটা বোঝা গেল। লক্ষ্যটা হচ্ছে, আরও কাছাকাছি, আরও পাশাপাশি। ২০০ মিটার হচ্ছে, আগামী দিনে আরও কয়েক কিলোমিটার পথ চলার রোডম্যাপ। ২০০ মিটার হচ্ছে বিজেপি-তৃণমূলের পথ চলার রোডম্যাপ। আসলে আইন আইনের পথে চলবে, না লাইনে চলবে, সেই পথের দিশাই দিয়েছে ২০০ মিটার।’’
রাজনৈতিক মহলের কাছে এদিন মমতা ব্যানার্জি ও অমিত শাহ’র নির্ধারিত সূচির বাইরে একান্ত সাক্ষাৎকার যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে বিধানসভা অধিবেশনে প্রকাশ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সিবিআই, ইডি’র ধরপাকড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না বলে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আরএসএস সম্পর্কেও মমতা ব্যানার্জির ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে যাবতীয় আক্রমণের নিশানায় রেখেছিলেন অমিত শাহ’কেই। এমনকি কলকাতায় ইডি দপ্তরে হাজিরা দিয়ে এসে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি পর্যন্ত অমিত শাহ’র নাম করে ‘বড় পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সেই অমিত শাহ’কে নিয়ে এরপর একান্ত বৈঠক দু’তরফের কোনো বোঝাপড়া, নাকি মমতা ব্যানার্জির আত্মসমর্পণ তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। 
অথচ এমন একটা সময়ে রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক বসলেন অমিত শাহ তখন উত্তরবঙ্গ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যভাগের এই আলোচনা এদিন কোনোভাবেই উঠে আসেনি পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকে। রাজ্যের তরফে মমতা ব্যানার্জি, রাজ্যের মুখ্যসচিব কাউকেই উত্তরবঙ্গ নিয়ে এমন কোনও আশঙ্কার প্রসঙ্গ উত্থাপনই করা হয়নি। মহম্মদ সেলিম বলন, ‘‘রাজ্যের যে সমস্যা, বিএসএফ নিয়ে যেসব সমস্যা তার কতোটা আলোচনা হলো, উত্তরবঙ্গ নিয়ে কথা হলো তা জানা গেল না। মমতা ব্যানার্জি যখনই কোনও বৈঠক করেন, তখনই ফলাও করে বলেন, এই আমাদের দাবিসনদ। আমরা এইসব বলেছি। সেটা আজকে তিনি কিছু বললেন না। প্রতিদিনই দু’পক্ষ সাজানো মঞ্চে হুঙ্কার দিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে একে অপরকে কী স্বার্থরক্ষা করলো একান্ত সভায়।’’


এদিন নবান্ন সভাঘরে পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকে মূলত নদী ভাঙন, জলবণ্টন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পড়শি রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়, নিরাপত্তা নিয়ে যে সমস্ত সমস্যা আছে তা কীভাবে নিরসন করা যায় তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ’র নজরদারি বাড়ানোর কথাও উঠে আসে এদিনের বৈঠকে। বৈঠকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। ওডিশার তরফে ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তুষার কুমার বেহেরা ও বনমন্ত্রী প্রদীপ কুমার আমাত। ছিলেন বিহারের অর্থমন্ত্রী বিজয় চৌধুরি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকরা। 
সভাঘরের আড়াই ঘণ্টার প্রশাসনিক পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের থেকেও ১৬ মিনিটের ১৪তলার একান্ত বৈঠকই শেষ পর্যন্ত নজর কেড়েছে সবার।

Comments :0

Login to leave a comment