শুক্রবার কলকাতার মৌলালি যুবকেন্দ্রে রাজ্য বামফ্রন্টের ডাকা এক গণ কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই বলেন তিনি।
সেলিম বলেন, বিজেপি ধর্মকে, মানুষের বিশ্বাসকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাঁরা সন্দেশখালির মহিলাদেরও ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু যখন মণিপুরের মহিলারা কাঁদছিলেন, তখন মোদী কোথায় ছিলেন? হাথরসের ঘটনার সময় তিনি কোথায় ছিলেন? পদকজয়ী কুস্তিগীরদের আন্দোলনের সময় তিনি কোথায় ছিলেন? আসলে মমতা ব্যানার্জি এবং মোদি রাজনীতিকে নাটকের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
প্রসঙ্গত, কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানী ও যৌন নিগ্রহের অভিযোগে সরব হন ভীনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক, বজরঙ্গ পুনিয়ার মত আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজয়ী কুস্তিগিররা। কিন্তু আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়ে ব্রিজভূষণ সিংকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
আরামবাগের সভা থেকে মোদী বলেছেন, লুট যা হয়েছে সব উদ্ধার করা হবে। এর প্রেক্ষিতে সেলিম বলেন, শাহজাহানকে ধরতে সাধারণ মানুষকে আন্দোলন করতে হল, জেলে যেতে হল, নিরাপদ সর্দার গ্রেপ্তার হলেন, মীনাক্ষি মুখার্জিকে যেতে হলো। আর বিজেপি মেহুল চোকসিকে গ্রেপ্তার করতে কতদিন লাগাচ্ছে? শাহজাহান কোথায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না, আর যারা ব্যাঙ্ক লুট করে পালাল তাদের খবর বিজেপি সরকার জানে না। এরা দুজনেই লালকৃষ্ণ আদবানির পাঠশালায় পড়েছে। কলকাতা কর্পোরেশনের মতো সন্দেশখালিতে তৃণমূল আর বিজেপি একসঙ্গে মিলে পঞ্চায়েত চালিয়েছে। মোদীর রাজত্বে লুট বন্ধ হবে না। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে কটা কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী? পিএম কেয়ার্সের টাকা লুট নিয়ে কেন কোনও কথা বলেননি তিনি?
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা সন্দেশখালি নিয়ে চুপ। এই বক্তব্যকে আক্রমণ করে সেলিম বলেন, বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা অতিক্রম করে বামপন্থীরা সন্দেশখালিতে গিয়ে সভা করেছে। ঘটনা সামনে আসার পর থেকে বামপন্থীরা সক্রিয়া ছিলেন। এর থেকেই প্রমাণ হয় প্রধানমন্ত্রীও মমতা ব্যানার্জির মতো মিথ্যা কথা বলতে অভ্যস্ত মোদীও।
লোকসভা নির্বাচনের জন্য রাজ্যে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। বিভিন্ন স্কুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্ষদ সভাপতি বলেছেন, তিনি এর কিছুই জানেন না।
এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দিতে চায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের মত বিষয়গুলি তো রাজ্য এবং কেন্দ্রের একসঙ্গে বসে ঠিক করার কথা। সেটা হয়নি কেন? কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার জন্য ব্যারাক তৈরি করে না কেন তৃণমূল সরকার? ভোটের সময় কোটি টাকা খরচ করে প্লেন ভাড়া নিতে পারলে তৃণমূলকে এই দায়িত্বও নিতে হবে। সাধারণতন্ত্র দিবসে আসা জওয়ানরা তাঁবু খাটিয়ে থাকেন। এখন সেটা হচ্ছে না কেন?
সেলিম বলেন, ভোট তো কেবল বাহানা। বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২৯ সালের পর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনও স্কুল কলেজ থাকবে না। এটা তার পাইলট প্রোজেক্ট।
অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, কেবলমাত্র ভাইপোকে বাঁচাতে রাজ্যের অধিকার সঙ্কুচিত করে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। তাই নির্বাচন ঘোষণার আগেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে আসে। কিছু টাকার বিনিময়ে তিনি রাজ্যের এক্তিয়ারকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সমর্পন করছেন। আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের অধীনে। কিন্তু রাজ্য পুলিশ সমাজবিরোধীদের রক্ষা করছে। সেই সুযোগে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে ঢুকে পড়ছে।
শুক্রবার তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান কুণাল ঘোষ। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, শীঘ্রম মঙ্গলম। কুণাল ঘোষের মতো অপদার্থ, জেলা খাটা আসামী যত রাজনীতির আঙিনা থেকে দূরে থাকে, তত বাংলার রাজনীতি রক্ষা পাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘লঙ্কাকান্ড বাঁধাতে গিয়ে মুখপাত্রের মুখ পুড়েছে।’’
ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধে বিজেপির তোলা পরিবারবাদের অভিযোগ নস্যাৎ করে সেলিম বলেছেন, জয় শাহ বিসিসিআই’র চেয়ারম্যান হয়েছে অমিত শাহের ছেলে বলে। সমস্ত ক্রীড়া সংস্থার মাথায় নিজেদের লোক বসিয়েছে বিজেপি। আর মমতা ব্যানার্জি নিজের পরিবারের সদস্যদের ক্রীড়াক্ষেত্রের মাথায় বসিয়েছে। বিজেপি যে কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে পরিবারবাদের অভিযোগ আনত, আজ তাঁদের সন্তানরা সবাই বিজেপি করে। একমাত্র বামপন্থীরা পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেয় না।
প্রসঙ্গত, জিতিন প্রসাদ, জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি’তে যোগ দেওয়া নেতারা কংগ্রেস নেতাদেরই সন্তান।
Comments :0