Trump

এখনই এইচ ১বি ভিসা নেওয়া কর্মীদের আমেরিকা না ছাড়ার নির্দেশ মেটা, মাইক্রোসফটের

আন্তর্জাতিক

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীদের উপর নতুন করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং বৈধ অভিবাসনের উপর বিধিনিষেধ আরোপের পর, শনিবার সকালে মেটা এবং মাইক্রোসফটের মতো সংস্থা গুলি তাদের সমস্ত এইচ ১বি ভিসাধারী কর্মীদের অন্তত ১৪ দিনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছে বলে খবর। 
সূত্রের খবর মাইক্রোসফট কর্মীদের মেইলে জানিয়েছে, ‘যাঁদের কাছে ‘এইচ-১বি’ এবং ‘এইচ-৪’ ভিসা রয়েছে, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমেরিকায় ফিরতে। 
সংস্থাগুলির এই সিদ্ধান্তের পিছনে ট্রাম্পের ভিসা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘোষণা প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার একটি নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এইচ-১বি’ ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলির কাছ থেকে বছরে এক লক্ষ ডলার নেবে সরকার। ‘এইচ-১বি’ ভিসা অতি দক্ষ কর্মীদের জন্য চালু বিশেষ ভিসা। এই ভিসার কারণে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা আমেরিকায় থেকে সেখানকার সংস্থায় কাজ করেন।মার্কিন অভিবাসী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২২’র অক্টোবর থেকে ২০২৩’র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ ভিসা দেওয়া হয়েছে। তার ৭২ শতাংশ ভারতীয়।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচার অভিবাসীদের বিষয়টি ছিল একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। বার বার ট্রম্পের মতো দক্ষিণপন্থীকে নেতাকে বলতে শোনা গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোকেরা যাতে কর্মক্ষেত্রে নিজের দেশে বাড়তি সুবিধা পায় সেই দিকে নজর দেওয়া হবে তিনি ক্ষমতায় এলে। উগ্র প্রচার চলে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে যার ফলে সরাসরি অ-অভিবাসীদের মার্কিন সংস্থায় কাজের সুযোগ বন্ধ না করে দিয়ে সংস্থার গুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ঘুর পথে তাদের কাজের সুযোগ বন্ধ করে দিতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় শাসনকালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজেদের নখ, দাঁত খিঁচিয়ে নিজেদের স্বরূপ দেখাচ্ছে। নিজেদের দেশের সংস্থা গুলোকে আর্থিক বোঝা চাপিয়ে যেমন বাধ্য করছে তাদের উদ্দেশ্যপূরণ করতে, তেমন ভাবে বিভিন্ন দেশের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে।
তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ যে একটি সঙ্কটের মুখে পড়তে চলেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারত সহ বিভিন্ন দেশের মেধাবীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। তাদের ওপর ভিত্তি করেই তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মার্কিন দাপট। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে বিশেষ বিশেষ দেশ, ব্যক্তি এবং সংস্থা বেছে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা দপ্তর। আপাতত এই নির্দেশিকা ১২ মাস জারি থাকবে। জাতীয় অভিবাসন দপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কর্মী কাজ করে অ্যামাজনে। প্রায় দশ হাজার কর্মী। তারপর টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস)এ ৫৫০৫। মাইক্রোসফটে ৫১৮৯ জন, মেটায় ৫১২৩ জন, অ্যাপেলে ৪২০২ জন, গুগুলে ৪১৮১ জন।  এখানেই প্রশ্ন থাকছে এই এতো জন কর্মীদের জন্য কি এই বিপুল টাকা খরচ করবে সংস্থা গুলো? নাকি ফের কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবেন তারা? 
চলতি বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মেগা বিল’ অর্থনীতিতে ভরসা দিতে পারছে না। জুলাই মাসে প্রায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ‘মাইক্রোসফট’।
ট্রাম্পের ১ হাজার পাতার মেগা বিলে কর্পোরেট এবং মহাধনীদের ৯৭০০০ কোটি ডলারের কর ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করেন ট্রাম্প। তার বিনিময়ে ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা হয়েছে আমেরিকার আমজনতার চিকিৎসা বিমা সংক্রান্ত খাতে। সামাজিক সুরক্ষায় হাত পড়ার আশঙ্কা জানিয়েছে বিভিন্ন অংশ। তবে অর্থনীতির অস্থিরতা কাটার লক্ষণ নেই বলে মত বিশ্লেষকদের।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে যে কর্মী সংখ্যার ৪ শতাংশ বা ৯ হাজার ১০০ জনকে ছাঁটাই করে বহুজাতিক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট। এর আগে ২০২৩-এ প্রায় ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল এই সংস্থা। 
অভিবাসীদের তাড়িয়ে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের কাজ এবং রোজগারের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। নিম্ন আয়ের এই অংশের ভোটেই আসীন তিনি। সঙ্গে ছিল বহুজাতিক কর্পোরেটের বিপুল খরচে চালানো প্রচার। বিরোধীরা বলছেন, কাজ বাড়ার বদলে ছাঁটাই বাড়ছে। একাধিক কর্পোরেট ছাঁটাইয়ে নেমেছে। তার ওপর আমদানি কর বাড়ানোয় বিপদে পড়েছে ছোট মাঝারি বহু সংস্থা।

Comments :0

Login to leave a comment