NEP education privataisation

ক্ষোভ জাতীয় শিক্ষা দিবসে: নিম্নবিত্ত, গরিব অংশের জন্য বন্ধ হচ্ছে দরজা

জাতীয়

মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে স্মরণে সরকারি অনুষ্ঠান তো হচ্ছে, কিন্তু দেশে শিক্ষার হাল কী? প্রশ্ন উঠছে জাতীয় শিক্ষা দিবসে।

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তাঁর জন্মদিন ১১ নভেম্বরকে জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। এদিনই প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে। শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বলছেন, শিক্ষার আঙিনার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিম্নবিত্ত, প্রান্তিক অংশকে। বেসরকারিকরণই হয়েছে প্রধান লক্ষ্য।

এবিটিএ’র সভাপতি কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষা নীতি রূপায়ন করতে বিজেপি সরকার কারোর সঙ্গে কোনও আলোচনায় যায়নি। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্রীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ও বেসরকারিকরণের পথই বেছে নিয়েছে। সরকার এই ভাবেই নিঃশুল্ক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। সেই ইংরেজ আমলের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ফিরে যাচ্ছে। যেখানে মাত্র সমাজের গুটি কয়েক মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাবে।’’

পশ্চিমবঙ্গে বহু স্কুলে নেই স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি, তার ওপর নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হচ্ছে না রাজ্যে। থমকে গিয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া ফলে স্কুলে স্কুলে পদ ফাঁকা অথচ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সফল চাকরিপ্রার্থীদের লাগাতার পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়তে হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সব স্তরেরই মত, শুধু ইংরেজি মাধ্যমের জন্যই অভিভাবকরা সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন তা নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব, পরিকাঠামোর অভাবও বড় কারণ

২০১৮’র কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্য অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.৪ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের সাক্ষরতার হার ৮২.৪ শতাংশ এবং মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৬৫.৮ শতাংশ এখনও অনেকটাই পিছিয়ে দেশে মহিলাদের শিক্ষার হার। 

এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে গোটা দেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। শিক্ষার বেসরকারিকরণ বাড়াতেই বিজেপি শাসিত আসামে ৮ হাজার শিক্ষক পদ তুলে দিল সরকার। প্রতিবাদ জানাতে গেলে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই কর্মীদের মারধর করছে আসাম সরকার। পশ্চিমবাংলায় সেই একই অবস্থা স্কুলগুলোর হাল বেহাল, বেড়েছে স্কুল ছুটের সংখ্যা। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নেই, স্কুল গুলোতে পড়ানোর মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। এভাবেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এবং বাংলায় তৃণমূল গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিতে চাইছে। আর প্রতিবাদ করলেই জুটছে মার।’

জাতীয় শিক্ষা দিবসে এবার অন্যতম প্রধান আলোচ্য ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’। বিজেপি সরকারের আনা শিক্ষা নীতিতে ঠিক কতটা শিক্ষার অগ্রগতি হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে বহু শিক্ষক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজনেরা থেকে সাধারণ মানুষ। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উচ্চ শিক্ষা সমস্ত ক্ষেত্রেই লাগু হবে এই নতুন শিক্ষা নীতি।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু গণশক্তি ডিজিটালকে বলেছেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি প্রাথমিক দৃষ্টিতে নতুন মনে হলেও আদপে তা নয়। নতুন শিক্ষা নীতিতে অনেক কয়টি বিষয় আছে তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নীতি তৈরির করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যগুলোর সঙ্গে কোনও আলোচনায় যায়নি, বরং পুরোটাই চাপিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব ইতিহাস, ভুগোল এমনকি নিজস্ব সাহিত্যও আছে। সেই সব জানার সুযোগ পাবে না ভবিষ্যত প্রজন্ম।’’ 

বসুর ক্ষোভ, ‘‘সারা দেশের শিশুদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার যা চাপিয়ে দেবে সেটাই তারা তোতা পাখির মতো শিখবে। সেটা মোটেই শিক্ষার মানকে উন্নত করতে পারে না। এই ‘এক দেশ এক শিক্ষার’ সঙ্গে ‘এক দেশ এক ভাষা’ ভাবনাটাও বাস্তবায়িত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। একই সঙ্গে স্কুল শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি, অনলাইন মাধ্যমগুলোকে পড়ানোর অনুমতি দিচ্ছে সরকার। ফলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলোই এক সময় শিক্ষা ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করবে’’

শিক্ষামহলের আশঙ্কা, ১০+২ শিক্ষা ব্যবস্থা উঠে গিয়ে আসছে ৫+৩+৩। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০’তে থাকছে না মাধ্যমিক উচ্চ-মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা। তার পরিবর্তে ন্যাশনাল ট্যালেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে দশম শ্রেণি থেকে সেমেস্টার ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখানে থাকছে না কোনও বোর্ড বা পর্ষদ। শিক্ষাবিদদের মতে, এই সব পরীক্ষা পাশ করানোর জন্য মুড়ি-মুড়কির মতো গজিয়ে উঠবে কোচিং সেন্টার। এখনই রয়েছে, আরও বাড়বে। আর 

ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আর যাদের আর্থিক ক্ষমতা থাকবে তারা বেসরকারি শিক্ষা মাধ্যম থেকে পড়াশোনা করবে। ভবিষ্যতে বিষয় ভিত্তিক পড়াশোনাও তুলে দিয়ে বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পাওয়ার মতো কিছু রোবট তৈরি করবে’’ 

প্রসঙ্গত চলতি বছরের বাজেটের বাজেটের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে কিভাবে কেন্দ্রীয় সরকার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে তুলে দিত চাইছে। টিভি চ্যানেলে অনলাইন ক্লাস যেখানে প্রায় ২০টি শিক্ষা বিষয়ক চ্যানেল আনছে সরকার। অর্থাৎ বাড়িতে বসে বিচ্ছিন্ন ভাবে লেখাপড়া করবে শিশুরা যা মোটেই বাস্তবোচিত নয় বলে মনে করছেন কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্য। 

 

Comments :0

Login to leave a comment