NCRB report West Bengal

নাবালিকা ধর্ষিতা হয়নি, দাবি রাজ্যের ধর্ষিতাদের ৬২ শতাংশের বয়স ১৮-৩০ ‘ধর্ষণের চেষ্টা’য় রাজ্য দ্বিতীয়

জাতীয় রাজ্য

‘সব তিলোত্তমার বিচার চাই’, এই স্লোগানে সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের গ্রাম, শহর। মূলত ২০২৪-এর আগস্টে আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই স্লোগানে মুখর হয়েছে রাজ্য।
কিন্তু বিচারের দাবি বিপন্ন পশ্চিমবঙ্গে, জানাচ্ছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের উপর আক্রমণের ঘটনার মাত্র ৩.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির শাসনে পুলিশ দুষ্কৃতীদের স্বার্থে কাজ করছে, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো(এনসিআরবি)-র এই তথ্য তার প্রমাণ।
দীর্ঘদিন বাদে এনসিআরবি’র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতাধীন এনসিআরবি। শুক্রবার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা দেশের ২০২৩-এর অপরাধ-চিত্র। রাজ্য সরকারগুলির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতি বছর এই রিপোর্ট তৈরি করে এনসিআরবি। ২০২৩-এর অপরাধ-চিত্র প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে। এবার তা এক বছরের বেশি সময় পর প্রকাশ করল অমিত শাহ্‌র মন্ত্রক। 
সেই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২৩-এ মহিলাদের উপর আক্রমণের ৩,৮৮,৫৫৭টি ঘটনা আদালতে বিচারের জন্য পেশ করে রাজ্য পুলিশ। তার মধ্যে ২০২৩-এর অপরাধমূলক ঘটনা ছিল মাত্র ৩২,২২৭টি। ২০২২-এর ঘটনা ছিল ৩,৫৬,৩৩০।
ক’টি ঘটনার বিচার শেষ হয়েছে? এনসিআরবি জানাচ্ছে্, পশ্চিমবঙ্গে ১৯,৯৫৩টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অর্থাৎ ৩,৮৮,৫৫৭টি মামলার মধ্যে বিচার শেষ হয়েছে মাত্র ১৯,৯৫৩টি ঘটনার। মোদ্দা কথা— বিচার শেষ হয়েছে মাত্র ৫.১ শতাংশ অপরাধের। 
সাজার হারের অবস্থা আরও খারাপ। মাত্র ৭৪৮টি ঘটনায় বিচার শেষে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে। অর্থাৎ সেই হার ৩.৭ শতাংশ। দেশের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সবার শেষে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ৮৪১ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জন মহিলা। বাকিরা পুরুষ। 
সিপিআই(এম)’র সাংসদ, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেছেন, ‘‘কনভিকশন রেট বলে দিচ্ছে রাজ্যের সরকার কী করছে। মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী। আদালতের সামনে, বিচারপতিদের সামনে পুলিশ যা তথ্য প্রমাণ হাজির করে তার ভিত্তিতে বিচার হয়। নারীদের উপর বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনায় তথ্য প্রমাণ জোগাড়ে পুলিশের দুর্বলতা বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়। রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনাগুলির কনভিকশন রেট বলে দিচ্ছে অপরাধীদের পুলিশ আড়াল করতে কাজ করছে।’’ 
তাৎপর্যপূর্ণ হলো শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনাতেও পশ্চিমবঙ্গে সাজার হার অত্যন্ত কম, মাত্র ৮.১ শতাংশ। এই ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ দেশের পিছনের সারিতে। পশ্চিমবঙ্গের পিছনে শুধু অন্ধ্র প্রদেশ এবং গোয়া।
এনসিআরবি জানাচ্ছে, ২০২৩-এ রাজ্যে ১৮ বছরের কম বয়সি কোনও কিশোরী ধর্ষিতা হননি। অর্থাৎ ওই বছর নাবালিকা ধর্ষণের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এনসিআরবি-কে রাজ্য সরকার তেমনই তথ্য দিয়েছে। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন,‘‘তথ্য গোপন করায় বিজেপি এবং তৃণমূলের সরকার সর্বদা তৎপর। কখনও দাবি করে রাজ্যে কোনও কৃষকই আত্মহত্যা করেননি। এবার দাবি করেছে নাবালিকা কেউ ধর্ষিতাই হননি ২০২৩-এ। আসলে পুলিশ সেই অনুসারে কেস করেনি। দুষ্কৃতীদের আড়াল করতে পুলিশ নিজের মতো কেস সাজিয়েছে।’’
কিন্তু রাজ্যের তথ্য রাজ্যই খারিজ করেছে একই রিপোর্টে। এনসিআরবি’র রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২৩-এ রাজ্যে ৫জন তফসিলি জাতির মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ জনের বয়স ১৮-র কম। তাহলে সামগ্রিক রিপোর্টে নবালিকাদের কেউ ধর্ষিতা হননি এমন দাবি রাজ্য সরকার কেন করল, এই প্রশ্ন থাকছেই। ওই বছর রাজ্যে আদিবাসী মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন ৬ জন, রিপোর্ট তাই জানাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে নাবালিকা কেউ নেই বলে রাজ্য সরকার দাবি করেছে। রাজ্যে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়ার মাত্র ৬টি অভিযোগ থানায় দায়ের হয়েছে বলে এনসিআরবি’র রিপোর্ট জানাচ্ছে।
২০২৩-এ রাজ্যে মোট অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ১,৮০,২৭২টি। তার মধ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ৩৪,৬৯১টি। অর্থাৎ মোট অপরাধের প্রায় ১৯.২৫ শতাংশ হয়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত মহিলা ৩৫,৮৯৮ জন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১১০টি। ধর্ষিতা হয়েছেন ১১১২ জন। ধর্ষিতাদের ৬২শতাংশের বেশি, ৬৯০ জনের বয়স ১৮ থেকে ৩০। রাজ্য পুলিশের তথ্য অনুসারে তাই জানিয়েছে এনসিআরবি। তার মধ্যে ‘গ্যাং রেপ’ বা উপর্যুপরি ধর্ষণের ঘটনা ৭টি। ধর্ষণের ঘটনার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশে নবম। শীর্ষে রাজস্থান। তবে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে বলে পুলিশ যত কেস দায়ের করেছে, পশ্চিমবঙ্গ তাতে দ্বিতীয়। ওই বছর পশ্চিমবঙ্গে ৮২৬ জন মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলায় পশ্চিমবঙ্গ দেশে শীর্ষে। ২০২৩-এ পশ্চিমবঙ্গে ৩৪জন মহিলা অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছেন।

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment