PM AWAS CORRUPTION

মৃত শিশুদের বাড়ি নিয়ে কথা নেই ভাইপো থেকে বিজেপি সাংসদের

রাজ্য

Pm awas west bengal tmc mamata banerjee corruption bengali news

মধুসূদন চ্যাটার্জি: বিষ্ণুপুর

 ভাইপো সাংসদের প্রতিশ্রুতি বিশ বাঁও জলে, তিন মাস পেরনোর পরেও দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত শিশুদের পরিবারের বাড়ির অবস্থা তথৈবচ। 
তিন মাস পেরিয়ে গেল, এখনও পর্যন্ত বিষ্ণুপুরের বরামারা গ্রামের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত তিন শিশুর পরিবারের কারোরই শুধু বাড়ি না হওয়াই নয়, ৩ অক্টোবরের পর জেলা, মহকুমা, ব্লক প্রশাসন বা পঞ্চায়েতের কোনও স্তর থেকেই কেউ এই পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অথচ দুর্ঘটনার পরেই প্রশাসন ও তৃণমূলের সাংসদ থেকে শুরু করে বিধায়ক, জেলা সভাধিপতি সহ দলের নেতারা মেলা বসিয়ে দিয়েছিল ছোট্ট বরামারা গ্রামে। 
দমদম বিমানবন্দরে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিও এঁদের সঙ্গে কথা বলে মিডিয়ার সামনে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। বাদ যায়নি বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁও। তিনিও বাড়ি তৈরি ও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার কথা শুনিয়ে যান। সবাই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছিল, যা ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সেদিন ভালো ভালো কথা শুনেছিলেন মৃত রোহন, অঙ্কুশ, ও নিশা সর্দারের পরিবারের লোকজন। প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ তালিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে জানানো হয়েছিল, দিল্লি থেকে এরা ফিরে আসার পরই বাড়ি তৈরি শুরু হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের লোকজনকে কাজ দেওয়া হবে। না, এরপর থেকে কেউ আর বরামারা গ্রামে এই তিন মৃত শিশুর পরিবারের উঠোনে পা রাখেনি। এলাকার সিপিআই(এম) কর্মীরা এখনও এঁদের কাছে প্রায়ই যান। যতটা পারেন, সহযোগিতা করেন। এখন এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারই আক্ষরিক অর্থেই অত্যন্ত যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কোথাও কোনও কাজ নেই। বৃহস্পতিবার সেই দৃশ্য ধরা পড়ল।
ঘটনা হলো গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বরামারা গ্রামে ভক্ত সর্দারের বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে রোহন, অঙ্কুশ ও নিশা সর্দার নামে তিন শিশু মারা যায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় ভক্ত সর্দারের বাড়ির নাম ছিল, কিন্তু মাস, বছর পেরিয়ে যায় বাড়ি আর হয় না। এই গ্রামের ৩৫টি পরিবার বাস করেন। সকলেই তফসিলি জাতিভুক্ত। এই গ্রামে এদের একজনেরও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি হয়নি। বারে বারে পঞ্চায়েতকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভক্ত সর্দারের বাড়ির দেওয়াল জীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। ঐদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। ৩-৫ বছরের ঐ তিন শিশু একটু বৃষ্টি থামতে খেলা করতে গিয়েছিল। সেই খেলার সময়ই এদের গায়ে দেওয়াল চাপা পড়ে। এলাকার মানুষ ও সিপিআই(এম) কর্মীরা এই তিনজনকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। 
এই খবর মিডিয়াতে রাষ্ট্র হওয়ার পরই এলাকার তৃণমূলের নেতারা আসরে নামে। গ্রামটিকে ঘিরে রাখে। বাইরের কাউকেই মৃত তিন শিশুর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে আসেন বাঁকুড়ার জেলা শাসক সিয়াদ এন, তৎকালীন মহকুমা শাসক, বিষ্ণুপুরের বিডিও, বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অনুসূয়া রায় সহ একাধিক আধিকারিক ও নির্বাচিত সদস্য। পরদিন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন ও অন্যান্য তৃণমূলের নেতারা এসে সরাসরি এই মৃত পরিবারের মানুষজনদের জানান, কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে। তাই ঘর হয়নি। এরজন্য ৩অক্টোবর তৃণমূল দিল্লিতে ধর্নায় বসবে। এদেরও সেখানে যেতে হবে। যাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা মারা পড়ল, সেই শোকের সময় স্রেফ রাজনীতির জন্য এঁদের একপ্রকার জোর করে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, প্রতিটি পরিবারকে তিন লক্ষ করে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি খুব শীঘ্রই এঁদের বাড়ি তৈরি করা হবে। দেওয়া হবে কাজও।
বৃহস্পতিবার বরামারা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল রোহন সর্দারের দাদু তীর্থ সর্দার লম্বা ঘাসের ঝাঁটা তৈরি করছেন। এগুলো বিক্রি করেই সংসার চালান। রোহনের বাবা জয়দেব সর্দার স্থানীয় একটি হিমঘরে কাজ করেন। এঁদেরও বাড়ির তালিকায় নাম থাকা সত্যেন ও বাড়ি পাননি। এদিন জয়দেব সর্দার জানান, বিমানে করে তৃণমূল আমাদের দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে গিয়ে চুপচাপ ধর্নায় বসেছিলাম। একই কথা জানান, অঙ্কুশ সর্দারের বাবা চণ্ডী সর্দার, ও নিশার মা পূজা সর্দার। ফিরে আসার পর কেউ আর তাঁদের খোঁজ নেয়নি। এদিন জয়দেব, চণ্ডী, নিশার বাবা প্রশান্ত সর্দার জানান, তাঁরা স্থানীয় হিমঘরে কাজ করেন। প্রতিদিন কাজ মেলে না। অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন চলে। এখনও ছেলেমেয়ের টাটকা লাশের দৃশ্য এঁদের সামনে ভেসে উঠে। আদৌও তাঁরা বাড়ি পাবেন কিনা জানেন না। 
গ্রামবাসীরা এদিন জানান, শোক পালন করার সময়টুকুও তৃণমূল এঁদের দেয়নি। কার্যত জোর করে দিল্লি নিয়ে যায়। তারপর ঘরও হলো না, কেউ দেখাও করতে আসে না। এদিন ফের এলাকায় গিয়েছিলেন সিপিআই(এম) কর্মী সুকান্ত সাউ, অভিজিৎ নায়েকরা। প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এদিন ফের কান্না ভেজায় গলায় যন্ত্রণার কথাগুলো শোনালেন মৃত তিন শিশুর পরিবারের সদস্যরা। 

Comments :0

Login to leave a comment