POTATO FARMER'S DISTRESS

রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ কৃষকদের

রাজ্য জেলা

Potato farmers farmers distress aiks bengali news

আলুচাষিরা আর দেনার দায়ে আত্মহত্যার শিকার হতে চায় না। রাজ্য সরকারকে কৃষকদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা কুইন্টাল দরে আলু কিনতে হবে। শনিবার রাজ্যের আলুচাষ প্রধান এলাকায় কমপক্ষে ৮০টি জায়গায় রাজ্য ও জাতীয় সড়কে আলু ফেলে অবরোধ করেন আলুচাষিরা। অধিকাংশ এলাকায় অবরুদ্ধ মানুষজন কৃষকদের দাবিকে সমর্থন জানান। ফলে অবরোধ চলাকালীন বহু এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের সাথে আলোচনার বসার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। 

ইতিমধ্যেই গত দু’দিন ধরে উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে আলুচাষিদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমসিম খেয়ে পুলিশ লাঠি, টিয়ার গ্যাস চালিয়েছে। বহু কৃষক আহত হয়েছেন। যে ভাষা বোঝে শাসক, সেই ঝাঁঝালো ভাষাতেই এদিন কৃষকরা রাস্তায় বস্তা বস্তা আলু ফেলে অবরোধে নামেন। 


পুলিশ, প্রশাসন আগেই বিরাট বাহিনী মোতায়েন করে শক্তিগড়ের প্যামড়াতে যাতে কোনভাবেই কৃষকরা তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে না পারে। সময় তখন বেলা আড়াইটে, পুলিশের একাংশ চেষ্টা করে কৃষকদের এই কর্মসূচি বানচাল করতে। কৃষকদের রাস্তায় উঠতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু দলে দলে আলুচাষি লাল ঝান্ডা নিয়ে ২নম্বর জাতীয় সড়কে নেমে পড়লে পুলিশের আটকানোর ক্ষমতা ছিল না। রাস্তা অবরোধ হলো, প্রতিবাদী কৃষকরা মমতার কুশপুতুল দাহ করেলেন, রাস্তায় টায়ার পুড়িয়েছেন। বস্তা বস্তা আলু রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।

 দুপুর যখন সওয়া ৩টে, সেই সময় জাতীয় সড়কের দু’পাশের রাস্তায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যায় হাজার হাজার গাড়ি। সেখানে রাস্তায় শুয়ে পড়ে কৃষকরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। গোটা জাতীয় সড়কই লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে কৃষকদের দখলে চলে যায়। পুলিশ নানাভাবে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রতিবাদী কৃষকরা তাতে পা দেননি। কৃষকদের আন্দোলনের চাপে সোমবার কৃষকদের প্রতিনিধিদের সাথে বসে আলোচনা করে আলু কেনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর শক্তিগড়ের কাছে প্যামড়াতে জাতীয় সড়ক অবরোধ তুলে নেন কৃষকরা।


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চন্দ্রকোনা রোড ও ঘাটাল, জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের দুইটি স্থানে আলুচাষিদের তুমুল বিক্ষোভ সহ আলু ঢেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অবস্থান চলে দীর্ঘক্ষণ। হুগলী জেলার ১৭টি ব্লক এলাকায় ১৭টি জায়গায় অবরোধ হয়। এই জেলার আলুর বড় আড়ত সিঙ্গুরের রতনপুর আলুর মোড়। এখানে রাস্তায় আলু ফেলে পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ দেখানো হয়। 

অবস্থান বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ হয় হরিপালের বাসুদেবপুর মোড়, গোঘাটের কামারপুকুর চটি, তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা মোড়, পোলবার আলিনগর মোড়, ধনিয়াখালি মদনমোহনতলা, মগরার নাকশা মোড়, আরামবাগের কাবলে, জাঙ্গিপাড়ার বিবেক কোল্ড স্টোরেজের সামনে, চণ্ডীতলা ১ ব্লকের শিয়াখালা চৌমাথা। হাওড়া জেলা কৃষকসভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন হাওড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে আমতার শেহগোড়ী মোড়ে বিক্ষোভ অবস্থান ও অবরোধ হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা ব্লকের বাহাদুরপুর ও বেলডাঙা ২ ব্লকের শক্তিপুরে রাস্তায় আলু ফেলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান আলুচাষিরা। সারা ভারত কৃষকসভা কৃষ্ণনগর ১ ব্লক কমিটির উদ্যোগে এদিন বিষ্ণুপুর হাসপাতাল বাজারে পথসভা ও কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়। এদিন বীরভূম জেলার বোলপুরে কাশীপুর বাইপাস মোড়, দুবরাজপুরের সাতকেন্দুরী মোড়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। 

এছাড়াও এদিন জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে জেলার মল্লারপুরের বাহিনা মোড়, নলহাটির চামটি বাগান, সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা, সাঁইথিয়া, আমোদপুর, লোহাপুর, পাইকর। মুরারই ১ ব্লকের বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। রানিগঞ্জের বল্লভপুর সবজি বাজারে শনিবার সকালে আলুচাষিদের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায়। এদিন বাঁকুড়া জেলার একাধিক প্রান্তে মিছিল ও অবরোধ হয়। জয়পুর, কোতুলপুরে বড় আকারের জমায়েত হয়। কৃষক ছাড়াও খেতমজুররাও এই জমায়েতে হাজির হয়েছিলেন। দু’জায়গাতেই  রাস্তা অবরোধ করেন আলু চাষীরা। এর পাশাপাশি বেলিয়াতোড়, পিড়লগাড়িমোড়, ইন্দপুরেও মিছিল অবরোধ হয়।

এদিনও উত্তরবঙ্গের কৃষকরা বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। আলিপুরদুয়ার জেলায় চেকো মোরে, শালকুমার মোড়, ফালাকাটার জটেশ্বরের খাড়াকদম এবং মাদারিহাট-বীরপাড়া রোডে রাঙ্গালীবাজনায়। এই চারটি জায়গায় অবরোধ কর্মসূচি হয়। কোচবিহার শহরের দুটি উপকণ্ঠ কোচবিহার ২নং ব্লকের খাগড়াবাড়ি এবং কোচবিহার ১নং ব্লকের ঘুঘুমারিতে ১ঘণ্টা পথ অবরোধে শামিল হন। 

হিমঘরে আলুর বন্ড রাখা নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলার বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গা কোল্ড স্টোরেজে অশান্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে কোল্ড স্টোরেজের সামনের জলপাইগুড়ি চাউলহাটি হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করেন আলুচাষিরা। ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও পথ অবরোধ হয়। 

এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর সহ আটটি ব্লকে আলুর দাম না পেয়ে রাজ্য ও জাতীয় সড়কে আলু ফেলে দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। এদিন মালদা জেলার হবিবপুরের কেন্দপুকুর, গাজোলের আলমপুর, রতুয়া ২ ব্লকের শ্রীপুরে বিক্ষোভ অবস্থানের সাথে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ হয়। এদিন সকাল থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে আলুচাষিদের অবরোধ ও বিক্ষোভে ধুন্ধুমারকাণ্ড হয় চোপড়ার দাড়িভিটে। চোপড়া, ইসলামপুর, ইটাহার, রায়গঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ হয়। সারা ভারত কৃষকসভা খড়িবাড়ি ব্লক কমিটির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

আলুচাষিদের ন্যূনতম দাবি কার্যকরী করতে সরকারকে সচেতন করার লক্ষ্য নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের আলুচাষি কনভেনশন করে রাজ্যের সর্বত্র স্বল্পকালীন পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভা। 

এদিন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিপ্লব মজুমদার ও সম্পাদক অমল হালদার রাজ্যের সংগ্রামরত আলুচাষিদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে প্রয়োজনে বৃহত্তর সংগ্রামের জন্য আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকতে আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ রাজ্য প্রশাসনকে আলুচাষিদের প্রতি সংবেদনশীল ভূমিকা পালন করে ১ হাজার টাকা কুইন্টাল দরে কৃষকের আলু কিনে আলুচাষিদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার আবেদন জানান। আলুচাষি ছাড়াও এরাজ্যের অপর অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ সহ অন্যান্য সবজির দাম বর্তমানে তলানিতে। রাজ্য সরকারকে এবিষয়েও সচেতন দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হতে অনুরোধ করা হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, দায়দায়িত্বহীন কেন্দ্রীয় সরকার আলুর সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য ঘোষণা করছে না, পুষ্টিগুণে চাল-গম-জোয়ার-বাজরার থেকে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও আলু নাকি খাদ্য নয়, কেবল সবজি।

 

Comments :0

Login to leave a comment