Fertilizer

সতেরোর বস্তা মিলছে ২২০০ টাকায়, সারের আকালে নাজেহাল আলুচাষি

জেলা

 সকাল থেকে সারের জন্য কৃষি সমবায়ে ভিড় করছেন কৃষকরা। কিন্তু কোনও সমবায় থেকে মিলছে না আলুচাষের সার। 
গত সপ্তাহ খানেক ধরে হুগলী জেলার এক কৃষি সমবায়ে সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু সমবায়ে নেই কৃষকের চাহিদার সার। ‘‘সারের কিছু ব্যবস্থা হবে? জানতে রোজ আসছেন চাষিরা। আমরা কিছুই করতে পারছি না। অস্থির অবস্থা।’’ বলছিলেন সমবায়ের এক কর্তা। মাত্রাছাড়া দামের প্রতিবাদে বুধবারই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে বিক্ষোভ, ডেপুটেশনের কর্মসূচি নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভা। 
সারের জোগান নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বেশ কয়েকবার অনলাইন বৈঠক করেছেন রাজ্যের কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা। কৃষি দপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, চলতি আলুচাষের মরশুমে ইফকো কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ সার আসার কথা তা আসেনি। আদৌ সেই সার শেষ পর্যন্ত আসবে কিনা তা নিয়েই সন্দিহান কৃষিকর্তারাও। দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার শুধু একটি ব্লকেই আলুচাষের সময় কো-অপারেটিভ সংস্থায় ৬০০ থেকে ৭০০টন সার লাগে। সেই সারও পাওয়া নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে আধিকারিকদের। সমবায় প্রতিষ্ঠানে সারের সঙ্কটে বাড়ছে কালোবাজারির দাপট। 
আলুচাষের মরশুমে সারের তুমুল কালোবাজারির মধ্যে পড়ে চাষ নিয়েই আতঙ্কিত কৃষকরা। সঙ্কট যখন শিয়রে, তখন নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন সারের কারখানা করবেন রাজ্যে। গত সোমবার মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ‘‘সারের কারখানা দরকার হলে রাজ্য থেকে তৈরি করুন। আমরা বিনামূল্যে জমি দেব। শিল্প পার্কে অনেক জমি আছে। ফ্রানচাইজি তৈরি করে সার কারখানা গড়ুন।’’ আলু মাঠে বসানোর জন্য কৃষক সকাল থেকে সারের জন্য দৌড়ে বেড়াচ্ছে, নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী সার কারখানা গড়ার কথা বলছেন!
সমবায় প্রতিষ্ঠানে সার থাকলে তাও সেখান থেকে ন্যায্য মূল্যে সার কেনার সুযোগ থাকে আলুচাষির। কিন্তু সমবায় মুখ ফিরিয়ে রাখলে কৃষক যেতে বাধ্য হচ্ছেন খোলা বাজারে। কিন্তু সেখানে শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে আলু চাষের জন্য কৃষকের চাহিদার সার নেই। ধরাধরি করলে মিলবে সার। তবে দিতে হবে বাড়তি দাম। সেই দাম দিলেও পাওয়া যাবে সার। 
সেই দাম কত? ‘‘ ১০:২৬:২৬সারের এক বস্তার (৫০কেজি) প্রিন্টেড দাম ১৭০০টাকা। সেই সারই এখন কিনতে হচ্ছে ২২০০টাকায়।’’ বলছেন ভুক্তভুগী কৃষক। রাজ্যজুড়ে আলুচাষের মরশুমে কার্যত কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি করে বর্ধিত দামে কৃষককে সার কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ‘‘সাদা চোখে কোথাও গেলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দাম দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সার।’’ বলছেন কৃষক। এক বস্তা সারে ৪৯০টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে। 
বর্ষার ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। একইসঙ্গে চলছে মাঠে আলু বসানোর কাজ। বাংলার মাঠে এখন কৃষকদের তুমুল ব্যস্ততা। কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তুঙ্গে থাকে সারের চাহিদা। বিশেষ করে নভেম্বর মাসজুড়ে আলু বসানোর কাজ থাকে। এখনই সারের সঙ্কট আছে।’’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এখন গ্রামের পথে টোটো গাড়িতে মাইক প্রচারে নেমেছে কৃষি দপ্তর। মাইক থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে,‘‘ সব কৃষক ও সার বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ সচেতনতা, সমস্ত সারের বিক্রয় ই-পজ মেশিনে করা বাধ্যতামূলক। সমস্ত সারের দাম এমআরপি’র মধ্যে নেওয়া জরুরি।’’ কিন্তু সরকারি ঘোষণাই সার। সার মিলছে না তারপরেও।
সারের সঙ্কট এড়াতে পারেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। গত সোমবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত বলতে হয়েছে, ‘‘কেন্দ্র সার পাঠাচ্ছে না। সারের দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। মানুষ খাবে কী?’’ কিন্তু রাজ্যে কীভাবে সারের জোগানকে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে সরকার চুপ।
আসলে গোটা দেশের কোন রাজ্যে, এমনকি কোন ব্লকে সারের মজুতের পরিমাণ কত তা কেন্দ্রীয় সার মন্ত্রক জানতে পারে। তার কারণ, সার কোম্পানি থেকে ডিস্ট্রিবিউটার, হোলসেলার হয়ে সার যখন খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায় তখনই অনলাইন সিস্টেমে তা যুক্ত করে দিতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সার বিক্রি করার সময়ও আধার কার্ড লিঙ্ক করে হাতের ছাপ দিয়ে কৃষককে সার বিক্রি করতে হবে। ভবিষ্যতে কৃষককে পুরো দাম দিয়ে সার কিনতে হবে। কৃষকের কেনা সারের পরিমাণ অনুযায়ী ভরতুকির টাকা তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যেমনভাবে এখন রান্নার গ্যাসের ভরতুকির টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আগামীদিনে সেই পথেই কৃষককে নিয়ে যেতে চাইছে মোদী সরকার। আসলে রান্নার গ্যাসের মতোই ভরতুকি কমিয়ে দেওয়ার এই পরিকল্পনা নিয়ে এগচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। 
রাজ্য সরকার মোদী সরকারের সেই পথের কাছে নতি স্বীকার করেই ই-পজ মেশিনের মাধ্যমে ১০০শতাংশ সার ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু এখনও এরাজ্যের গ্রামে সেই ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা যায়নি। খাতায় লিখে কৃষকরা সার কিনে নিচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার তার ‘ফার্টিলাইজার মনিটরিং সিস্টেম’ মারফত রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে সারের কোনও অভাব নেই। রাজ্যের এক কৃষি আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘কো-অপারেটিভ সেক্টরে ১০;২৬:২৬ সারের ঘাটতি আছে। ইফকো থেকে সার রাজ্যে না আসার ফলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment